রাশিয়া শস্য রপ্তানি চুক্তি স্থগিত করায় গত রোববার থেকে ইউক্রেনের সমুদ্রসীমা থেকে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে আরও চরম খাদ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে বিশ্ব। তবে ইউক্রেন- রাশিয়ার খাদ্যশস্য চুক্তি অব্যাহত রাখতে তুরস্ক বদ্ধপরিকর। সোমবার (৩১ অক্টোবর) ইস্তাম্বুলে এক অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান।
Advertisement
কৃষ্ণসাগরের ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ নৌবহরে ড্রোন হামলার পর ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানির চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। চুক্তির ফলে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রপ্তানি ফের চালু করেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। গত ২২ জুলাই ইস্তাম্বুলে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সই হয় বহুল প্রত্যাশিত সেই চুক্তি।
তবে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, মস্কো চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া সত্ত্বেও এ উদ্যোগ টিকিয়ে রাখতে আঙ্কারা বদ্ধপরিকর। তিনি আরও বলেন, ‘যদিও রাশিয়া এ বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত, কেননা তাদের জন্য একই সুবিধা দেওয়া হয় না। তবে আমরা মানবতার কল্যাণে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো’।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকর সোমবার রুশ প্রতিপক্ষ সের্গেই শোইগুকে বলেছেন যে মস্কোর উচিত তার অংশগ্রহণ স্থগিত করার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করা। তাদের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয় বিষয়টি নিয়ে। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শোইগুকে বলেন যে শস্য চুক্তিটি চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটিকে ইউক্রেনের সংঘাত থেকে আলাদাভাবে দেখা উচিত।
Advertisement
এই কর্মসূচির সমন্বয়কারী জাতিসংঘের কর্মকর্তা আমির আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘বেসামরিক পণ্যবাহী জাহাজ কখনই সামরিক লক্ষ্য বা জিম্মি হতে পারে না। খাদ্যশস্য অবশ্যই রপ্তানি হবে’।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ক্রিমিয়া উপকূলে হামলার পর এ চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে যে, ইউক্রেন শনিবার ভোররাতে ১৬ টি ড্রোন দিয়ে সংযুক্ত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেভাস্তোপোল বন্দর ব্যবহার করে তাদের নৌবহরে হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‘বিশেষজ্ঞরা’ ‘সন্ত্রাসী’ হামলার সমন্বয় করতে সহায়তা করে বলেও অভিযোগ রাশিয়ার। তবে লন্ডন মস্কোর দাবিকে অকপটে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই চুক্তির আওতায় এরইমধ্যে ৯০ লাখ টনেরও বেশি ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানি করার অনুমোদন হয় এবং আগামী ১৯ নভেম্বর চুক্তিটি নবায়ন করার কথা আছে।
ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কার্যত বন্ধ থাকে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো। শুধু ওডেসা বন্দরেই আটকা পড়ে ২৫ মিলিয়ন টন শস্য। চুক্তি সইয়ের ফলে রাশিয়ার খাদ্যপণ্যসহ সারও রপ্তানি শুরু হয় এই সমুদ্রপথে।
Advertisement
বিশ্বে খাদ্যের ১০ ভাগের এক ভাগ সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। বৈশ্বিক গম রপ্তানির ৩০ শতাংশের পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে তারা। কমপক্ষে ২৬টি দেশ তাদের অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যশস্যের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল।
সূত্র: আল-জাজিরা
এসএনআর/জেআইএম