রাজধানীতে যেতে প্রধান সড়ক হিসেবে এক সময় ব্যবহার হতো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়ক। নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দাদেরও ঢাকা যাতায়াতের জন্য অন্যতম মাধ্যম ছিল সড়কটি। কিন্তু বর্তমানে নানা অব্যবস্থাপনায় এ সড়ক যেন যান চলাচলের যোগ্যতা হারাতে যাচ্ছে। দিন দিন সরু হচ্ছে রাস্তা। একই সঙ্গে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। পাশাপাশি অসহনীয় যানজট তো আছেই। ১৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
Advertisement
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন মোড়ে বাস, টেম্পু, সিএনজি-ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড বানিয়ে যানবাহনের আধিক্যে সড়কটি সরু করে ফেলা হয়েছে। এতে যাত্রীদের প্রতিদিনই অসহনীয় যানজটে ভুগতে হয়। পুরো সড়কজুড়েই আছে অসংখ্য খানা খন্দক। রাস্তার পাশেই আছে ময়লার ভাগাড়। অথচ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই কয়েক লাখ শ্রমিকের যাতায়াত করতে হয়। পাশাপাশি ফতুল্লা শিল্পাঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও পেয়ে থাকে সরকার। কিন্তু এরপরও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে গত দুই যুগেও লাগেনি প্রশস্ততার ছোঁয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটি সংলগ্ন শাসনগাঁওয়ের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় আছে অন্তত সহস্রাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। যাতে অন্তত ৩ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। শুধুমাত্র বিসিক শিল্পনগরী থেকেই প্রতি বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।
ফতুল্লার মুন্সিখোলা এলাকায় রড সিমেন্টের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র, আলীগঞ্জ ও দাপায় পাথর ও বালু ব্যবসা, ফতুল্লার পঞ্চবটি, নরসিংপুর, বক্তাবলী এলাকায় শতাধিক ইটভাটা, বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক রি-রোলিং মিল, পঞ্চবটিতে মেঘনা ও যমুনা পেট্রোলিয়াম তেলের ডিপো অবস্থিত। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, তেলের ডিপোর ট্যাংকলরিসহ কয়েক হাজার যানবাহন প্রতিনিয়ত চলাচল করছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়ক দিয়ে।
Advertisement
মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকায় গড়ে ওঠা শাহ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, ক্রাউন সিমেন্টসহ বেশ কিছু কারখানার কয়েকশ কাভার্ডভ্যানও প্রতিনিয়ত সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করছে। এছাড়া গণপরিবহন তো আছেই।
ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকা থেকে মুক্তারপুর হয়ে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার একটি রুটও আছে। তবে নব্বইয়ের দশকের দিকে পোস্তগোলা এলাকায় চীনের অর্থায়নে ব্রিজ নির্মাণের পর মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ হয়। ১৯৯৫ সালের দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দ্রুত যাতায়াতে রুটটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মূলত এরপর থেকেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়কটিতে আর প্রশস্ততার ছোঁয়া লাগেনি।
ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, শহরের চাষাঢ়া থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ (পাগলা) পুরাতন সড়কের পোস্তগোলা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। সড়কটির প্রশস্ততা মাত্র ২৪ ফুট। কিছু কিছু স্থানে সামান্য বেশি আছে। এদিকে যানবাহনের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চললেও দুই দশকে সড়কটির প্রশস্ততা আর বাড়েনি। বরং সড়কটির বিভিন্ন মোড়ে বাস, টেম্পু, সিএনজি, অটোরিকশার স্ট্যান্ড বানিয়ে সড়কটি সরু করে ফেলা হয়েছে।
এছাড়া শহরের চাষাঢ়ায় জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর সামনে, মাসদাইর কবরস্থানের সামনে, পঞ্চবটি, ফতুল্লা বাজার, পাগলা, মুন্সিখোলা, শ্যামপুর, পোস্তগোলাতে প্রায়ই যানজটে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
Advertisement
সড়কটি প্রশস্ত করতে সিটি করপোরেশনের অনুরোধ
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কটিকে চারলেনে প্রশস্ত করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ১২ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব জহিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, চাষাঢ়া-পঞ্চবটি রাস্তাটির গড় প্রস্থ ১৫০ ফুট হলেও অবৈধ দখলদার ও যত্রতত্র গাড়ি স্ট্যান্ড করে রাখায় গড়ে ৫০ ফুট রাস্তা বর্তমানে সচল আছে। নারায়ণগঞ্জকে একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড় তুলতে এবং যানবাহনসহ জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি রাস্তা থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে উভয় পাশে ড্রেন, ফুটপাত নির্মাণ ও সবুজায়নের পাশাপাশি রাস্তাটি চার লেনে উন্নীত করণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জকে একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে প্রতিদিনই যানবাহনের অনেক চাপ থাকে। পুরাতন ও গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি প্রশস্ত করা গেলে শহরের ভেতরের যানজটও অনেক কমবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি হাজী নুরু উদ্দিন আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, সড়কটিকে কেন্দ্র করে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এ সড়কটিকে সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ের অভাবে সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না। বর্তমানে সড়কটি প্রশস্ততাও কমে গেছে। এখানে প্রভাবশালীরা দখল করে রাস্তাটাকে সরু করে ফেলেছেন। তাদেরকে কেউ কিছু বলতে পারে না। আমার দাবি থাকবে দ্রুত যেন সড়কটি সংস্কার করা হয়।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ডা. আল-ওয়াজেদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পঞ্চবটিতে ফুটওভারের জন্য মানববন্ধন করেছিলাম। রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার যারা দায়িত্ববান তাদের একাধিকবার বলা হয়েছে সংস্কারে জন্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ এ সড়ককে বেহাল অবস্থা থেকে যেন উত্তরণ করে এবং সাধারণ জনগণের যেন দুর্ভোগ লাঘব করে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, এ সড়কটি আসলে আমাদের অধীনে নয়। তবে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র একটি চিঠি দিয়েছেন আমাদের অধীনে দেওয়ার জন্য। চিঠিটা পেয়েছি। আমাদের অধীনে দেওয়া হলে যতটুকু সংস্কারের প্রয়োজন হয় করতে পারবো। পরবর্তীতে আরও ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হলে সেটা আমি পারবো।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. সোহান সরকার জাগো নিউজকে বলেন, সড়কটি এখন অনেক সরু হয়ে গেছে। একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল করে। ফলে যানজট লেগেই থাকে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা রাস্তার দুপাশ দখল করে আছেন তাদের আইন মানা প্রয়োজন।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসজে/জিকেএস