প্রবাস

‘ফ্রিম্যান অব দ্য সিটি অব লন্ডন’ সম্মাননায় ভূষিত হলেন আফসার

চ্যানেল এস টিভির সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস রেডিও এবং ভয়েস অব আমেরিকা রেডিওর সাবেক ব্রডকাস্টার সৈয়দ আফসার উদ্দিন ‘ফ্রিম্যান অব দ্য সিটি অব লন্ডন’ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

Advertisement

ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। সৈয়দ আফসার উদ্দিন ব্রিটেন তথা বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষী প্রথম টিভি সংবাদ পাঠক, যিনি এই সম্মাননা অর্জন করলেন।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সেন্ট্রাল লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী গিল্ডহলের লর্ড চেম্বারলিন চেম্বারে ডেপুটি ক্লার্ক টু দ্য চেম্বারলেইন কোর্ট টিফেইন লি বিয়ান ‘ডিক্লারেশন অব দ্য ফ্রিম্যান’ পড়তে সৈয়দ আফসার উদ্দিনকে আহ্বান জানান। পরে টিফেইন লি বিয়ান আফসার উদ্দিনের পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপস্থিতিতে ‘ফ্রিম্যান অব দ্য সিটি অব লন্ডন’ সম্মাননাটি তার হাতে তুলে দেন।

সম্মাননা লাভের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সৈয়দ আফসার উদ্দিন প্রথমেই মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে এই সম্মাননার জন্য যিনি মনোনয়ন পাঠিয়েছিলেন তাকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে ধন্যবাদ জানান এই সম্মাননা দেয়ার জন্য গঠিত প্যানেল সদস্যদের প্রতি।

Advertisement

তিনি বলেন, এই সম্মাননা প্রাপ্তির ফলে কাজের প্রতি আমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো। আমি মনে করি আমার মতো যারা দীর্ঘদিন ধরে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করছেন এই সম্মাননা তাদের আরও মনোযোগ ও যত্নসহকারে কাজ করতে উৎসাহিত করবে।

এছাড়াও তিনি তার তেত্রিশ বছরের মিডিয়া ক্যারিয়ার ও ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে যে সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তাকে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন– তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তার প্রতি শিক্ষার্থী ও টিভি দর্শকদের ভালোবাসা এবং সহকর্মীদের সহযোগিতার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

কাজ থেকে ছুটি নিয়ে সম্মাননা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য পরিবারের সদস্য, বন্ধু, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি তিনি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই দীর্ঘ পথচলায় পাশে থেকে সবধরণের সহযোগিতা ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য সৈয়দ আফসার উদ্দিন তার স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে এই সম্মাননা উৎসর্গ করেছেন।

সৈয়দ আফসার উদ্দিন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। তিনি ১৯৮৯ সালে একযোগে প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও লন্ডনভিত্তিক বাংলা টিভিতেও সাফল্যের সাথে কাজ করেছেন।

Advertisement

সাংবাদিকতার পাশাপাশি সৈয়দ আফসার উদ্দিন প্রায় ত্রিশ বছর লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজ ও সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। সিনিয়র এক্সামিনার হিসেবে ‘একিউএ’ এক্সাম বোর্ডের সঙ্গে কাজ করছেন ছাব্বিশ বছর ধরে। ইউনিভার্সিটি অব গ্রীনিচ ও ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডনের অধীনে ‘পিজিসিই মেন্টর’ হিসেবে দশ বছর কাজ করেছেন।

তাছাড়া গত তিন দশক ধরে কমিউনিটিতে ভলান্টারি ও চ্যারিটি কাজের সঙ্গেও নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসে শিক্ষা এবং কমিউনিটিতে তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে এমবিই (মেম্বার অব দ্যা মোস্ট এক্সসিলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) উপাধিতে ভূষিত হন।

সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই তার স্ত্রী, দুই পুত্র ও এক কন্যা নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। মা বাবার ছয় সন্তানের মধ্যে সৈয়দ আফসার উদ্দিন তৃতীয়। তার দেশের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার বারৈয়াহাটে চিনকি আস্তানা সংলগ্ন ‘তাকিয়া বাড়ি ’(সৈয়দ বাড়ি)। আর তার শ্বশুর-বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে।

১২৩৭ সাল থেকে ফ্রিম্যান অব দ্য সিটি অব লন্ডন (ফ্রি ম্যানশিপ) সম্মাননা চালু রয়েছে। ব্রিটেনের রাজ পরিবারের এগারোজন সদস্য এই সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, তার মা প্রয়াত প্রথম এলিজাবেথ, বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস, প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানা, প্রিন্স উইলিয়াম প্রমুখ।

এছাড়া ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, মার্গারেট থ্যাচার, সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর হেলমোট কোহল, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু, জাতি সংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্টিভেন হকিংস, নিউ ইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ এই সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

এমআরএম/এএসএম