নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জিন্দা বিলে লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের সমারোহে তৈরি হয়েছে মনোমুগ্ধকর নৈসর্গিক পরিবেশ। চলতি মৌসুমেও দেখা মিলবে লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের। শীতের আগমনী স্নিগ্ধতায় কচুরিপানা ও সবুজ পাতায় বেষ্টিত বিলের জলে ফুটেছে অসংখ্য লাল শাপলা আর পদ্ম। আগষ্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলার জিন্দা বিলে সবুজ পাতার ফাঁকে লাল শাপলা আর পদ্মের সমারোহ প্রকৃতি ও পরিবেশকে করে সৌন্দর্যমণ্ডিত।
Advertisement
ইট, পাথর আর কোলাহলপূর্ণ রাজধানীর কাছেই রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের জিন্দা এলাকায় হাজার বিঘার বিশাল ভূমিতে গড়ে উঠেছে লাল শাপলার বিল। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ। সকালে গিয়ে দুপুরেই সৌন্দর্য উপভোগ করে ফেরা যায়। মদনপুর-গাজীপুর সড়কের উপজেলার দাউদপুর এলাকার পলখান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে পূর্ব দিকে যাওয়ার রাস্তায় কিছুদূর যাওয়ার পরই দেখা যায় লাল শাপলা। জিন্দা মধ্যপাড়া রাস্তার দুপাশে যেদিকে চোখ পড়বে; সেদিকেই লাল শাপলা আর পদ্ম ফুলের মনোরম দৃশ্য মুগ্ধ করবে দর্শনার্থীদের।
দিগন্তজুড়ে ফুটে আছে লাল শাপলা। শাপলার লাবণ্য ছুঁতে জলের সঙ্গে মিতালি দর্শনার্থীদের। শুধু লাল শাপলা আর পদ্মই নয়, এ বিল মুখরিত হয় পাখির কলতানে। এ বিলকে ঘিরে পদ্মা-শাপলা রিসোর্ট নামে দুটি স্পটও গড়ে উঠেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের জিন্দা এলাকার লাউয়াল, আড়িয়ল ও পুরাকুরা বিলের প্রায় হাজার বিঘা জমিতে ফোটে শাপলা ও পদ্ম ফুল। লাল শাপলার পাশাপাশি আছে সাদা ও বেগুনি শাপলা। এ বিলেই আছে পদ্ম ফুলের সমারোহ। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ নিজ হাতে শাপলা তুলতে নৌকা নিয়ে হানা দেন বিলে।
Advertisement
স্থানীয়দের মতে, প্রায় ২০০ একর জমির ওপর প্রাকৃতিকভাবে বিলটি গড়ে উঠেছে। স্থানীয়দের অনেকে জীবিকার জন্যও বছরের একটি বড় সময় বিলের মাছ ও শাপলার ওপর নির্ভরশীল।
পদ্ম-শাপলা রিসোর্টে আছে কাঠের তৈরি বেশ কিছু ছোট্ট নৌকা। এতে ৪-৫ জন দর্শনার্থী বহন করা যায়। এসব নৌকায় ঘণ্টাপ্রতি শাপলা বিল ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভাড়া হিসেবে ৩০০ টাকা দিতে হয়। শাপলা বিলে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সবুজ পাতার ফাঁকে লাল শাপলা ফুল ফুটে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি হয়। সূর্যের আলোয় লাল শাপলার এ ঝলমলে উজ্জ্বলতা দেখলে মন ভরে যায়। লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটক, দর্শনার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন। শাপলা বিলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে খুব ভোরে পৌঁছাতে হবে। রাজধানীর মিরপুর থেকে সপরিবারে শাপলা বিল দেখতে আসা আনিসুর রহমান বলেন, ‘রাজধানীর খুব কাছে এত বিশাল এলাকাজুড়ে শাপলা আর পদ্মবিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিবছরই পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে আসি। ছোট্ট নৌকায় শাপলা বিলে ঘুরে তারা খুব মজা পান।’
জিন্দা এলাকার মাঝি কামাল মিয়া জানান, লাল শাপলা বিলে বর্ষা মৌসুমে নৌকা চালিয়ে তার মতো আরও লোক উপার্জন করে থাকেন। শাপলা ফুল দেখতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী মানুষকে নৌকায় চড়িয়ে পদ্ম-শাপলা বিল ঘুরিয়ে দেখান। এতে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা উপার্জন হয়।
কৃষক জাহের আলী জানান, জিন্দা মধ্যপাড়া বিলে তার কয়েক বিঘা জমি আছে। বিলের শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। ১৫-২০টি লাল শাপলার আঁটি ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হয়। শাপলা বিক্রি করে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা উপার্জন হয় তার। অন্যদিকে শুকনো মৌসুমে ধান চাষ করেন। তার মতো শতাধিক পরিবার এভাবে টিকে আছে।
Advertisement
পদ্মা-শাপলা রিসোর্টের মালিক নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক সময় দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা শাপলা বিল দেখতে এসে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পরতেন। দর্শনার্থীদের ভ্রমণের সুবিধার জন্য ও এলাকাবাসীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পদ্মা-শাপলা রিসোর্ট তৈরি করি। এখন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে সপরিবারে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। প্রায় ৪ মাস ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা থাকে। শুক্র ও শনিবার উপস্থিতি বেশি।’
এসইউ/জিকেএস