স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশ প্রেরণে বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ দেশ। আমাদের নারী শান্তিরক্ষীরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, সংঘাত এবং সংঘর্ষ কমাতে বিশেষ করে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা প্রদানে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে জাতিসংঘে কাজ করছে।
Advertisement
রোববার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ‘ইউনাইটেড নেশনস পুলিশ ডে-২০২২’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ গত ছয় দশকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জাতিসংঘ পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার কারণে স্বাভাবিক অবস্থার উত্তরণ ঘটেছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি অধীনে শান্তি প্রতিষ্ঠাকালে বাংলাদেশের ৩০ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের ৫০০ সদস্য জাতিসংঘ পুলিশ হিসেবে বিভিন্ন মিশনে আন্তরিকতা পেশাদারিত্ব এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা বেড়েছে।
Advertisement
আসাদুজ্জামান খান কামাল আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ থেকে আরও বেশি পুলিশ জাতিসংঘে মোতায়েন করা হলে বিশেষ সম্প্রদায়ের সেবায় তাদের দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, যেহেতু বিশ্ব অপরাধ পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে সেহেতু গাইডেন্স প্রিমোয়ার্ড নিয়মিত নিয়ম করতে হবে এবং তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাবিশ্বে শান্তি ও সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববাসীর সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে ১৯৯৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের বীর সদস্যরা তাদের পেশাদারিত্ব আন্তরিকতা সততা দিয়ে বিশ্ববাসী প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই- বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা নিজেদের আইকনিক শান্তিরক্ষী হিসেবে প্রমাণ করছে।
Advertisement
মিশনের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সংহতি রেখে আমরা আধুনিক সরঞ্জাম, অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের পুলিশ সদস্যদের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই- যোগ করেন আইজিপি।
জাতিসংঘ সদরদপ্তর এবং শান্তিরক্ষা মিশনে মিশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে আমাদের আরও অংশগ্রহণ প্রয়োজন মনে করেন আইজিপি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতিসংঘের পুলিশ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অ্যাডভাইজার কমিশনার জুন টান, জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ইন্টিগ্রেটেড ট্রেনিং সার্ভিসের প্রধান মার্ক পেডারসেন, পুলিশ ডিভিশন ও ইন্টিগ্রেটেড ট্রেনিং সার্ভিসের প্রতিনিধি ও আইএপিটিসি নির্বাহী কমিটির পুলিশ চেয়ার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জিওভানি বারবানো। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, প্রশিক্ষক এবং শান্তিরক্ষা মিশনগামী কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের পুলিশ ডিভিশন ইউএনপোল ডে উদযাপনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইউনাইটেড নেশনস ট্রেনিং আর্কিটেকচার প্রোগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক পুলিশিংয়ের জন্য কৌশলগত গাইডেন্স ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে জাতিসংঘের পুলিশিং কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং প্রমিত পদ্ধতির করার বিষয়ে পুলিশ প্রেরণকারী সদস্যরাষ্ট্র ও পিসিকিপিং প্রশিক্ষকদের অবহিত করে থাকে। এছাড়া পুলিশ সদস্যরা নিজেদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা এবং লজিস্টিকস্ সক্ষমতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ড ও পেরুতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব পিসকিপিং ট্রেনিং সেন্টারসের (আইএপিটিসি) বার্ষিক সম্মেলনের আগের দিন ইউএনপোল ডে আয়োজন করা হয়। এ বছর আইএপিটিসির ২৬তম সম্মেলন ৩১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত গাজীপুর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট) অনুষ্ঠিত হবে।
টিটি/বিএ/এমএস