আমার যখন জ্ঞান ফিরলো, আইসিইউ থেকে বের হলাম- পরিবারের লোকজন আমাকে দেখাচ্ছিল কে কী লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। অনেকে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তারা কে কী বলেছেন সেগুলোও দেখাচ্ছিল। মানুষের এই কথা ও লেখাগুলো আমার ব্যথাটা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল। অনেকের বাবা-মা আমার জন্য দোয়া করেছেন। সবাই আমার জন্য দোয়া করেছেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
Advertisement
শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হওয়া কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি। ভিডিও বার্তার ক্যাপশনে এ অভিনেতা লিখেছেন- ‘অগ্নিপরীক্ষায় পাস, আলহাম্দুলিল্লাহ।’
ভিডিও বার্তায় রনি বলেন, সবার দোয়া এবং ভালোবাসায় আমি অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছি। পুরোপুরি সুস্থই বলা চলে। অল্প একটু জায়গা বাকি আছে, শিগগির সুস্থ হয়ে যাবো। এ দীর্ঘ সময়টুকুতে আমার প্রাপ্তি, আপনারা যে আমাকে এতো ভালোবাসেন সেটি বুকের আর গভীর থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করি। তারপর আমি ধন্যবাদ দিতে চাই ডাক্তারদের। ডাক্তার সামন্ত লাল সেন এবং অন্য ডাক্তাররা কতটা মানবিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সবাই সার্বক্ষণিক যত্ন নিয়েছেন। সব সময় যত্ন নিয়েছেন এবং অনেকেই বলেছেন যে আমি রনি বলেই শুধু এরকম যত্ন নিয়েছেন কি না। এক্ষেত্রে একটি বিষয় আমি সবার সাথে বলতে চাই, আমি যখন এইচডিইউতে ছিলাম তখন আমার মতো ২০ জন আমরা এক রুমে ছিলাম। শুধু আমি নই। এ বিশেষ রোগীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রোগীদের আলাদা জায়গায় রাখা হয় এবং সবার জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়।
গাজীপুর পুলিশের কর্মকর্তাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রনি বলেন, সাবেক ও বর্তমান আইজিপি স্যার দেখতে এসেছেন। এছাড়াও অন্যান্য বিভাগের যেসব ডাক্তাররা ছিলেন তারাও দেখতে এসেছেন, আমার খোঁজ নিতে এসেছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, অনেকেই দেশের বাইরে থেকেও বলেছে যে দেশের বাইরে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে আমাদের জানিও। বাইরে তোমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাই। গাজীপুর পুলিশের কর্মকর্তারা দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু আমি বলেছি দেশেই আমার চিকিৎসা হবে।
>>>ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে
হাসপাতালে দেখতে আসা মানুষের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে রনি বলেন, অনেকেই আমাকে দেখতে এসেছেন। অনেকে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। কারণ, এখানে প্রবেশ করা নিষেধ ছিল। তাই যারা এসে ফিরে গেছেন তাদের প্রতি আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আসলে একটা প্রক্রিয়া ছিল।
কলকাতার জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘মিরাক্কেল’ এর সবার উদ্দেশে রনি বলেন, মিরাক্কেল পরিবারের সবাই আমার খোঁজ নিয়েছেন। আমি সবার প্রতি কী বলে যে ভালোবাসা প্রকাশ করবো...। কারণ, এতোটা দিন হয়ে গেছে মিরাক্কেল থেকে আসা। আমি সবার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
Advertisement
নিজের হাতের অবস্থা জানিয়ে এই কৌতুক অভিনেতা বলেন, আমি অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছি। এখন শুধু হাতটুকু বাকি আছে। খুব শিগগির খুলে দেওয়া হবে। সবার প্রতি ভালোবাসা। যারা দূর থেকে দোয়া করেছেন, কোনো একদিন হয়তো দেখা হয়ে যেতে পারে। আমার বুকের ভেতরটা আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। সবাই ভালো থাকবেন। শিগগির কাজে ফিরবো এবং আপনাদের আবারও হাসিখুশি রাখতে কাজ করে যাবো।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে জেলা পুলিশ লাইনস মাঠে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান ও নাগরিক সম্মেলনে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে আবু হেনা রনিসহ ৫ জন দগ্ধ হন। দগ্ধ অন্যরা হলেন, মোশাররফ হোসেন, জিল্লুর রহমান, ইমরান হোসেন ও রুবেল হোসেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অনুষ্ঠান শুরুর আগে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিদের উদ্বোধনী মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রধান অতিথির হাতে বেশ কিছু বেলুন দেওয়া হয় উড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বারবার চেষ্টা করলেও বেলুনগুলো উড়ছিল না। পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেলুনগুলো মঞ্চের পেছনে নিয়ে যান। শুধু পায়রা উড়িয়ে স্বরাষ্ট্রামন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চে চলে যান।
অতিথিরা মূল মঞ্চে চলে যাওয়ার কিছু সময় পর কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেলুন বিক্রেতাকে বকাঝকা করেন। এতে বেলুন বিক্রেতা নিজেই বেলুনে আগুন লাগিয়ে ওড়ানোর চেষ্টার করেন। এ সময় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশে বসে থাকা কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনিসহ ৫ জন দগ্ধ হন।
এদিকে ওই ঘটনা তদন্তে জিএমপির ডিসি (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমানকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি।
কমিটিতে জিএমপির এডিসি (উত্তর) রেজনোয়ান আহমেদ, এসি (প্রসিকিউশন) ফাহিম আশজাদ ও মেট্রো সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে সদস্য করা হয়েছে।
আরএসএম/এমআই/এমএমএফ/এমকেআর