আইন-আদালত

‘অ্যাসিড সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ড না দিলে বিচারের নামে তামাশা হবে’

অ্যাসিড সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডাদেশ না দিলে তা বিচারের নামে তামাশা হবে বলে মত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্ত্রীকে অ্যাসিড নিক্ষেপের দায়ে স্বামী আকবর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহালের রায়ে এমন মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

অ্যাসিড সন্ত্রাস নিয়ে মামলার রায়ে সর্বোচ্চ আদালতের ১০ পৃষ্ঠার রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তার পরিবার সারাজীবন যে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির মধ্য দিয়ে যায় তা টাকা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। আপিল বিভাগ আশা করছে, এ ধরনের সাজায় অ্যাসিড ছোড়ার মতো গুরুতর অপরাধ কমবে।

একজন তরুণীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ শুধু অমানবিকই নয়, এটা বর্বর ও ঘৃণ্য অপরাধ। কোনো সভ্য সমাজ এ ধরনের অপরাধ মেনে নিতে পারে না। এ মামলায় ১৮ বছরের একজন তরুণীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। এটা ভয়ংকর, হত্যার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

অ্যাসিড সন্ত্রাসের কারণে আয়শা সিদ্দিকা নীলার মুখমণ্ডল ও শরীরের বিভিন্ন অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শরীরের এ ক্ষত তাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এ ক্ষত তাকে প্রতিনিয়ত মানসিক যন্ত্রণা দিচ্ছে। যখন একজন নারী অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হন তখন সে অপরাধ সমাজের বৃহত্তর অংশ কেন, ভিকটিমের বাবা-মা-বোন-ভাই কেউ মেনে নিতে পারে না।

Advertisement

এসব কারণে আকবর আলী ওরফে জেলহক মণ্ডলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হলো। যদি আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে তার আপিল গ্রহণ করা হয়, তাহলে তা বিচারের নামে তামাশা হবে।

এর আগে ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে গৃহবধূকে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের মো. আকবর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আপিল শুনানি শেষে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ভার্চুয়াল আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের দিন আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ফরিদ আহমেদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে।

সৌদি আরব থেকে এসে ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আকবর আলীর সঙ্গে ভিকটিমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর আকবর আলী ফের সৌদি আরব চলে যান। এর কয়েক মাস পর দেশে ফিরে স্ত্রীকে সৌদি আরব নিয়ে যেতে চাইলে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ হয়।

Advertisement

এ ঘটনার জেরে ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে স্ত্রীর গায়ে আকবর আলী অ্যাসিড ঢেলে দেয়। এরপর আহত গৃহবধূকে উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি ভিকটিমের বাবা একই উপজেলার বড় বাসুরিয়া গ্রামের মো. আব্দুল আউয়াল শেখ শাহজাদপুর থানায় মামলা করেন।

এ মামলায় ২০০৯ সালে আত্মসমর্পণ করেন আকবর আলী। এরপর সিরাজগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত বিচার শেষে ২০০৯ সালের ২৩ আগস্ট অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের ৫ (ক) ধারায় আকবর আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

বিচারিক আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও কারাবন্দি আসামির আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর আকবর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে কারাবন্দি আসামি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেই আপিল খারিজ হয়ে যায়। এর পর ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম