দেশজুড়ে

খুলনার সবজি বাজারে সিত্রাংয়ের প্রভাব

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব পড়েছে খুলনার বাজারে। চাল ডাল তেলের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও সবজি বাজারে যেন আগুন লেগেছে। বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এমন কথাই বলছেন বিক্রেতারা। একই সঙ্গে সবজির বাড়তি দাম চাইতেও ভুলছেন না তারা।

Advertisement

খুলনার সবজি ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকরা বলছেন, সিত্রাংয়ের প্রভাবে তিনদিনের বৃষ্টিতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৩/৪ দিন পানিতে সবজি ক্ষেত তলিয়ে থাকায় এবার শীতের সবজির উৎপাদন কম হবার আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে মা ইলিশ ধরার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় বাজারে মাছের দাম একটু হলেও কম হয়েছে। তবে ডিমের দাম রয়েছে সেই আগের মতই। একই সঙ্গে ফার্মের মুরগির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ কম। এ কারণে দামও বেশি। এছাড়া চলতি সপ্তাহ থেকে ব্যবসায়ীরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০-৩০ টাকা বেশিতে চিনি বিক্রি হচ্ছে। কেজিপ্রতি ১১০-১২০ টাকা দামে।

Advertisement

মশুর ডাল ২০ টাকা ও ভোজ্য সয়াবিন লিটারপ্রতি দশ টাকা বাড়তি। এদিকে চালের বাজারে আবারও একটু ঊর্ধ্বমুখী করার পায়তারা করছেন খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা। খুচরা পর্যায়ে মাঝারি আকারের চালের দাম কেজিতে ১-২ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন তারা। পাইকারি বাজারে চালের দাম এখনও স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) খুলনার বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা এবং ডিমের ডজনে আরও ৫ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক মুরগি ২৮০ টাকা, তবে সোনালী জাতের মুরগি আগের মতো ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়।

খুলনার মাছ বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আগুন ঝরতে থাকা দাম একটু কমতে শুরু করেছে। মাছের আমদানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আগে থেকে ধরে রাখা ইলিশ মাছ এসেছে বাজারে।

বাজারে চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ টাকা, পাঙ্গাস ১৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুই কাতলা ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, বেলে মাছ ৪০০ টাকা, পাবদা ২৫০ টাকা, দেশি কই মাছ ৪০০ টাকা, সিং ও মাগুর মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

এদিকে নগরীর বড় বাজারে চিনির দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। মশুর ডাল (দেশি) কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এছাড়া ভোজ্য সয়াবিন লিটারে ১০ টাকা বেড়েছে, বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। টুটপাড়া জোড়াকল বাজারে ব্যবসায়ী মাসুম আলী, আহাদ মেম্বর, রবিউল ইসলাম বলেন, পাঁচ-ছয় দিনের ব্যবধানে সবধরনের সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে। তাই তারা দাম বাড়িয়েছে।

ব্যবসায়ী রানা ও মনি বলেন, বাজারে যখন সবজির সরবরাহ বাড়তে থাকবে তখন হয়তো দামও কমতে শুরু করবে। এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।

ক্রেতা রফিক সরদার বলেন, বাজারে কখন কোন পণ্যও দাম বাড়ে তা বলতে পারে না কেউ। আরেক ক্রেতা সাবিনা বেগম বলেন, সবজিসহ সবধরনের জিনিসের দাম দিনদিন বেড়েই চলেছে। কোনো দোকানেই মূল্য তালিকা নেই।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে সবজির তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে যতটা ক্ষতি হয়েছে তার জন্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেন।

খুলনা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহরিয়া আকুঞ্জি বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন পণ্যের দাম একটু বেশি রাখছেন এমন অনেক অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু আমরা কোথাও অভিযানে গেলে কেউ দাম বাড়ার খবর দেয় না। খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আছে, বাজারে যথারীতি মনিটরিং করা হচ্ছে।

আলমগীর হান্নান/জেএস/এমএস