রাজনীতি

জাপার গৃহে সুবিধায় বিএনপি-আওয়ামী লীগ, ফ্যাক্ট ‘ভাসমান ভোটার’

সিলেট-৩ আসনটিতে ছিল জাতীয় পার্টির (জাপা) আধিপত্য। ২০০১ সালে এসে দখলে নেয় বিএনপি। এরপর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) এসে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের ঘরে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দলটির কব্জায়। জাতীয় পার্টি উল্টো এখন অনেকটা ব্রাত্য এ আসনে। ভোট বেড়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির। তবে দুই দলের ভোট প্রায় সমান-সমান। সংসদ সদস্য নির্বাচন তাই অনেকটা নির্ভর করে ভাসমান বা নির্দলীয় ভোটারদের ওপর।

Advertisement

সরেজমিনে আসনটির তিনটি উপজেলা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

শেখ পাড়া। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কোচাই ইউনিয়নের একটি গ্রাম। উপজেলার সীমান্তবর্তী এই গ্রামের সড়কের পাশেই একটি খাবার হোটেলে কথা হয় কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে। কেমন আছেন তারা? স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ নেন কি না, এলাকায় যান কি না, মানুষের বিপদে আপদে তাদের পাওয়া যায় কি না? দলগতভাবে অবস্থান ভালো আওয়ামী লীগ না বিএনপির?

জবাবে তারা বলছেন, স্থানীয় এমপি এলাকায় যান। মানুষের বিপদে-আপদে তাকে পাওয়া যায়। দলীয় নেতাকর্মীরাও ছুটে আসেন নানা সময়ে। তার বেশ জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে এরই মধ্যে। বর্তমান এমপির পাশপাশি আওয়ামী লীগের ডা. দুলালেরও জনিপ্রয়তা আছে। তবে পিছিয়ে নেই বিএনপিও। ব্যক্তি হিসেবে বিএনপির কাইয়ুম চৌধুরীও বেশ জনপ্রিয়। তিনি এলে ভোটে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।

Advertisement

আসনটির তিন উপজেলায় (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে হানাহানি না থাকলেও শক্তিশালী সংগঠন আছে দু’দলেরই। স্থানীয়রা বলছেন, ভোটেও দু’দল সমানে সমান। প্রার্থীর ব্যক্তি জপ্রিয়তা, দলের নির্বাচনী চমক ও দলের বাইরের ভোটাররা ঠিক করেন, কে হবেন এমপি!

শেখ পাড়ার হোটেল ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমানই আছে। নেতারা বেশ ভালো করছেন। জনসমর্থন অর্জন করতে যে যার জায়গা থেকে কাজ করছেন তারা।

রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ বলেন, মারামারি হানাহানি নেই, সবাই শান্তিপূর্ণভাবেই আছে। স্থানীয় এমপি কিছুদিন আগে উপ-নির্বাচনে পাস করেছেন। তাকে সহজে পাওয়া যায়। এলাকায় বেশ ভালোই সময় দেন।

কোচাই ইউপির পশ্চিমবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. জাবের বলেন, এখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি পাস করবে। কারণ মানুষ এখন নতুনত্ব চায়।

Advertisement

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এখানে তাদের অবস্থান বেশ সৃদৃঢ়। সংগঠনগুলোও সক্রিয়। করোনাভাইরাস ও বন্যায় মানুষের পাশে থেকে তাদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন।

বর্তমান এমপি এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এখানে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ়। করোনাসহ নানা সংকটে আমরা তো মানুষের পাশে ছিলাম, এখনো আছি। মানুষ অতীতে আমাদের কাজের মূল্যায়ন করেছে। আশা করি ভবিষ্যতেও করবে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, এখানে (সিলেট-৩) আমাদের নৌকারই ভোট বেশি। ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি। দক্ষিণ সুরমায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ফিফটি-ফিফটি।

প্রার্থীর আধিক্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমস্যা হলো- নির্বাচনে বিরোধীদল আসে না। যে কারণে আমাদের দলের মধ্যে প্রার্থী বেশি থাকে। অনেকে মনে করেন, মনোনয়নটা পেলেই তো এমপি হয়ে গেলাম। বিরোধীদল এলে প্রার্থী কমে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ। সাবেক এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর স্ত্রী ফারজানা সামাদ চৌধুরীও প্রার্থী হতে পারেন এই আসনে।

অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের এপিএস আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর। পাশাপাশি শফি আহমেদ চৌধুরীও আছেন মাঠে।

দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩১ নম্বর আসন সিলেট-৩। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ২২ হাজার ২৯৩। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৮ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৪২৫।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, আসনটি দুবার ছিল জাতীয় পার্টির দখলে। একবার বিএনপি ও টানা তিনবার এবং উপ-নির্বাচনসহ চারবার আওয়ামী লীগের কব্জায়। স্বভাবিকভাবেই নৌকার ভোট বেশি। দলগতভাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থাও ভালো। ব্যক্তি হিসেবে প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। এ আসনটিতে তিনি নৌকার বলয় গড়তে সক্ষম হয়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী পান ৮৩ হাজার ২৮৮ ভোট।

১০ম সংসদ নির্বাচন (২০১৪) আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী।

৯ম সংসদ নির্বাচন (২০০৮) আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ৯৭ হাজার ৫৯৩ ভোট পান। বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী পান ৫৪ হাজার ৯৫৫ ভোট।

৮ম সংসদ নির্বাচন (২০০১) বিএনপির শফি আহমেদ চৌধুরী ৫৫ হাজার ৯৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পান ৪৪ হাজার ৩৪২ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬) জাতীয় পার্টির এ মুকিত খান পান ২৬ হাজার ৬৫৯ ভোট। আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পান ২৬ হাজার ১৬৮ ভোট।

৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) জাতীয় পার্টির এ মুকিত খান ৩৩ হাজার ৪১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের আতিকুর রহমান পান ১৯ হাজার ৫৭ ভোট।

এসইউজে/এএসএ/এমএস