ধর্ম

বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বজয়ী হাফেজ ‘কারি আবদুল হক’

মাহমুদুল হক জালীসমুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশি হাফেজদের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি হাফেজরা বরাবরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে করেছে সম্মানিত। তাদের অনন্য অবদানে প্রায়ই বিশ্বমিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছে সতের কোটি মানুষের প্রিয় জন্মভূমি ‘বাংলাদেশ’।

Advertisement

কাতার, কুয়েত, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, মালয়েশিয়া, ভারত, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হচ্ছে বাংলাদেশি হাফেজরা।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই যে বাংলাদেশি হাফেজদের বিজয়ের ধারা, এটা কিন্তু আগে ছিল না। আরো সহজ কথায় বলতে গেলে গত ৩০ বছর আগে এ দেশের হাফেজদের এত গুরুত্ব বা সুনাম ছিল না। বাংলাদেশের হিফজ মাদরাসাগুলোতে যারা ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন বা আন্তর্জাতিক মানের হাফেজ তৈরির সূচনা করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শায়খ হাফেজ কারি আবদুল হক।

শায়খ হাফেজ কারি আবদুল হক এমনই একজন হাফেজ, যিনি বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ৭১ টি দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করে বিশ্ব জয় করেন।

Advertisement

শায়েখ আব্দুল হক ইলমে কেরাত ও ইলমে তাজবিদসহ বিশুদ্ধ তিলাওয়াতে পারদর্শী একজন ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন মহল থেকে তাকে রঈসুল হুফফাজ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তিনি কোরআনের একজন বাহক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।

তিনি ১৯৮২ সালে লিবিয়ায় পূর্ণ ৩০ পারা হিফজ প্রতিযোগিতায় ৭১ টি দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অর্জন করেন। একই প্রতিযোগিতার ২০ পারা গ্রুপে তার ছাত্র অর্জন করেন চতুর্থ স্থান।

তিনি ১৯৯০ সালে ইরানে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্মাননা লাভ করেন।১৯৯৩ সালে সৌদি আরবে কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশেষ কৃতিত্বের কারণে শায়খকে সৌদি আরব সরকার পবিত্র কাবাঘরে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।

এছাড়া শায়খ হাফেজ কারি আবদুল হক সৌদি আরবে দুই বছর ইমামতি এবং কোরআনের শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।

Advertisement

বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি দেশব্যাপী নিরলসভাবে পবিত্র কোরআনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ এ সময়ের শিক্ষকতায় তার সাফল্যের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। সারাদেশে তার সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে আছে।

দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান অনেক হাফেজ ও কারি তার ছাত্র। তার কৃতিছাত্রদের তালিকাও সুবিশাল। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন অঙ্গনে শায়খ হাফেজ কারি আবদুল হক হাজার হাজার ছাত্রকে শিক্ষক হিসেবে তৈরি করেছেন। যারা দেশর গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও কোরআনুল কারিমের খেদমত করছেন।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে শায়খ হাফেজ কারি আব্দুল হক আশির দশক থেকে আজ পর্যন্ত সুযোগ্য হাফেজ এবং কারি গড়ে তুলেছেন। যারা বাংলাদেশসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে, তাদের বেশিরভাগেরই সফলতার মূলে রয়েছেন শায়খ আবদুল হক।

কাতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাকে ইলমে কোরআনের শিক্ষকতা ও মসজিদের খেদমতে জন্য আহ্বান জানানো হলেও তিনি নিজ দেশের কোরআনের শিক্ষাকে প্রাধান্য দেন।

শিক্ষকতায় হাফেজদের মান উন্নয়নে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘হুফফাজুল কোরআন ফাউন্ডেশন’। এ ফাউন্ডেশনের আওতায় বিশাল সংখ্যক হাফেজে কোরআন নিজেদের সুদক্ষ হাফেজ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। হুফফাজের সনদধারী হাফেজ শিক্ষকদের মর্যাদাই আলাদা। মূলত হাফেজ শিক্ষকদের যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণের কারণেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের অসংখ্য হাফেজ তৈরি হচ্ছে।

হাফেজ কারি আবদুল হক বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্ব জয় করা হাফেজের সংখ্যা এখন কম নয়। এইসব হাফেজের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম-সুখ্যাতি বাড়ছে। লাল সবুজের পতাকা সম্মানিত হচ্ছে। বিশ্বজয়ী হাফেজদের সরকারের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ করা যায়। অথচ, দেশের মাদরাসাগুলোর প্রতি একটু যত্ন নিলে বা একটু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে বাংলাদেশি হাফেজদের মানসম্মান এবং সুনাম-সুখ্যাতি অনন্য উচ্চতায় পৌছে যাবে বলে মনে করেন শায়েখ আবদুল হক।

এমএমএস/জেআইএম