বরিশাল বিভাগে ৪-৫ নভেম্বর কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাস মালিক ও কর্মচারী এবং পরিবহন শ্রমিকরা। তাদের দাবি, মহাসড়কে তিন চাকার অবৈধ যান ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল বন্ধের দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করবে। তবে এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি।
Advertisement
এদিকে ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হওয়ার কথা আছে। নেতাকর্মীদের দাবি, সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং ব্যাপক জনসমাগম ঠেকাতে বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ২২টি মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না। তিন চাকার যানবহন ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল দিন দিন বাড়ছে।
পদ্মাসেতু চালুর পর যানবহন বাড়ায় মহাসড়ক আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে পরিবহন মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ক্ষতির প্রভাব পড়ছে শ্রমিকদের ওপরও। তাই মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে তিন চাকার যানবহন ও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বন্ধে স্ব স্ব জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ৩ নভেম্বরের মধ্যে এসব যান বন্ধ না হলে ৪-৫ নভেম্বর কর্মবিরতি পালন করবেন বাস মালিক ও কর্মচারী এবং পরিবহন শ্রমিকরা।
Advertisement
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান খান ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ নভেম্বর বরিশালে বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এছাড়া এরই মধ্যে গণসমাবেশ আয়োজনে নানা প্রস্তুতি চলছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বিভাগের ছয় জেলার নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বৈঠক করছেন। এ অবস্থায় গণসমাবেশ আয়োজন ছাড়া বিকল্প কোনো কিছু ভাবছে না বরিশাল বিএনপি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যত বাধা-প্রতিবন্ধকতা আসুক সেটি উপেক্ষা করে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বিভাগীয় গণসমাবেশে মানুষের ঢল নামবে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে গণপরিবহন বন্ধ করা হবে, এটা আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। আশঙ্কা করছি ৪ ও ৫ নভেম্বর ট্রাক-লঞ্চ এমনকি খেয়াঘাটও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। বিষয়টি মাথায় নিয়েই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
বরিশাল বিভাগীয় বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবহনসহ অনুমোদনহীন নসিমন-করিমন ও অন্যান্য যানবহন চলাচল করছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে লিখিতভাবে কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিভাগের ছয় জেলার বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বেশ কয়েকবার আলোচনা করে ৪-৫ নভেম্বর কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর আগেই তিন চাকার যানবহন ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ কার্যকর হলে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবো।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে কিশোর কুমার দে বলেন, বিএনপির সমাবেশ কবে জানা নেই। বিএনপির পক্ষে থেকে বাস মালিক সমিতির নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়নি। এছাড়া তিন চাকার যানবহনসহ অনুমোদহীন নসিমন-করিমন ও অন্য যানবহন চলাচল বন্ধে আগে থেকেই বিভাগের ছয় কর্মসূচি ঘোষণার আলোচনা চলছিল। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও প্রশাসন কার্যকারী পদক্ষেপ না নেওয়ায় কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
Advertisement
বরিশাল বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের কাওছার হোসেন শিপন জাগো নিউজকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়। আমরা পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে বিভাগীয় বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠনের নেতারা আলোচনা করে ৪-৫ নভেম্বর কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান জাগো নিউজকে বলেন, কর্মবিরতি কর্মসূচির বিষয়ে বাস মালিকদের একটি চিঠি পেয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে তাদের দাবিগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
সাইফ আমীন/এসজে/এএসএম