দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়তই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শনাক্তের নতুন রেকর্ড আগের দিনের রেকর্ড ভাঙছে। অথচ মশক নিধন না করে বসে বসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের ১৫ জন মশক সুপারভাইজার। তাদের কাজে লাগাতে খোদ মশক নিবারণী দপ্তরেরও তেমন আগ্রহ নেই।
Advertisement
তবে বসে বেতন-ভাতা নেওয়া মশক সুপারভাইজারদের দাবি, তারা প্রেষণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য শাখার অধীনে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু গত দেড় মাস আগে তাদের প্রেষণ বাতিল করে আগের কর্মস্থলে পাঠিয়ে দিয়েছে ডিএসসিসি। এখন মশক নিবারণী দপ্তরে কোনো কাজ নেই। কারণ, মশক নিবারণীর সব জনবল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এবং ডিএসসিসিতে প্রেষণে কাজ করে। অথচ ডেঙ্গুর এই সময়ে কাজ করলে নগরবাসী অনেকটাই উপকৃত হতো বলে মনে করেন তারা।
আরও পড়ুন: আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, হাসপাতালে মশারি ব্যবহার ঢিলেঢালা
তবে ডিএসসিসির সচিব দপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই ১৫ জন মশক সুপারভাইজার যেসব ওয়ার্ডে সংযুক্ত ছিলেন, সেখানে ডিএসসিসির স্থায়ী পদের লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই মশক নিবারণী দপ্তরের এই কর্মচারীদের আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু ডেঙ্গুর এই মৌসুমে মশক নিবারণীর কর্মচারীদের কাজে লাগানো যেতো কি না, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
Advertisement
প্রতিদিন বিকেলে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার প্রকাশ করে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে। সব শেষ রোববার (২৩ অক্টোবর) এই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ডিএসসিসি সচিব দপ্তর সূত্র জানায়, গত ৩০ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সচিব আকরামুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠি এই ১৫ জন মশক সুপারভাইজারের প্রেষণ প্রত্যাহার করা হয়।
আরও পড়ুন: সিট খালি নেই ডেঙ্গু ওয়ার্ডে, মশারি ছাড়াই থাকছে রোগীরা
চিঠিতে বলা হয়, গত ৪ আগস্ট মশক নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক, স্প্রেম্যান সুপারভাইজার ও সহকারী মেকানিক (মশক নিয়ন্ত্রণ) পদে ৩০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। নবনিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদায়নে মশক নিবারণী দপ্তরের পাঠানো ১৫ জন মশক সুপারভাইজারকে প্রেষণ আদেশ প্রত্যাহার করে মূল কর্মস্থল নিবারণী দপ্তরে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানাই।
Advertisement
এই চিঠিতে যাদের প্রেষণ প্রত্যাহার করা হয়েছে, তারা হলেন ডিএসসিসির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মশক সুপারভাইজার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মনিরুজ্জামান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সেলিম আকন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নজরুল ইসলাম, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আবু তাহের শিকদার, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের গোপীনাথ সরকার, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জাহাঙ্গীর হোসেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কামাল উদ্দিন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইয়ার উদ্দিন খান, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ার শাদাৎ, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল ইসলাম, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের এস এম মনিরুল ইসলাম, ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আব্দুর রব ও ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের এটিএম মোস্তফা।
এমন অফিস আদেশ পাওয়ার পর ওই ১৫ মশক সুপারভাইজার নিজ কর্মস্থলে চলে যান। কিন্তু বিপত্তি ঘটে অন্য জায়গায়। মশক নিবারণী দপ্তরের স্টোরকিপার গিয়াসউদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, মশক নিবারণী দপ্তরের ২৮১ জন কর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৫৪ জন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। বাকি ১২ জন মশক নিবারণী দপ্তরে কাজ করেন। এর বাইরে ১৫ জন মশক সুপারভাইজার রয়েছেন। তাদের মশক নিবারণী দপ্তরে ফেরত পাঠিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এখন তাদের হাতে কাজ নেই, বসে বসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় চালু হয়েছে ৯৮ শয্যা
প্রেষণে ৩৪ বছর ধরে ডিএসসিসিতে মশক সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়ার উদ্দিন খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে সিটি করপোরেশনে কাজ করেছি। এখন দেশে ডেঙ্গুর যে অবস্থা, করপোরেশনে থাকলে কাজ করার সুযোগ হতো। প্রেষণ প্রত্যাহার হওয়ায় বাকি কর্মচারীদের মন খারাপ বলে জানান তিনি।
এই অফিসের কর্মীরা বেতন পান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. শামসুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকার দুই সিটির আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে মশক নিবারণী দপ্তরের লোকজন কাজ করছেন। যে ১৫ জন কর্মীর প্রেষণ প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখন করণীয় নির্ধারণ করে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
এমএমএ/এসএইচএস/এমএস