দেশের সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু শরীরে ক্ষতিকারক সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে। দুই থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের শরীরে সিসার নেতিবাচক প্রভাব বেশি। এর প্রভাবে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে এবং লেখাপড়ায় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই যাদের শরীরে সিসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি মিলছে, বড় হয়ে তাদের আগ্রাসী হয়ে ওঠার শঙ্কাও প্রবল।
Advertisement
সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) সম্প্রতি এ গবেষণা পরিচালনা করে।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনের এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন: বাতাসে বাড়ছে সিসা
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের চার জেলায় শিশুদের রক্তে সিসার সক্রিয় উপস্থিতি মিলেছে। রক্তে সিসা থাকা শিশুদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের রক্তে এর পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত, যারা উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রাম। এর চেয়ে কারও শরীরে সিসার উপস্থিতি বেশি থাকলে তা ক্ষতিকর বলে বিবেচিত।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন লিপস্টিক ব্যবহারে যেসব বিপদ হতে পারে
Advertisement
সেমিনারে আইইডিসিআর-এর গবেষক নওরোজ আফরিন গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী- এ চার জেলার শিশুদের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। পরীক্ষার আওতায় আসা ৯৮০ শিশুর সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। এরমধ্যে ৬৫ শতাংশ শিশুরই রক্তে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রামের বেশি। দুই থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের শতভাগের শরীরেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: বাতাসে ‘বিষ’, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
অন্যদিকে আইসিডিডিআর,বির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় তারা ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করেছে। তাদের সবার শরীরেই সিসার উপস্থিতি মিলেছে।
আরও পড়ুন: পেপসি ও কোকা-কোলাসহ ৫ কোমল পানীয়তে ক্ষতিকর সিসা
গবেষকরা বলছেন, সিসার প্রভাবে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে এবং লেখাপড়ায় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকে যাদের শরীরে সিসার উপস্থিতি, তাদের অনেকে ভবিষ্যতে আগ্রাসী হয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে।
৯৬ পণ্যে মিললো সিসার উপস্থিতি
এদিকে, গবেষণায় বাজারের বিভিন্ন পণ্যও পরীক্ষা করা হয়। ৩৬৭টি পণ্যে পরীক্ষা চালিয়ে ৯৬টিতে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। চারটি শহরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খেলনা, রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল, সবজি, চাল এবং মসলার নমুনায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: দেশের বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারী ধাতু মিশ্রিত মাছ
চার শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা। এছাড়া মাটি, ছাই, পোড়ামাটি ও হলুদের গুঁড়ায় সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে।
গ্রামে ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরে সিসা
গবেষণার তথ্য বলছে, গ্রাম এলাকায় পরীক্ষা করা ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। সিসামিশ্রিত হলুদের গুঁড়া গর্ভবতী নারীর শরীরে উচ্চমাত্রার সিসার উপস্থিতির কারণ।
আরও পড়ুন: বাজারে হলুদে ক্ষতিকর রাসায়নিক!
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুজ্জামান, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট প্রমুখ।
এএএম/এএএইচ/এএসএম