২৪ অক্টোবর ২০২২। কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষকে উদ্বেগের মধ্যে রাখা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। তবে স্বস্তির কথা হচ্ছে, বড় কোনো ক্ষতি ছাড়াই সিত্রাং পেরিয়েছে উপকূল। স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে ‘সিত্রাং’র গ্রাসে থাকা উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে। সিত্রাং আঘাত হেনেছে কয়েক ঘণ্টা আগে। এখনও প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির বাস্তবচিত্র নিরূপণ করার সুযোগ হয়নি। অতীতের বাংলাদেশে সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ে হাজার থেকে লাখ মানুষ মৃত্যুর রেকর্ড রয়েছে। বিরান হয়ে যেতে দেখা গেছে বহু এলাকা। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াবহ এক সাইক্লোন কেড়ে নিয়েছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬৬টি তাজা প্রাণ। সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের। এটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘শতাব্দীর প্রচণ্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ২০০৭ সালের সিডরেও রেডক্রসের হিসেবে মারা গেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
Advertisement
অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ ‘ঘূর্ণিঝড়’ প্রবণ অঞ্চল। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন প্রায় ৭২৫ কিলোমিটারবেষ্টিত সাগরসীমা আছে। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে গোলার্ধে অবস্থিত হওয়ার কারণে উষ্ণমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের একটা লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। প্রতিবছর কিছু ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে এবং প্রধানত এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর হলো এ ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম। এবারেও অক্টোবরের শেষ দিকে আঘাত হানলো ‘সিত্রাং’। তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে শোকর আদায় করতে হবে, অতীতের মতো বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। সেই সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ, ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগে থেকে সার্বক্ষণিক নির্দেশনায় আসন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য।
মনে পড়ছে, জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার কিছুদিন পরই ২০০৯ সালের মে মাসে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। আইলার আঘাতে হাজার হাজার একর জমির ফসল ও মৎস্য সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় এ দুর্যোগ থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়। আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ত্রাণ হিসেবে ২৭ হাজার ৯৫১ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা নগদ অর্থ সাহায্য, ২০ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার টাকা গৃহনির্মাণ বাবদ এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ১১৬ কোটি টাকা মঞ্জুরি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে এখন আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নিজস্ব তহবিল। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে আছে জলবায়ু ট্রাস্ট। স্থাপন করা হয়েছে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ একাডেমি। ২০১২ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করে শেখ হাসিনার সরকার। এ ছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ আর নতুন নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের যজ্ঞ তো চলছেই। সব মিলিয়ে একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দিন দিন বাংলাদেশ প্রস্তুত হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়। যদিও প্রকৃতির সামনে মানুষের ক্ষমতা খুব সীমিত। তবু মহাশক্তিধর প্রকৃতির বিরূপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে টিকে থাকার সামর্থ অর্জন করছি, আর সেটি শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।
Advertisement
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব প্রশাসনিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির নেতৃত্বে টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি, ‘সিত্রাং’র মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের উন্নয়ন ধারাকে ব্যাহত করতে পারবে না। আমরা ঘুরে দাঁড়াব যে কোনো বিপর্যয়ের মধ্যেও। কারণ আমাদের পাশে আছেন শেখ হাসিনা। তিনি দেশের মানুষের প্রাণের নেত্রী। দেশের মানুষের ভালো-মন্দ দেখার ভার তাঁর। তিনি আমাদের দেখছেন, দেখবেন।
লেখক: রাজনীতিক ও সমাজকর্মী।
এসইউ/জিকেএস
Advertisement