সাহিত্য

শায়লা জাবীনের দুটি কবিতা

প্রেম

Advertisement

হৃদয়ে খুব বেশি জায়গা ছিল না কখনোকিপ্টে ছিলাম নাকিন্তু প্রেমে পড়া যে বাড়ি থেকে বারণ তাই অনেককেই জায়গা দিতে পারিনি...বারবার না, না, বলতে বলতেও সেখানে রয়ে গেল যারা তাদের মুছে ফেলার মতো কারণ এখন অবধি খুঁজে পাইনি তেমন...যার যার যোগ্যতায়ই তারা বহাল তবিয়তে বিরাজমান সেখানে প্রাক্তন বলা তো রীতিমতো স্পর্ধা বলে মনে হয় আমার...

ছোট্টবেলার খেলার সাথী যেমন মায়ের শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে বানানো কাপড়ের পুতুলবকুল গাছের তলায় কুঁড়ানো শুকনো বকুলসবকিছুর মতোই তারা মিশে আছে স্মৃতিতেভালো লাগায়, কষ্টে, দুঃখে, হাসিতে, ঝাড়িতে...

এক জীবনে কত প্রেম এলো, গেল...এখনো আসে, যায়...তাই বলে কি প্রেম কখনো বলে কয়ে হয়?বিনা কারণেই মন লেগে যায়অথবা কারণেই,নাদান মন কেবল বোঝে না হায় শুধু মন পুড়ে ছাই ডানা ঝাপটানো নীল পাখির মতো হৃদয় তরপায় দহনকালে চুপিসারে কেউ কানে কানে কথা কয়মায়ার নীলে ডুবে গিয়েছো জীবন যে খাবিখায় এ বিষ যে সাপের বিষকেও হার মানায়...

Advertisement

আমার কোনো প্রাক্তন নেই...হবেও না কোনোদিনযতদিন আমি জীবিত আছি দিব্যি হৃদয়ে সব দৈনন্দিনভালোবাসায়, তিক্ততায় আর না পাওয়ার ব্যথায়নীল সমুদ্র শুধু আরও বেশি নীল

আরও কেউ আছে হয়তোকখনো ঠিক প্রেমে পড়িনি যাদের তো কী হয়েছে...প্রেম আমার উপরে পড়েছে ছিঁড়েখুঁড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো তো করতে পেরেছেইতিহাসের গুঁড়ো বালু আর বাস্তবতার সিমেন্ট মিশিয়েযেখানে অভেদ্য সুউচ্চ ইমারত উঠেছেসবই তাদের কল্যাণেদ্বিধায়, অবিবেচনায়... নির্মম রূঢ়তায়...ভালোবাসায়, মায়ায়, প্রেমে...শুধু বেঁচে আছি মহাকালের কোনো এক সময়ে...

নিখিলে নিজেকেই খুঁজে বেরিয়েছি বেশিকখনো ধরায়, কখনো তারায় কখনো সীমানা ছাড়িয়ে অসীমে...যার মাঝে খুঁজে পেয়েছি নিজেকে খেই হারিয়ে ফেলেছি সেথায়থমকে যেতে হয়েছে...বারবার সেখানেই।।

****

Advertisement

স্বস্তি

কেন জানি আর শোকাহত হতে পারি না চোখে পড়ে না নবম কোনো আশ্চর্য...সবকিছুই গা সওয়া হয়ে গেছেচিনি ছাড়া চা-কফি খাওয়ার মতন।আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া বাড়িয়েছিভিটামিন সি নিত্য খেয়ে চলেছি তবু কিছুতেই মন বিচলিত হয় নাহয় না কেন যে হৃদয় মর্মাহত...বরং সহসাই রাগ ক্রোধ জেগে ওঠেতরতরিয়ে বেড়ে ওঠা আগাছার মতো সেগুলো ছাইচাপা দিতেই বেতিব্যস্তআবার দেখি বিদ্রোহী মন জাগে বিধাতাকে তাই শুধাই নতমুখেক্রোধের অনুভূতি কমিয়ে দাও আগেভাগেই নইলে যদি হাতে চলে আসে পিস্তলঅথবা ভুলেভালে দু’নলা বন্দুক দল এক হালি বা গোটা ছয় ফেলে দেওয়াসত্যি বলছি কোনো ব্যাপারই নাএকটুও হাত-পা কাঁপবে নামন কাঁদার তো প্রশ্নই ওঠে না।জঞ্জাল আর বিষধররা মরবেহৃদয়ে একটু হলেও শান্তি মিলবে আগামীর মানব-মানবীরা স্বস্তি পাক শামুকগুলো শক্ত খোলস ছেড়ে বের হোক এর চেয়ে ঢের বেশি মন পোড়েজুতোর তলায় পিঁপড়ে পিষ্ট হলেইস... কী ভুলটাই না করলামএকটা পিঁপড়ের জীবন মিছে মারলাম ওদের চেয়ে পিঁপড়ের জীবন যে জরুরিমিথ্যে সং সাজা ভণ্ড মানুষগুলোযে কোনো ভাবেই আলোচিত হতে গিয়েনাই কাজ তাই খই ভাঁজে ওয়ালে ওয়ালে টুপি, টিপকে জাপটে আঁকড়ে ধরেদরকারহীন দাঁত কেলানো ছবি দিয়ে একই অঙ্গে কত রং আর ছলচাতুরিনিজের চরিত্র ঢাকে মিথ্যার আড়ালে এত সময় মেলে কোথায় কীভাবে...এদের কি ঘুমানোর জায়গা নেই বা দু’দণ্ড দম ফেলার কোনো অজুহাত।যে কথা নিজেই লেখে বসে গতকালহঠাৎ দেখি ভিন্ন সুর আগামীকাল একবারও কি মনে হয় না তাদের অমরত্বের সন্ধান মেলেনি মোদের পরশ্রীকাতর হয়ে বাঁচার চেয়েভালোয় ভালোয় বিদায় হোক মরে গিয়ে হিসেব নিকেশ দেনা পাওনার যত খেলা লেনদেন চুকাবো তোমার সাথে মওলা।ইস... যদি একটা স্নাইপার জুটতো...দু’হালিকে অবশ্যই আলবিদা দিতাম,শান্তির ঘুম আরও স্বস্তির হতোবহুদিন পর নির্মল সকাল পেতাম।

কবি: অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন প্রবাসী।

এসইউ/এমএস