দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মহামায়া লেক যেন এক মায়াজাল। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি এই এলাকা।
Advertisement
১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ লেকটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লেকের স্বচ্ছ নীলাভ জল, চারপাশের সবুজের চাদর আর শুনসান নিরবতায় হারিয়ে যেতে চায় যে কেউই। এমন পরিবেশে পর্যটক টানতে নতুনভাবে যোগ হয়েছে কায়াকিং অ্যাডভেঞ্চার।
চারদিকে সবুজের চাদরে মোড়ানো লেকের স্বচ্ছ অথৈ পানিতে নিজেই পর্যটকরা চালাতে পারবেন নৌকা। এমন অ্যাডভেঞ্চার নিশ্চয়ই কেউ মিস করতে চান না!
Advertisement
আর এ কারণেই মহামায়া কায়াকিং পয়েন্টে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। প্রতিদিন কায়কিং করতে এখানে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।
মহামায়া কায়াকিং পয়েন্টের পরিচালক মোহাম্মদ শামীম জানান, বাংলাদেশে কাপ্তাইয়ের পরে এখানেই আছে কায়েক নৌকা। আমরা ২০১৭ সাল থেকে মহামায়াতে কায়াকিং শুরু করেছি। শুরু থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি।’
‘তবে ২০২০-২০২১ সালে করোনা মহামারির কারণে পর্যটন স্পট বন্ধ থাকার কারণে লোকজন না আসায় আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের জমে উঠেছে কায়াকিং পয়েন্ট।’
তিনি আরও জানান, ‘মহামায়ার কায়াকগুলো অন্যস্থান থেকে আরওে উন্নত ও নিরাপদ। এগুলো আমদানি করা হয়েছে ব্রাজিল থেকে। প্রতিদিন শতাধিক পর্যটক কায়াকিং করেন। তবে শুক্রবার ও শনিবার ও যেকোনো বন্ধের অনেক অনেক বেশি লোক কায়াকিং করেন।’
Advertisement
আরেক পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘মহামায়ায় এখন ৪০টি কায়াক নৌকা আছে। জনপ্রতি এক ঘণ্টায় ১৫০ টাকা ও ৩০ মিনিট ১০০ টাকা নেওয়া হয়। অনেক অনলাইনে আগে বুকিং দিয়ে রাখেন। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় দেওয়া হয়।’
‘এছাড়া এখানে কায়াকিং ছাড়াও রাতে তাবু টাঙিয়ে থাকার ব্যবস্থা আছে। একই সঙ্গে আছে একদিন থাকা-খাওয়া। রাতে আছে বারবিকিউ ও পার্টির আয়োজন। জনপ্রতি পুরো প্যাকেজ ৭২০ টাকা। লোকজন সংখ্যায় বেশি হলে টাকার পরিমাণ কিছু ছাড় দেওয়া হয়।’ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিল্পব এ বিষয়ে বলেন, ‘দেশের ২য় বৃহত্তম কৃত্রিম এই লেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনসারের জন্য আবেদন করেছি। এছাড়া পুলিশ প্রশাসন আমাদের সব সময় সহযোগিতা করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পরিবেশবান্ধব কায়াকিং এর ব্যবস্থা করেছি। দেশে কাপ্তাই লেকের পর ২য় মহামায়াতে কায়াকিং ব্যবস্থা করা করা হয়েছে। দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা কায়াকিংয়ে আগ্রহী।’
কায়াকিং করতে গিয়ে কথা হয় দর্শনার্থী তাজুল, টিটু, রাতুল পলাশের সঙ্গে। তারা জানান, নিজ হাতে নৌকা চালিয়ে পাহাড় আর সুবজের নীলাভজলের বুক চিরে ইচ্ছেমতো ঘুরতে দারুন লাগে।
চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিন জানান, কায়াকিং পয়েন্টের লোকরাই শিখিয়ে দেয় কীভাবে কায়াকিং করতে হয়। যার কারণে চালাতে তেমন বেগ পেতে হয় না। এতে দারুন অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে।
পিকনিকের জন্যও মহামায়া দারুণ একটা জায়গা। এখানে এসে রান্না বান্না করে খাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। ঢুকতে টিকেটের মূল্য ৩০ টাকা।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা-চট্টগ্রামের যে কেনো বাসে করে সরাসরি নামতে হবে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘী এলাকায়। সেখান থেকে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা যোগে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছানো যাবে মহামায়ায়।
কোথায় খাবেন?
লেকে ঘুরতে এসে দিন শেষে ফিরে গেলেই ভালো। কারণ মিরসরাইতে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। থাকতে হবে চট্টগ্রাম শহরে।
শহরের প্রবেশমুখে একেখাঁন মোড়ে আছে মায়াবী রিসোর্ট ও অলংকার মোড়ে আছে রোজভিউ আবাসিক হোটেল। মহামায়া প্রকল্প থেকে শহরের প্রবেশ মুখে ঢুকতে সময় লাগে ৫০-৫৫ মিনিট মাত্র।
জেএমএস/এমএস