দেশজুড়ে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ১৩ জনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গাছ পড়ে ও নৌকাডুবিতে ছয় জেলায় অন্তত ১৩ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভোলায় চারজন, কুমিল্লায় তিনজন, সিরাজগঞ্জ ও গোপালগঞ্জে দুইজন করে এবং বরগুনা ও নড়াইলে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে:

ভোলাভোলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সদর, দৌলতখান, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত পাঁচজন। এর মধ্যে সোমবার রাতে তিনজন ও মঙ্গলবার ভোরের দিকে একজন নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চেওয়াখালী গ্রামের মো. মফিজুল ইসলাম (৬০), দৌলতখান পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাতিজা বেগম (৬০), চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের মো. মনির হোসেন (৩০) ও লালমোহন উপজেলার লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাবেয়া বেগম (২৫)।

Advertisement

এর মধ্যে সদরের মফিজুল ইসলাম একটি গাছ ভেঙে বসতঘরের ওপরে পড়লে চাপা পড়ে নিহত হন। দৌলতখানের খাতিদা বেগমও ঘরের ওপর গাছ পড়ে চাপায় নিহত হন। এছাড়া চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জে মনির মোটরসাইকেল করে যাওয়ার সময় গাছের ডাল ভেঙে শরীরে পড়ে নিহত হন এবং লালমোহনের রাবেয়া বেগম জোয়ারের পানিতে ডুবে নিহত হন।

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম ভোলা সদর ও দৌলতখানের হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চরফ্যাশন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল নোমান তার উপজেলায় নিহতের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ঘর পুরো বিধ্বস্ত ও এক হাজারের অধিক ঘর আংশিক বিধস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান তার থানায় একজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কুমিল্লাঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে গাছ উপড়ে পড়ে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের এক সন্তান মারা গেছেন। সোমবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার হেশাখাল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে।

Advertisement

নিহতরা হলেন- ওই এলাকার মো. নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী সাথি আক্তার ও মেয়ে লিজা আক্তার।

মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় হেশাখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার মজুমদার জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে এ বিষয়ে জানতে নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

সিরাজগঞ্জসিরাজগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ঝড়ে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার সয়দা ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- পূর্ব মোহনপুর গ্রামের খোকন সেখের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৮) ও তার ছেলে আরাফাত হোসেন (২)।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে দুই ছেলেসহ এক গৃহবধূ মোহনপুর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নৌকাযোগে পূর্ব মোহনপুর গ্রামে ফিরছিলেন। পথে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাডুবিতে ঘটনাস্থলে এক ছেলের মৃত্যু হয়। এসময় অপর ছেলে ও তার মাকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মাকেও মৃত ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার সকালে সয়দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীদুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নৌকা ডুবে মা ও শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এতে ওই পরিবারে শোকের মাতম চলছে।

গোপালগঞ্জ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গাছচাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া ও বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী সারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮)।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবুল মনসুর ওই দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসি বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে রাত সোয়া ৮টার দিকে উপজেলার বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের ঘরের ওপর চম্বল গাছ উপড়ে পড়ে। এতে ঘরটি বিধ্বস্ত হয়ে গাছচাপায় তার স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮) মারা যান।

ওসি আবুল মনসুর বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে টুঙ্গিপাড়ার পাঁচকাহনিয়া গ্রামে রেজাউল খার বাড়ির পাশে থাকা খেজুর গাছ তার বসতঘরের ওপড়ে পড়ে। এতে ঘরের মধ্যে থাকা তার স্ত্রী সারমিন বেগম গাছচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান।

বরগুনাবরগুনায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট ঝোড়ো বাতাসে বসতঘরে গাছ উপড়ে পড়ে আমেনা খাতুন নামে ১১৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ওই বৃদ্ধার স্বজনরা জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া ঝড়ো বাতাসে তাদের বাড়ির পাশে থাকা চাম্বল গাছ উপড়ে বসতঘরের ওপর পড়ে। এসময় ঘর ও গাছের নিচে চাপা পড়ে আমেনা খাতুন ঘটনাস্থলেই মারা যান। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় মৃতের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জেলা প্রশাসন। মৃতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হবে।

নড়াইলঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝড়ে নড়াইলে গাছের ডাল পড়ে মর্জিনা বেগম (৩২) নামে এক গৃহপরিচারিকার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মর্জিনা বেগম বাগেরহাটের স্থায়ী বাসিন্দা। স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ছেলে জিহাদকে (১১) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লোহাগড়া পৌর এলাকার রাজুপুর গ্রামের আব্দুল গফ্ফারের বাড়িতে ভাড়া থেকে বিভিন্ন বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন তিনি। অন্যান্য দিনের মতো সোমবার সকালে বাসা থেকে কাজের উদ্দেশে বের হন তিনি। পথে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় পৌঁছালে মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে গুরুতর আহত হয় মর্জিনা। স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিরউদ্দিন বিষয়টির নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মৃতের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা এলে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/জাহিদ পাটোয়ারী/হাফিজুল নিলু/এমআরআর/এমএস