দেশজুড়ে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: বরিশালে বৃষ্টিপাতের নতুন রেকর্ড

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশালে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার রাত ৯টা থেকে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯টা পর্যন্ত জেলায় ৩৫৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বিগত দিনে বরিশালে একদিনে এত বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

Advertisement

এদিকে, টানা বর্ষণ এবং অমাবস্যায় সৃষ্ট জোয়ারের কারণে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বরিশাল নগরীর বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর মধ্যেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

একই অবস্থা জেলার উপজেলাগুলোতেও। নিম্নাঞ্চল, চরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অঝোড়ধারার বৃষ্টির সঙ্গে বিদ্যুৎ বিপর্যয় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। সোমবার দুপুরের দিকে বিভিন্ন উপজেলার বেশকিছু এলাকা বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে। বিকেলের দিকে বরিশাল নগরীসহ জেলার বেশিরভাগ এলাকায় ছিল না বিদ্যুৎ। রাত ৩টা পর্যন্ত সেসব এলাকা আসেনি।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের অবজারভার মো. মাহফুজুর রহমান আবহাওয়া অফিসের পুরোনো নথি যাচাই করে জানান, সাত বছর আগ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ ২৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ডটি ছিল ১৯৬৭ সালের ১০ নভেম্বর। এরপর ২০১৬ সালে সেই রেকর্ড অতিক্রম করে। সবশেষ গত রোববার রাত ৯টা থেকে সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত ৩৫৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামী দুই-তিনদিন ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী জাভেদ ইকবাল জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতিবর্ষণ ও অমাবস্যার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের কারণে নদ-নদীর পানি বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্ষায় জোয়ারের সময় আগেও নগরীতে পানি উঠেছে, তবে এবার ঘূণিঝড়ের প্রভাবে প্রায় ২৪ ঘণ্টা মুষলধারে টানা বৃষ্টি হয়েছে। স্মরণকালে এত বেশি বৃষ্টি একদিনে হয়নি। এ কারণে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। অমাবশ্যার প্রভাব কেটে গেলে ও আবহাওয়ার উন্নতি হলে জলাবদ্ধতা স্থায়ী হওয়ার কথা নয়।

এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এরই মধ্যে ২৪ হাজার ৮৬৭ জন মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার ও শিশুখাদ্য, সুপেয় পানি ও পরিচ্ছন্ন বাথরুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

Advertisement

তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলার সব উপজেলার ইউএনও এবং উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন। রাত আড়াইটা পর্যন্ত জেলার কোথাও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে টানা বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়া এবং জোয়ারের পানিতে জেলায় কিছু কাঁচাঘর ও কাচা রাস্তার ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাইফ আমীন/এমআরআর/এমএস