ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ বাংলাদেশের উপকূলের ১৭০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেতের পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ৭ নম্বর বিপৎসংকেত বহাল রাখা হয়েছে। বহাল রাখা হয়েছে কক্সবাজার বন্দরের ৬ নম্বর বিপৎসংকেতও।
Advertisement
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-১০) এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার মধ্যরাত বা মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোর নাগাদ ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে। এরই মধ্যে ‘সিত্রাং’ এর অগ্রভাগের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ প্রায় সারাদেশে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় বয়ে যাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়া।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় 'সিত্রাং' আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আরও ঘণীভূত ও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সোমবার মধ্যরাত বা মঙ্গলবার ভোর নাগাদ ভোলার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে।
Advertisement
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছের এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
এতে আরও জানানো হয়, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। সেইসঙ্গে এসব এলাকায় ভারিবর্ষণসহ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে এর পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। সেইসঙ্গে এ সব এলাকায় ভারিবর্ষণসহ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। সেইসঙ্গে এসব এলাকায় ভারিবর্ষণসহ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটিার বেগে ঝোড়ো হওয়ার বয়ে যেতে পারে।
Advertisement
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফরিদপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
আরএমএম/এমএএইচ/জেআইএম