অর্থনীতি

খোলা চিনির দাম নির্ধারিত নেই, বেশি লাভে প্যাকেট খুলে বিক্রি

দেশের চিনির বাজার হঠাৎ করেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। উধাও প্যাকেটজাত চিনি। এ সুযোগে আরেক দফা দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরায় চিনি কিনতে হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিদরে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিনির বাজার নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকও।

Advertisement

রোববার সংস্থাটি বলেছে— চলতি বছর দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি আমদানি হয়েছে। নতুন করে আরও চিনি আমদানি হচ্ছে। চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার তদারকির পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। অবশ্য চিনির বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শনিবার (২২ অক্টোবর) বাজার অভিযানে নেমেও কোনো সুরাহা করতে পারেনি। অভিযানে বাজারে চিনিসংকটের সত্যতা পেয়েছে সংস্থাটি।

এমন পরিস্থিতিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সাশ্রয়ী মূল্যে চিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফায়দা লুটছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষেত্রে তারা প্যাকেটের চিনি খুলে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। কারণ প্যাকেটের চিনির মোড়কে দাম উল্লেখ রয়েছে, যা বর্তমানে খোলা চিনির থেকেও কম। খোলা চিনি বিক্রিতে লাভ বেশি, তাই প্যাকেটের চিনি খুলে বিক্রি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে নামপ্রকাশ না করার শর্তে উত্তর বাড্ডার এক ব্যবসায়ী বলেন, এখন বাজারে চিনি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর অভিযানে নেমেছে। সে জন্য প্যাকেটের চিনির মোড়কে দাম লেখা, সেটি বাড়তি দামে বিক্রি ভয়ের ব্যাপার। কিন্তু খোলা চিনির দাম নির্ধারিত নেই। সেজন্য প্যাকেটের চিনি খুলে বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

তিনি বলেন, পরিচিত ক্রেতার কাছে প্যাকেটের চিনির দাম বেশি নিতে গেলে বিষয়টি ভালোভাবে দেখেন না তারা। খোলা চিনি বেশি দামে বিক্রিতে এ সমস্যা নেই। এছাড়া অনেকে অভিযানের ভয়ে প্যাকেটের চিনি রাখছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে পাওয়াও যাচ্ছে না।

আবুল হোসেন নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, চাহিদা মতো চিনি পাচ্ছি না। কিন্তু যেটা পাচ্ছি সেটা কিছু রেগুলার কাস্টমারের জন্য রাখতে হয়। তাদের জন্য প্যাকেট চিনি খুলে বিক্রি করছি।

আরও কয়েকটি কাঁচাবাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকান ঘুরে দেখা যায়— অনেক দোকানেই প্যাকেটজাত চিনি নেই। প্রায় ১০ থেকে ১২টি দোকান ঘুরে এক ২/৩টি দোকানে চিনি পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তবে, বাড়তি দামে চিনি সংগ্রহ করতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে— জ্বালানি সংকটের কারণে গত মাসের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত চিনি বাজারে কম সরবরাহ হয়েছে। তারা বলছে— চিনি পরিশোধনে যে গ্যাসের চাপ দরকার সেটা পাওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে বাজারে সরবরাহ সংকট হয়েছে।

Advertisement

অন্যদিকে, চলতি মাসের প্রথম দিকে সরকার খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রতি কেজি ৯০ টাকা। তবে এ দাম কার্যকর হয়নি। গত সপ্তাহের শুরুতেও চিনির দাম কেজিপ্রতি ৯৫ টাকার একটু ওপরে ছিল। যা এখন ১১০ টাকায় ঠেকেছে।

এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজার অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা। সারাদেশে অভিযান চালিয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করায় দুইদিনে প্রায় আড়াইশো প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছে। ঢাকাসহ সারাদেশের ৫০টি বাজারে বিশেষ অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ওই অভিযানে অংশ নেয় ভোক্তা অধিকারের প্রধান কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জেলার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ৫০টি দল।

দেশে অপরিশোধিত চিনির কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু গ্যাস না পাওয়ায় চাহিদা মতো চিনি পরিশোধন করতে পারছে না মিলগুলো। যে কারণে বাজারে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।এ পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। ফলে আজ রাত থেকেই পরিশোধনকারী মিলগুলো মিলগেটে চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক করবে। মঙ্গলবার থেকেই বাজারে চিনির সংকট কেটে যাবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেসরকারি চিনি সরবরাহকারী মিল মালিক এবং চিনির ব্যবসায়ীরা।

চিনির সরবরাহ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চিনির মিল-মালিক, রিফাইনারি, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভায় এ প্রতিশ্রুতি দেন তারা। সোমবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

এনএইচ/এমএএইচ/এএসএম