জাতীয়

সন্ধ্যায় আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আজ সন্ধ্যায় আঘাত হানবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

Advertisement

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়েছে। আবহাওয়াবিদের তথ্য অনুযায়ী, আজ সন্ধ্যায় এটি আঘাত হানবে। আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করবে।

তিনি আরও বলেন, সিত্রাং বাংলাদেশে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত হানার আশঙ্কা নেই। সব থেকে বেশি আঘাত হানবে বরগুনা এবং পটুয়াখালী।

Advertisement

এনামুর রহমান বলেন, এটা (ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং) এরই মধ্যে সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে। কেন্দ্র থেকে উপকূলের দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটারের মতো এবং পেরিফেরি (ঘূর্ণিঝড়ের সীমানা) উপকূল থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে আছে।

‌‘আবহাওয়াবিদের মতে সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ আজ সন্ধ্যায় আঘাত হানবে। আর মূল আঘাত হানবে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে।’

তিনি বলেন, ৭ হাজার ৩০টির মতো সেল্টার (আশ্রয়কেন্দ্র) প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে লোক নেওয়ার কাজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে এটা আরও জোরদার করতে হবে। আমরা আশা করি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে সরিয়ে আনতে পারবো।

‘এরই মধ্যে আর্মড ফোর্স ডিভিশনের প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে, তারা যেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে সম্পৃক্ত করে। দুর্গম এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা যেন সহযোগিতা করে। তারা এতে সম্মতি দিয়েছে।’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।

Advertisement

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররা সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে কাজ করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যারা আছে, তারা তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এটুকু বলতে পারি সিত্রাং আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত আঘাত হানবে। উপকূলীয় ১৩টি জেলায় বেশ মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে। আর দুটি জেলায় হালকাভাবে আঘাত হানবে।

এই ১৩ জেলার মধ্যে রয়েছে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী।

এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চল মহেশখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ এগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। এখান থেকে লোকজন সরিয়ে নিতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। এরই মধ্যে আমাদের মানবিক সহায়তা যা আছে পৌঁছে দিয়েছি। সেল্টারের লোকজনকে আমরা দুপুরে, রাতে এবং আগামীকাল সকালে তিনবেলা খাবার দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।

১৫ জেলার কত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হবে? জবাবে তিনি বলেন, আম্ফানে আমরা ২৪ লাখ ৭৬ হাজার মানুষকে সেল্টার দিয়েছিলাম। এবার আমরা ২৫ লাখের মতো টার্গেটে রেখেছি।

কতজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তথ্য আসছে। কিন্তু আমরা এখনো এটা যোগ করিনি। সুতরাং টোটালটা বলা যাবে না। আমরা কন্ট্রোল রুমে গিয়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় যোগ করে জানাবো।

এটা কি সিডরের মতো ধ্বংসাত্মক হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না। সিডর ছিল সুপার সাইক্লোন। সিভিয়ার সাইক্লোনের পর আর একটা স্তর আছে ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন। তারপর সুপার সাইক্লোন। এটার বাতাসের গতিবেগ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। এটাকে সিভিয়ার সাইক্লোন বলা হয়। এটা ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন বা সুপার সাইক্লোন হওয়ার আপাতত কোনো প্রেডিকশন আমাদের নেই।

প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনার বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে এনে তাদের জীবন রক্ষা করা। একটি লোকও যদি মৃত্যুবরণ না করেন এটাই হবে বড় সফলতা। একই সঙ্গে গবাদিপশু রক্ষা করারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

কী পরিমাণ খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রতি জেলায় ৫ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছি। ড্রাইকেক এবং ড্রাইবিস্কুট পাঠিয়েছি। চাল, তেল, লবণ, চিনি, গুঁড়া মশলা পাঠিয়েছি। যাতে রান্না করে খাবার খাওয়াতে পারে।

বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ সর্বাত্মক রক্ষা করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে বলেও জানান ডা. মো. এনামুর রহমান।

এমএএস/জেএইচ/এমএস/ইএ