পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
Advertisement
এটি রোববার দিনগত মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোরে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৭) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
এরই মধ্যে গভীর নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাংয়ে’ পরিণত হয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
Advertisement
৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেতের অর্থ হলো, বন্দর ঘূর্ণিঝড় কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার, তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জল্লোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
Advertisement
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
ঘূর্ণিঝড়টি আগামী মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর এর উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ। সব দেশের পূর্বাভাস মডেলই এটি বাংলাদেশে আঘাত হানতে বলে জানিয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এটি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল নাগাদ বাংলাদেশের তিনকোণা দ্বীপ (খুলনা) ও সন্দ্বীপের (চট্টগ্রাম) মধ্য দিয়ে এটি স্থলভাগে উঠতে পারে। স্থলভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার।
ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘সিত্রাং’, থাইল্যান্ডের দেওয়া। তবে শব্দটি শ্রীলঙ্কাভিত্তিক। এর অর্থ ‘পাতা’ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩ দেশের (বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন) আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে।
এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সাংবাদিকেদের বলেন, লঘুচাপ সৃষ্টির পর থেকেই আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোকে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আমাদের ভার্চুয়ালি মিটিং হয়েছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে। সিপিপিকে (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) প্রস্তুতি গ্রহণ ও সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আমরা প্রস্তুত রাখতে বলেছি। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে মানবিক সহায়তা দিতে আমরা প্রত্যেক জেলায় ২৫ টন চাল, ৫ লাখ টাকা এবং ড্রাইকেক ও বিস্কুট সরবরাহ করেছি। এটা মজুত আছে, যে কোনো সংখ্যক লোক হলে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবো।
আরএমএম/এমকেআর