জাতীয়

জনবহুল এলাকায় ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ, বাড়ছে শব্দ ও বায়ুদূষণ

ওয়েল্ডিংয়ের দোকান বা ওয়ার্কশপ নির্মাণকাজের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। এসব ওয়ার্কশপে লোহা কাটা, জোড়া দেওয়ার কাজ চলে। তাই বিকট শব্দ উৎপন্ন হয়। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ ওয়ার্কশপ আবাসিক এলাকা কিংবা জনবহুল এলাকায় গড়ে উঠেছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই সুখকর নয়। শব্দদূষণের পাশাপাশি মারাত্মক বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে এসব ওয়ার্কশপ। পথচারী, এলাকাবাসীর পাশাপাশি ওয়েল্ডিং কর্মীরাও রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অত্যাবশ্যকীয় হলেও এসব ওয়ার্কশপ জনবহুল এলাকার বাইরে নিয়ে যাওয়াই একমাত্র সমাধান।

Advertisement

রাজধানীর রাস্তায় যানবাহনের হর্ন, শব্দ ও বায়ুদূষণ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা থাকলেও যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ পরিবেশের ঠিক কতটা ক্ষতি করছে তা নিয়ে দেশে তেমন কোনো গবেষণা নেই।

সরেজমিনে রাজধানীর বাড্ডার হোসেন মার্কেট ও উত্তর বাড্ডা বাজার ঘুরে দেখা যায়, জনবহুল এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ওয়েল্ডিংয়ের ওয়ার্কশপ। এসব এলাকায় প্রচুর সংখ্যক মানুষের বসবাস। জনসাধারণ চলাচল বেশি। ভবনের উপরে আবাসিক নিচে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছে এমনটিও দেখা যায়। সাধারণ মানুষ রাস্তায় চলাচল করছে এমন রাস্তার পাশেই কাটা হচ্ছে রড। সেই রড থেকে ছিটকে আসছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাতব কণা। ওয়ার্কশপ থেকে বের হয়ে বাইরে বসে জনসাধারণের চলাচলের মধ্যেই গ্রিল তৈরিসহ বিভিন্ন কাজ করতে দেখা যায়।

বাড্ডা থেকে উত্তর বাড্ডা হয়ে শাহজাদপুরের দিকে যেতে প্রধান সড়কের দুই পাশে রয়েছে বেশ কিছু রড ও পাইপের দোকান। পাইপ বা লোহা কাটার মেশিনও মাঝে মধ্যে চলতে দেখা যায় এসব দোকানে। লোকজন চলাচলের তোয়াক্কা না করেই দোকানের কর্মীরা হুটহাট লোহার পাইপ কাটা শুরু করেন। এতে একদিকে যেমন বিকট শব্দ হয়, অন্যদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধাতব কণা ছিটকে যায় মানুষের শরীরে। এসব কণা মিশে যাচ্ছে বাতাসের সঙ্গেও।

Advertisement

মেরুল এলাকায় গিয়েও দেখা মেলে একই চিত্র। এছাড়াও খিলগাঁও, রামপুরা এলাকায়ও একই অবস্থা দেখা যায়। বংশাল এলাকায় গেলে তো কথাই নেই। রাজধানীজুড়েই অলি-গলি, ব্যস্ত সড়কের পাশে এমন ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছে। কোথাও কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও গড়ে উঠেছে এসব ওয়েল্ডিংয়ের দোকান। যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব ওয়ার্কশপের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

উত্তর বাড্ডা বাজার এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক জাগো নিউজকে জানান, মেশিনের শব্দে জানালা খোলা যায় না। গলির সঙ্গেই একটি ভবনে বসবাস করেন তিনি। তার ভবনের পাশেই একটা ওয়ার্কশপে লোহা কাটার কাজ চলে রাতদিন।

তিনি বলেন, দিনের বেলায় গাড়ির হর্নের শব্দ। গাড়ি কম থাকলেও দোকানের মেশিনের শব্দ আসে।

শাহজাদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতে লোহার পাইপ কাটছেন এক ওয়ার্কশপের কর্মী। ফুটপাতে কেন কাজ করছেন জানতে চাইলে ওই দোকানের লোকজন কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে ম্যানেজার বলেন, ‘দোকানে জায়গা কম, তাই একটু মাঝে মধ্যে দোকানের বাইরে কাজ করা লাগে। এটা কিছু না ভাই।’

Advertisement

শাহজাদপুর এলাকার মুদি দোকানি মোমেন আলী বলেন, রাস্তার মধ্যে বড় বড় লোহার পাইপ নাড়াচাড়া করে। মাঝে মধ্যে অনেক পথচারী ব্যথাও পান। আবার তারা সব সময় লোহার পাইপ কাটাকাটি করে। লোহার গুঁড়া শরীরে লাগলে ক্ষতি হয়। অনেক জোরে শব্দ হলে কানে আঙুল দিয়ে রাখতে হয়।

বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ দূষণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, শব্দদূষণের ক্ষেত্রে যে উৎসগুলো আছে, সে উৎসগুলোর মধ্যে ওয়েল্ডিং মেশিন বা লোহা কাটার মেশিনগুলো অন্যতম। এসব মেশিন থেকে কেমন শব্দ হয়, তা নিয়ে আলাদা করে আমাদের কোনো গবেষণা নেই। তবে এটা যে শব্দদূষণের একটা উৎস তা সর্বজনস্বীকৃত। তবে সাধারণভাবে যখন অন্য কোনো গবেষণার সঙ্গে ওয়েল্ডিং মেশিন বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল দূষণের পরিমাপ করি, তখন আমরা দেখি এসব মেশিনের কারণে বায়ূ ও শব্দদূষণ একসঙ্গে দুটিই হচ্ছে।

‘লোহার কাজ করার যেসব ওয়ার্কশপ আছে সেসব ওয়ার্কশপে এসব মেশিনের ঝামেলা দেখা যায়। যেখানে সেখানে যত্রতত্র এসব ওয়ার্কশপ গড়ে উঠছে। আজ পর্যন্ত মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখিনি। যারা কাজ করে তারাও স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়। যারা আশপাশে চলাচল করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারাও।

সমাধান কীভাবে হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যেভাবেই বলি না কেন এগুলো তো ইন্ডাস্ট্রি। এসবের যেমন দরকার আছে, আবার মনিটরিংয়েরও প্রয়োজন আছে। এজন্য আবাসিক এলাকায় যেসব জায়গায় এই ওয়ার্কশপগুলো গড়ে উঠেছে, সেখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নিতে হবে। তাহলেই শুধু সমাধান হতে পারে।

এমআইএস/এএসএ/জিকেএস