বিশেষ প্রতিবেদন

ছাত্রলীগ প্রতিহত করলেও ঢাবি ক্যাম্পাস ছাড়বো না

আল মেহেদী তালুকদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের রাজনীতিতে সুপরিচিত নাম। ব্যতিক্রমী সাংগঠনিক দক্ষতা ও সাহসিকতার কারণে সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কাছে আতঙ্কিত মেহেদী তালুকদার। সম্প্রতি নবগঠিত ঢাবি শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মেহেদীকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।  ঢাবি ক্যাম্পাসে অবস্থান করাসহ নানা পরিকল্পনার কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মানিক মোহাম্মদ। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো :জাগো নিউজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর অনুভূতি কি? মেহেদী তালুকদার : নিঃসন্দেহে ঢাবি দেশের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে খ্যাত ডাকসুও রয়েছে এখানে। সেই ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ায় অনেক আনন্দিত আমি। এটা আমার জীবনের স্বপ্ন ছিল। ১২/১৩ বছরের রাজনৈতিক জীবন, এখানে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ছিল। রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এর বিনিময়ে এত বড় দায়িত্ব পেয়েছি। এতে আমি অনেক আনন্দিত।জাগো নিউজ : দীর্ঘদিন ধরে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেই, এখনতো কমিটি হলো, ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে কি ভাবছেন?মেহেদী তালুকদার : ক্যাম্পাসে যেতে হলে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে যেতে হবে এমন কিছু নেই। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাতো যাবোই। আমাদের বিরুদ্ধে অছাত্র বলে ভিসির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ছাত্রলীগও এ ধরনের কথা বলতো। তবে বর্তমানে যাদেরকে দিয়ে কমিটি করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলার সুযোগ নেই। যাদেরকে দিয়ে কমিটি করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই নিয়মিত ছাত্র। তাছাড়া বাকি যারা রয়েছেন তারাও কোনো না কোনো বিভাগের সঙ্গে জড়িত। আমি নিজেও জাপান স্টাডি সেন্টারে মাস্টার্সের ছাত্র হিসেবে অধ্যয়নরত আছি। এখন আর এরকম কিছু বলার সুযোগ নেই। আমরা ঢাবির ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেই যাবো। এতে পরিকল্পনারও কিছু নেই।জাগো নিউজ : ছাত্রলীগতো বরাবরই বলে আসছে আপনাদেরকে প্রতিহত করা হবে। এক্ষেত্রে তারা বাধা দিলে আপনাদের ভূমিকা কি থাকবে?  মেহেদী তালুকদার : আমরা ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে যাবো না। বিশৃঙ্খলা করতেও যাবো না। সেখানে আমাদেরকে প্রতিহত করার প্রশ্ন কেন আসবে সেটা বুঝতে পারছি না। আমরা ক্যাম্পাসে যাবো। এখন তারা আমাদেরকে কিভাবে বরণ করে, কেমন আচরণ করে এটা তাদের বিষয়। অনৈতিক কাজ করার জন্যও ক্যাম্পাসে যাবো না। আমাদেরকে প্রতিহত করার কোনো প্রশ্ন উঠে না।জাগো নিউজ : ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে অাপনাদের অনেক কর্মী ছাত্রলীগ কর্তৃক মারধরের শিকার হয়েছেন, এরকম প্রেক্ষাপটে তারা এখনো যদি কঠোর অবস্থানে থাকেন তাহলে আপনারা কি করবেন?মেহেদী তালুকদার : ছাত্রলীগ কঠোর অবস্থানে আছে কি নাই তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের চিন্তা আমরা ঢাবির ছাত্র। ক্যাম্পাসে আমরা যাবো। আমরা যে যেই বিভাগের ছাত্র সে সেখানে যাবে। প্রতিহত করলেও আমরা ক্যাম্পাস ছাড়বো না। ছাত্রলীগ আমাদের অবস্থানের কারণে যে অবস্থানেই থাকুক না কেন ক্যাম্পাস ছেড়ে দেবো না। জাগো নিউজ : কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় অনেকের মাঝেই চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এসব বিষয় কিভাবে সমন্বয় করবেন? নিজেদের মাঝে ঐক্য সমন্বয় না থাকলেও অভ্যন্তরেই বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। মেহেদী তালুকদার : বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি নিয়ে অসন্তোষের খবর এখনো আমার কাছে অাসেনি। দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় পর ঢাবির হল কমিটি হলো। এখানে অনেকগুলো সেশন ছিল। কমিটিতে থাকার মতো অনেক বেশি প্রার্থী ছিল। সুপার টু থ্রিতে থাকা বা বিভিন্ন হলে সভাপতি-সম্পাদক হওয়ার মতো অনেকে ছিলেন। সেরকম প্রেক্ষাপটে যে কমিটি হয়েছে এখন পর্যন্ত নেতিবাচক কিছু পাইনি। এমনকি ঢাবির কোনো ছাত্রের কাছ থেকেও নেগেটিভ কোনো মন্তব্য পাইনি। আশা করছি এ ধরনের কিছু হবে না।জাগো নিউজ : ক্যাম্পাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এর অাগে ভিসি ও প্রক্টরের সঙ্গে কি আনুষ্ঠানিক কোনো আলাপ আলোচনা করবেন?  মেহেদী তালুকদার : বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরের সঙ্গে তো কথা বলবোই। তবে কমিটি হওয়ার পরই একুশে হলের কয়েকজন নেতাকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। সমস্যা হলে আলোচনা চলবে।জাগো নিউজ : ঐতিহ্যগত কারণেই কমিটি হওয়ার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আপনারা কবে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন?মেহেদী তালুকদার : এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির সঙ্গে হলগুলোতেও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এত দ্রুত সব কাজ হয়ে যাবে এটা অনেকে চিন্তাও করেনি। অপ্রত্যাশিত। তবে এজন্য সবাই অতি মাত্রায় আনন্দিত। ১০ বছর ধরে কমিটি নেই। হঠাৎ কমিটি হওয়ায় অপ্রত্যাশিতভাবে পদ পেয়েছেন বলেও মনে করছেন। অনেকে পারিবারিক কাজে ঢাকার বাইরে রয়েছেন। কমিটি হওয়ার ঘোষণায় তারা ক্রমান্বয়ে ফিরে আসছেন। সবাই একত্রিত হলে খুব শিগগিরই জিয়াউর রহমানের সমাধিতে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবো।জাগো নিউজ : ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রেক্ষাপটটা কি ছিল?মেহেদী তালুকদার : আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। জিয়াউর রহমানের প্রতি তার গভীর ভালবাসা ছিল। শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন জিয়াউর রহমানকে। মূলত বাবার কাছ থেকেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। সেই থেকেই বিএনপির প্রতি ভালোলাগা, ভালোবাসা। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর রাজনীতির সুযোগটাকে লুফে নিয়েছি।জাগো নিউজ : আগামী ১০ বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান? প্রত্যাশা কি?মেহেদী তালুকদার : চাওয়া পাওয়ার হিসেব সেভাবে কখনোই কষিনি। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি হচ্ছিল না। শুরুতে হলের দায়িত্ব পাওয়ার প্রত্যাশি ছিলাম। তখন অবশ্য হল কমিটি হয়নি। আমাদের জুনিয়র অনেকেও পদ পদবি পাননি। এরপর যারা ছিলেন তাদেরকে দিয়ে হল কমিটিগুলো করা হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি শুরুর পর কয়েকটি কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছে। কিন্তু আমি কোনো পদ নেইনি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই রাজনীতি করবো এটা আমার স্বপ্ন ছিল। সেক্ষেত্রে কমিটিতে পদ না পাওয়ায় নেগেটিভ মন্তব্যও করিনি। দলের জন্য কাজ করে গেছি। কাজ করলে মূল্যায়িত হবো সে বিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাস বাস্তবে রূপ লাভ করলো। পরবর্তীতে কোথায় যাবো সে চিন্তা নেই। তবে দলের জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় রয়েছে। দল যদি মনে করে আমাকে প্রয়োজন বা আমাকে দায়িত্ব দিলে ভালো করতে পারবো তাহলে দল দায়িত্ব দেবে।জাগো নিউজ : দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি? মেহেদী তালুকদার : বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র নেই এটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি দেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিগত সময়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী অবস্থানের কারণে বা অন্য কোনো কারণেই হোক আমরা ক্যাম্পাসে যেতে পারিনি। বিভিন্নভাবে আমরা নির্যাতিত হয়েছি। এখন অাশা করছি ঢাবি ক্যাম্পাসে আমরা যাবো। আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো।জাগো নিউজ : নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই ক্যাম্পাসে যাবেন? সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কোনো পরিকল্পনা নেই?মেহেদী তালুকদার : সাধারণ শিক্ষার্থী আর আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনো তফাত আমি দেখি না। রাজনীতিতে যেহেতু রয়েছি কিছুটা হলেও আমরা সচেতন বেশি। আমরা যেখানে আমাদের অধিকার পাইনি সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারতো অনেক দূরের কথা। ওয়ান ইলাভেনে আমরা যখন আন্দোলন করলাম, একপর্যায়ে আর্মিরা তাদের ক্যাম্প সরিয়ে নিয়ে গেলো। তারপরও কিন্তু আমাদের আন্দোলন থেমে থাকেনি। তখন আমাদের যুক্তি ছিল ঢাবির মতো জায়গায়ও যদি আর্মিরা শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দিতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আপামর জনতার উপর তারা কি নির্যাতনই না করছে! এজন্য তখন আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে গেলাম। ঠিক এমনিভাবে আমরা যদি আমাদের অধিকার আদায় করতে পারি তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় হয়ে যাবে। জাগো নিউজ : মেয়েদের হলগুলোতে কমিটি হয়নি। কবে নাগাদ কমিটি করছেন?মেহেদী তালুকদার : চলতি মাসের মধ্যেই মেয়েদের হলগুলোতে কমিটি দেয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি দ্রুতই কমিটি দিতে পারবো।জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।মেহেদী তালুকদার : আপনাকে ধন্যবাদ। জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।এমএম/জেএইচ/এমজেড/পিআর

Advertisement