আনিসুর রহমান ফারদীন চাঁদপুর সরকারি কলেজে দর্শন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তার জন্ম কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলায়। বাবা মো. আবুল বাশার, মা আনোয়ারা বেগম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
Advertisement
তিনি ৩৭তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। সম্প্রতি তার বিসিএস জয়, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?আনিসুর রহমান ফারদীন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মূলত বিসিএস পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে পারি। হলে থাকার সুবাদে অনেক বড় ভাইদের দেখেছি, যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছিলেন। তাদের দেখে অনেক ভালো লাগতো। স্বপ্ন দেখতাম, আমিও একদিন বিসিএস ক্যাডার হবো।
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?আনিসুর রহমান ফারদীন: আমি মূলত ১ম বর্ষ থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি দেশ ও বহির্বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে আপডেট থাকার জন্য সমসাময়িক বিষয় নিয়ে একটু-আধটু পড়াশোনা করতাম। ৩য় বর্ষ থেকে একাডেমিক পড়াশোনার সঙ্গে বিসিএস পরীক্ষাকে টার্গেট করে পড়াশোনা শুরু করি। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। সেটি এভারেজ পাঁচ-ছয় ঘণ্টা করে। তা ছাড়া টিউশন করাতাম নিয়মিত। সেখানে নিয়মিত গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি বিষয়গুলো চর্চা হয়ে যেত। এভাবে অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করি এবং চাকরির প্রথম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রিলি পরীক্ষায় পাস করি। পরে রিটেন, ভাইভায় উত্তীর্ণ হয়ে ৩৭তম বিসিএস থেকে (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হই। বর্তমানে প্রভাষক (দর্শন) হিসেবে চাঁদপুর সরকারি কলেজে কর্মরত।
Advertisement
জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?আনিসুর রহমান ফারদীন: আমার আজকের এতদূরে আসার পেছনে অনেকে শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে পাশে থেকেছেন। বিশেষ করে আমার ছোট কাকার অনুপ্রেরণা আমাকে আজকের অবস্থানে এনেছে। সঙ্গে ছিল বাবা-মা, ভাই-বোন, শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষগুলোর দোয়া ও ভালোবাসা।
জাগো নিউজ: নতুনরা প্রিলির জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?আনিসুর রহমান ফারদীন: ৩৫তম বিসিএস থেকে নতুন সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা হচ্ছে। তাই পিএসসির ওয়েবসাইট থেকে সিলেবাস ডাউনলোড করে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। বিসিএস পরীক্ষা মূলত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় পাস করা অন্য পরীক্ষার মতো নয়। অন্য পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট শতাংশ মার্কস পেলে হয়। কিন্তু বিসিএস পরীক্ষায় এটি নির্দিষ্ট নয়। এখানে পাস করা হলো যোগ্যদের থেকে যোগ্যতমদের বাছাই করার একটি প্রক্রিয়া। এ পরীক্ষা নেওয়া হয় মূলত কম যোগ্যদের বাদ দেওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে একজন প্রতিযোগীকে তার পরীক্ষার বিষয়গুলোর মধ্যে স্ট্রং সাইড, উইক সাইড খুঁজে বের করতে হবে। উইক সাইডে ভালো করার জন্য রুটিন করে সিলেবাস অনুসরণ করে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। সঙ্গে স্ট্রং সাইডগুলোয় চোখ বুলিয়ে যেতে হবে একটু একটু করে। পরীক্ষায় ১১০ প্লাস মার্কস নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে। তাই জানা বিষয়গুলোয় পুরো মার্কস পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বাকি বিষয়গুলোও ভালো করার জন্য জোর দিতে হবে।
জাগো নিউজ: প্রিলি পাস করার পর রিটেনের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত?আনিসুর রহমান ফারদীন: প্রিলি পাস করার পর যদি মনে হয় মার্কস ১০০ প্লাস থাকার সম্ভাবনা আছে, তাহলে সময় নষ্ট না করে রিটেনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। প্রথমদিকে গণিত ও মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান এবং ইংরেজি এমন কঠিন সাবজেক্টগুলোর দিকে ফোকাস দিতে হবে। কারণ এগুলোয় পূর্ণ নাম্বার তোলার একটি সুযোগ থাকে। যা পুরো পরীক্ষায় একজন প্রতিযোগীকে এগিয়ে রাখে। এরপর বাংলা ১ম পত্রের জন্য সাহিত্য অংশ ভালো করে পড়তে হবে। বাংলা ব্যাকরণের টপিকসগুলো আত্মস্থকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলা রিটেন অংশের জন্য ফ্রি হ্যান্ড রাইটিংয়ের চর্চা করতে হবে। বাংলাদেশ প্রশ্নের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ লেখা লিখতে হবে। সম্ভব হলে আগে থেকে প্রশ্নগুলোর উত্তরের সঙ্গে প্রয়োজন অনুসারে মানচিত্রের ব্যবহার বেশি নাম্বার প্রাপ্তিতে কাজ করবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ধারাগুলো ভালো করে দেখে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভালো করার জন্য সাম্প্রতিক বিশ্বপ্রবাহের আপডেট জানতে হবে। স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে পরীক্ষার হলে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে পত্রিকার সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
জাগো নিউজ: বিসিএস ভাইবার প্রস্তুতি কেমন হবে?আনিসুর রহমান ফারদীন: ভাইভায় কয়েকটি দিকে ফোকাস করে এগোতে হবে। প্রথম নিজের সম্পর্কে জানতে হবে ভালো করে। ভাইভায় নিজের সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। যে যত সুন্দর করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেন; বল তত নিজের কোর্টে থাকে। তা ছাড়া নিজ জেলা, ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন থাকে। সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। নিজের পঠিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। আবেদনের সময় দেওয়া ক্যাডার তালিকার পছন্দক্রম থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই নিজের পছন্দক্রমের শুরুর দিকের ক্যাডারগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা থাকতে হবে। প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে মূলত একজন পরীক্ষার্থীর সার্বিক দিক মূল্যায়ন করা হয়। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে বিনয়ের সঙ্গে স্মার্টলি জানাতে হবে যে, তা আপনার জানা নেই। তবে কোনো ভাবেই ভুলভাল অথবা মনগড়া উত্তর দেওয়া যাবে না। কারণ এমন করলে ভাইভা বোর্ডের স্যারগন আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পেতে পারেন। তা ছাড়া একজন প্রতিযোগীর প্রশ্নের উত্তর অনুযায়ী পরবর্তী প্রশ্ন পাওয়ার সুযোগ থাকে। তাই বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যাতে করে কোনো ভুল বিষয় উপস্থাপিত না হয়। অথবা নিজের সম্যক ধারণা নেই এমন কোনো বিষয় সামনে চলে না আসে, সেদিকে খেয়াল রেখে উত্তর দিতে হবে। ভাইভা বোর্ডে অনেক সময় ইংরেজিতে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। এজন্য ইংরেজিতে কথা বলার জন্য নিজের ফ্লুয়েন্সি বাড়াতে হবে। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে একজন আত্মবিশ্বাসী, সাহসী, বিনয়ী, সৎ ও জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে প্রস্তুত এমন ব্যক্তিকে বাছাই করা হয়। তাই এমন ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে আপনি নিজেকে এসব গুণের অধিকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন এবং সহজে অন্যকে প্রভাবিত করা যায়।
Advertisement
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?আনিসুর রহমান ফারদীন: আমি প্রভাষক হিসেবে বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি কলেজে কর্মরত। আমি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার আলোকে শিক্ষা দান করতে চাই। সর্বোপরি শিক্ষিত, নৈতিক, দেশপ্রেমিক জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই। অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাকে আমার শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ করে দিতে চাই। সঙ্গে চাই আমার নিজের মেধা, মনন এবং শ্রম দিয়ে দেশমাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ করতে।
এসইউ/এএসএম