মৌলভীবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। ১৯৯১ সাল থেকে টানা তিন দশক তিনিই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আসছেন। নির্বাচিতও হচ্ছেন তিনি। তার বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা যেমন দলীয় নেতারা ভাবেননি, তেমনি অনেক ভোটারও জানে না এখানে অন্য কোনো নেতা আছেন কি না!
Advertisement
তবে উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ টানা ছয়বার মনোনয়ন পাওয়া এবং নির্বাচিত হওয়ার সুযোগে স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ দলীয় নেতাদের। তবে তার দাবি, তিনি দলের নেত্রী ও জনগণের মন জয় করতে পেরেছেন বলেই মনোনয়ন এবং জয় পান।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান এমপি উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক।
মনোনয়নের বিষয়ে উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই করে যতবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি, বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। আর এটার কারিশমা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জনগণের। নেত্রী মনোনয়ন দেন এবং জনগণ ভোট দেন বলেই আমি পাস করি।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমি এবারও দলের প্রার্থী হবো, মনোনয়ন চাইবো। মনোনয়ন পাইলে নির্বাচনও করবো। আর মনোনয়ন কেন পাবো না? ছয়বার নির্বাচিত, দলের মধ্যে আস্থাভাজন, দলতো সেটা বিবেচনা করবে।’
‘এলাকার মানুষের যত ধরনের কর্মকাণ্ড, নাগরিক সুবিধা, সবই আমাদের নেতাদের পরামর্শ নিয়ে করি। একটা টিউবওয়েল দিতে হলে বলি দলের নেতাদের সুপারিশ নিয়ে এসো। একটা রাস্তা করতে হলে আমাদের নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাস করি, জনগণের কতটুকু উপকার হবে। এগুলো আমার নির্বাচনী এলাকায় কাজ করার প্রক্রিয়া।’
তবে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান বলেন, আমি গতবারও মনোনয়ন চেয়েছি। এবারও চাইবো, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের আসন। ব্যক্তিবিশেষের আসন নয়। এখানে যাকেই নৌকা দেন, পাস করবে। উনি (আবদুস শহীদ) বারবার মনোনয়ন পান এবং নির্বাচিত হন, যার কারণে একটা স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব চলে এসেছে। দলের লোকদের এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ওনার ভাইয়েরা দুর্নাম কুড়িয়েছে। বিভিন্ন মার্কেটে যে চাঁদাবাজি করছেন তাতে মানুষ অতিষ্ঠ ওনার ওপর। উনি সরকারি জায়গা দখল করছেন। এখন রাজনীতির চেয়ে নিজের সম্পত্তি বাড়াতে ব্যস্ত। অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন এমপি হওয়ার কারণেই। এ কারণে তিনি জনগণের থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন।’
Advertisement
‘মাঠে গিয়ে দেখেন, সাধারণ মানুষ কী বলে! মানুষ যদি ভালো বলে অবশ্যই আমি তাকে সমর্থন করবো। আমি কমলগঞ্জের তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান, গতবারও আমি নৌকা নিয়ে আসছি, উনি ওনার ভাই ইমতিয়াজ আহমদ বুলবুলকে নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। উনি কয়েকটি নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করেছেন। দীর্ঘদিন থাকার কারণে যেটা হয়, তাই হয়েছে ওনারও।’ দাবি করেন অধ্যাপক রফিকুর রহমান।
শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৮ নম্বর আসন মৌলভীবাজার-৪। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩০। ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪২ পুরুষ এবং ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮ জন নারী ভোটার।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়- একাদশ জাতীয় সংসদ (২০১৮) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুস শহীদ পান ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১৩ ভোট এবং বিএনপির মুজিবর রহমান চৌধুরী ৯৩ হাজার ২৯৫ ভোট।
১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।
৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির মুজিবুর রহমান চৌধুরী পান ৭৯ হাজার ৫৯৯ ভোট।
৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ পান ৯৬ হাজার ৩২৯ ভোট এবং মুজিবুর রহমান চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পান ৭০ হাজার ৩৬৪ ভোট।
৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ ৯১ হাজার ৮১১ ভোট পান। জাতীয় পার্টির আহাদ মিয়া পান ৫৯ হাজার ৮২৫ ভোট।
৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) আওয়ামী লীগের আবদুস শহীদ পান ৭৫ হাজার ৩২১ ভোট এবং জাতীয় পার্টির আহাদ মিয়া পান ৬০ হাজার ২১৫ ভোট।
এসইউজে/এএসএ/এএসএম