মতামত

ট্যানারির প্লট ব্যক্তিমালিকানায়?

সরকার যখন ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিচ্ছে তখন জানা গেল কমদামে বরাদ্দ পাওয়া প্লট মালিকরা অনেকেই তা বিক্রি করে দিয়েছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ অবস্থায় ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে প্লট মালিকরা সরকারের কাছ থেকে শর্ত সাপেক্ষে পানির দামে প্লট নিয়ে কিভাবে তা বিক্রি করে দিচ্ছেন? এগুলো কি দেখার কেউ নেই?  সহযোগী একটি দৈনিকের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাজারীবাগের ট্যানারিশিল্পের প্রতিষ্ঠাতাদের বেশির ভাগ মারা যাওয়ায় উত্তরাধিকার সূত্রে হওয়া এখনকার মালিকদের ব্যবসার কৌশল, রপ্তানি বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ ও আধুনিক মান রক্ষার (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে বিশেষ কোনো জ্ঞান নেই। অনেকের নেই সাভারে বিনিয়োগ করার মতো অর্থ। তাই তাঁরা সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে গিয়ে নতুন করে বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করতে রাজি নন। মূলত এসব কারণেই ২০০৭ সালে নামমাত্র মূল্যে জমি বরাদ্দ এবং অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েও সরকার ট্যানারি সরাতে বিশেষ কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। এ নিয়ে বিপুল সমালোচনার মুখে সম্প্রতি সরকার ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করায় গোপনে প্লট বিক্রির ঘটনা চলছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু প্লট বিক্রিও হয়ে গেছে। আরো কিছু বিক্রির চেষ্টা চলছে। এই অপতৎপরতা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। নানা কারণেই ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ট্যানারি শিল্পের বর্জ্যে নদী দূষণ হচ্ছে। মানব সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্যের থেকেও মারাত্মক এই ট্যানারির জৈব বর্জ্য। কিন্তু এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। নদী দূষণ নিয়ে এত কথা, এত লেখালেখি, পরিবেশ সংগঠনগুলোর আন্দোলন এমনকি খোদ হাইকোর্টের নির্দেশনা সত্ত্বেও তা বন্ধ হচ্ছে না। বিশেষ করে ট্যানারির বর্জ্যে নদীর মরাত্মক দূষণ হলেও এখনও তা বন্ধ হচ্ছে না। হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্প স্থানান্তরের জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও তা একযুগেও কার্যকর হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হলেও হাজারীবাগে এখনও অনেক ট্যানারি রয়েছে। আর এই ট্যানারির তরল বিষাক্ত বর্জ্য স্থানীয় জলাশয় থেকে হাজারীবাগ খাল হয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বাঁধের ভেতরের স্লুইসগেটসহ নানা পথে বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে মেশে।ট্যানারির বর্জ্য অত্যন্ত বিষাক্ত। এই বর্জ্য পানিতে মিশলে তা দেখে মনে হবে রং মেশানো পানির মতো। আর এই রঙিন পানিই দিনের পর দিন নদীতে গিয়ে পড়ে নদীর পানিকে কী পরিমাণ দূষিত করছে তা সহজেই অনুমেয়। শুধু নদী-দূষণ নয় সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণ রোধে ট্যানারি শিল্প সাভারে সরিয়ে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। যে সমস্ত প্লট মালিকরা বরাদ্দ নিয়েও এখনো কারখানা সরিয়ে নেননি তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতেই হবে, যারা প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন তাদের আনতে হবে কঠোর শাস্তির আওতায়। এক্ষেত্রে প্লট বাতিল করে প্রয়োজনে নতুন করে বরাদ্দ দিতে হবে। এ বিষয়ে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন কাম্য নয়। এইচআর/পিআর

Advertisement