জাতীয়

দিবস যায় দিবস আসে নিরাপদ হয় না সড়ক

সড়কে মৃত্যু যেন এক বিভীষিকা। আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণও থামিয়ে দেয় জীবন। প্রতিবছর দেশে গড়ে চার-পাঁচ হাজার বা এর চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় সড়কে। আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। সড়কে কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ ঝরলে কেবল সড়ক নিরাপদ করার আন্দোলন গতি পায়। চলে কর্তৃপক্ষের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস ও আশার ফুলঝুরি। তারপর স্তিমিত হয়ে যায় সব। দিবস এলেও তা পোশাকি পালনের মধ্যেই থাকে সীমাবদ্ধ । আদতে সড়ক থেকে যাচ্ছে সেই অনিরাপদ।

Advertisement

শনিবার (২২ অক্টোবর) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। চলতি বছরদিবসটির মূল প্রতিপাদ্য ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি।’ প্রতিপাদ্য ঠিক করলেও সড়ক পরিবহন আইনের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে বিধিমালা বাস্তবায়ন নেই। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীকে হারানোর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ শীর্ষক ওই আন্দোলন আরও গতি পেয়েছিল ২০১১ সালে ১৩ অগাস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরের মৃত্যুতে। এরপর ২০১৭ সালের ৫ জুন মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

দিবস কেন্দ্র করে প্রতিবছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে। এর মধ্যেই ২০১৮ সালে ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থী বাসের ধাক্কায় মারা যাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছিল দেশ। তখন সড়কে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে আইন কঠোর করার পাশাপাশি নানান আশ্বাস দিয়ে ঘরে ফেরানো গেলেও আদতে পরের বছরগুলোতেও পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি।

বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়/ফাইল ছবি

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ২৪ হাজার। বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ দশমিক ৬ শতাংশ।

সড়ক পরিবহন আইনের সীমাবদ্ধতাসড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন। এই আইনের কিছু সরল দিক থাকলেও এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে প্রচুর। যার মধ্যে অন্যতম হলো—আইনটিতে হেলমেট পরিধানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এর মানদণ্ড ও ব্যবহারবিধি আইনে অনুপস্থিত। আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান বর্ণিত থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ, এর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা, গাইডলাইন সন্নিবেশিত হয়নি, যা বাস্তবায়ন অযোগ্য। এছাড়া যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ও শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড রেস্ট্রেইন্ট বা শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আইনটিতে সংযোজন করা হয়নি।

নিহত শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল করিম সজীব/ফাইল ছবি

রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশবাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে চলতি বছরের শুরুতে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ নামে যৌথ প্রচেষ্টার শুরু হয়। এর সদস্য সংস্থাগুলো হলো- নিরাপদ সড়ক চাই, ব্র্যাক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বুয়েট), বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ অর্থপেডিক সোসাইটি, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন এবং ইম্প্রেসিভ কমিউনিকেশন লিমিটেড।

Advertisement

রোড সেফটি কোয়াশিনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সড়ক পরিবহন বিধিমালা দ্রুত জারি ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলা হয়- ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। বহুল আলোচিত এ আইন পাস হওয়ার চার বছর পূর্ণ হলেও তা বাস্তবায়নে বিধিমালা তৈরি হয়নি। এতে সড়ক নিরাপদ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও আইনের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে সড়কে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না শৃঙ্খলা, বাড়ছে মৃত্যু

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন/ফাইল ছবি

তারা বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী মানুষের নিহত ও আহত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০১৮- এর তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। বিশ্বব্যাপী শতকরা ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যার সংখ্যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় তিনগুণ বেশি।

সড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ

>> বেপরোয়া চালনা

>> অতিরিক্ত গতি

>> অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য বোঝাই

>> হেলমেট ও সিটবেল্ট না বাঁধার প্রবণতা

>> মাদকদ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালনা

>> চালক সহকারীর সহায়তায় গাড়ি চালানো

>> যান্ত্রিক ত্রুটি

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে/ফাইল ছবি

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্যমতে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী—

>> পথচারী ও যাত্রী ৯০ শতাংশ

>> পরিবেশগত কারণ ৩০ শতাংশ

>> যান্ত্রিক ১০ শতাংশ।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত হন ৭ হাজার ৪৬৮ জন। নিহতদের মধ্যে ৮০৩ জন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ২০২০ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৪ হাজার ৯২টি। এতে নিহত হন ৪ হাজার ৯৬৯ জন ও আহত হন ৫ হাজার ৮৫ জন। ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬ হাজার ৯৫৩ জন ও আহত হন ৫ হাজার ২২৭ জন। ২০১৮ সালে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৭ হাজার ৪২৫ জন ও আহত হন ৪ হাজার ৪৩৯ জন। ২০১৭ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৩ হাজার ৩৪৯টি। এতে নিহত হন ৭ হাজার ৯০৮ জন ও আহত হন ৫ হাজার ৬৪৫ জন।

ফাইল ছবি

আরও পড়ুন: ৯ বছরে ২৯ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৫০ হাজার

আর ২০১২ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনা ছিল ৩ হাজার ৩৩৩টি। এতে নিহত হন ১৮ হাজার ১১৫ জন ও আহত হন ৫ হাজার ৮৬০ জন।

গাড়ি বেশি, চালক কমসড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি ও চালকের অনুপাতের ব্যবধান বেড়ে যাওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে জানা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৪টি। তার মধ্যে বাসের সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৩৯টি। নিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩১টি। এসব গাড়ির বিপরীতে চালকের লাইসেন্স প্রায় ৩০ লাখ। ফলে অনেক গাড়ি লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক চালাচ্ছে বলে তা দুর্ঘটনায় ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুন: ‘আজকে লাখ লাখ ইলিয়াস কাঞ্চন রাস্তায়’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মানুষের মৃত্যু, পঙ্গুত্ব ও অসুস্থতা এবং সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি লাঘবের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও এর সদস্যভুক্ত প্রায় প্রতিটি দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা শতকরা ৫০ শতাংশ কমাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩ দশমিক ৬ অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করা। গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ নিশ্চিত করতে কার্যকর কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সেগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা।

তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস/ফাইল ছবি

বিআরটিএ বলছে, বর্তমান সরকার তার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় এর সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কার্যকর উদ্যোগ।

সম্প্রতি চালকদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও মাদক ব্যবহারের ক্ষতি সংক্রান্ত এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, দেশের বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা স্বাস্থ্যসচেতন নন। চালকদের ‘চোখের সমস্যা’ সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ। একজন প্রশিক্ষিত ও মাদকমুক্ত চালক নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে পারেন।

আরও পড়ুন: ‘যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছিলাম, তা বাস্তবায়ন হতে দেখিনি’

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২২ উপলক্ষে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বিধিমালা এখনো তৈরি করা হয়নি বাস্তবায়ন দূরের কথা। পরিবহন সেক্টরে প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছি। এই দীর্ঘ সময়ে আমার যে অভিজ্ঞতা তাতে দেখা যায়- পরিবহন সেক্টর যারা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে ‘পরিবহন এক্সপার্ট’ নেই। আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতা ও বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতির কারণে পিছিয়ে আছে।

তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর/ফাইল ছবি

তিনি বলেন, কোনো একটি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে আপনি দায়িত্ব দিলেন। হয়তো তিনি তিন বছর কাজ করে তার একটি ভালো অভিজ্ঞতা হলো। তার অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর মৎস্য মন্ত্রণালয়ে তাকে বদলি করলেন। সুতরাং, তিনি গাড়ির অভিজ্ঞতা নিয়ে তাকে মাছ চাষের অভিজ্ঞতায় ব্যস্ত হয়ে যেতে হয়।

নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন জাগো নিউজকে বলেন, চার বছরেও সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা তৈরি হয়নি। একটি গোষ্ঠী শুরু থেকেই আইনটিকে দুর্বল করতে চাচ্ছে। আইন সংশোধনের দাবিতে তারা আন্দোলনও করেছে। আইনটি কার্যকর করতে হলে দ্রুত বিধিমালা করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের রোড সেফটি প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী শারমিন রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে আমাদের প্রত্যাশিত লক্ষ্যে এখনো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। আইনের দুর্বল দিক, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া, উপযুক্ত আইন প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের বাধা, সরকারের সদিচ্ছা ও আমাদের সচেতনতার অভাবের কারণে সড়ক দুর্ঘটনারোধ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, দেশের যে কোনো উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমি অন্যতম ও অনস্বীকার্য। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়নে গণমাধ্যম যেভাবে এগিয়ে এসেছিল ঠিক একইভাবে গণমাধ্যম এগিয়ে এলে বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন হবে।

ফাইল ছবি

আরও পড়ুন: কাউকে খুন করার সহজ উপায় গাড়িচাপা : ক্যাথরিন মাসুদ

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে বর্তমান যে আইনটি আছে তার অনেক দুর্বল দিক রয়েছে। ফলে এর সঠিক বাস্তবায়ন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আবার যাও বাস্তবায়ন করা সম্ভব তাও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এ সংক্রান্ত বিধিমালা এখনো পর্যন্ত প্রণয়ন হয়নি। বর্তমান সড়ক দুর্ঘটনার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আইনে দুর্বল দিকগুলো নিরসন করা দরকার। আর এই মুহূর্তে বর্তমান আইনের বিধিমালা দ্রুত প্রণয়ন একান্ত জরুরি।

আরও পড়ুন: নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ৪ বছর

বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এ লাইসেন্সের পয়েন্টের কথা বলা হলেও পয়েন্ট কীভাবে কাটবে সেটি স্পষ্ট নেই। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া গাড়ি থামানো যাবে না বলা হলেও সেই নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করা নেই। নিয়োগপত্রবিহীন যদি কোনো চালক থেকে থাকেন সেক্ষেত্রে মালিককে শাস্তি দেওয়া হবে- এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা নেই।

তিনি বলেন, আইনে কিছু বিষয় স্পষ্ট হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। সেটি বিধিমালাতে হয়তো হতে পারে। যেমন- গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো গাইডলাইন আমাদের নেই। ফলে যে যার মতো করে গতিসীমা বসিয়ে দিচ্ছি। গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য গাইডলাইন প্রয়োজন। এছাড়া হেলমেটের কথা বলা হলেও এর মানদণ্ডের কোনো কথা বলা হয়নি। চালকের ক্ষেত্রে সিলবেল্টের কথা বলা হলেও যাত্রীদের জন্য সিলবেল্ট জরুরি- এই কথাটা উল্লেখ নেই। সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের চার বছর হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।

টিটি/এএসএ/এএসএম