ফেনী সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করা ইয়াসিন রুমন প্রায় ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১৯ সালে রাজধানীর গুলশানে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি দ্য প্রপার্টি পার্ক লিমিটেড স্থাপন করেন। এ ছাড়াও তিনি বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডে সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। এমনকি রূপায়ন গ্রুপ, প্রতীক গ্রুপ ও অ্যাসিউর গ্রুপ অব কোম্পানিতে কাজ করারও অভিজ্ঞতা আছে তার।
Advertisement
নিজের প্রতিষ্ঠান স্থাপনের গল্প ও কর্মী নিয়োগের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিচার লেখক মোহাম্মদ রায়হান—
জাগো নিউজ: প্রথমেই আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সংক্ষেপে জানতে চাই—ইয়াসিন রুমন: বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোতে সিনিয়র পজিশনে ১০ বছর চাকরির পর আবাসন সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করি। ঢাকায় নাগরিকদের বাসস্থান সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ২০১৯ সাল থেকে দ্য প্রপার্টি পার্ক লিমিটেড কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের সেবাগুলো হচ্ছে—প্রপার্টি বায়িং, সেলিং, রেইন্টিং, হোম শিফটিং, প্রপার্টি রেনোভেশন ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন, লিগাল সলিউশন, প্রপার্টি কেনা বা বিক্রি বিষয়ে কাস্টমার বা বিনিয়োগকারীদের কনসালটেন্সি ও সঠিক গাইডলাইন প্রদানসহ প্রপার্টি সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে আন্তরিক সেবা দেওয়া। আমার কোম্পানি বিগত চার বছর কোনো মিডিয়েটর হিসেবে কাজ করে না। আমরা অভিজ্ঞ পরামর্শক ও কম সময়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করছি।
জাগো নিউজ: আপনার প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে?ইয়াসিন রুমন: আমার প্রতিষ্ঠানে রিসিপশন, কল সেন্টার, অ্যাকাউন্ট সেকশন, মার্কেটিং, সেলস, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এবং আইটি বিভাগে কাজ করার সুযোগ আছে। শুধু তাই নয়, কনসালটেন্সি সার্ভিসগুলোয় রিয়েল এস্টেট সেক্টরে কাজ শেখার জন্য ইন্টার্নশিপ করারও সুযোগ আছে।
Advertisement
জাগো নিউজ: আপনার কর্মীরা কেমন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন?ইয়াসিন রুমন: আমার কর্মীরা মাসিক বেতন ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে স্পেশ্যাল ট্রেনিং, সেলস ইনসেন্টিভ, বাৎসরিক বিভিন্ন সরকারি ছুটি ওভারটাইম সুবিধা পেয়ে থাকেন।
জাগো নিউজ: কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য দিয়ে থাকেন?ইয়াসিন রুমন: যে কোনো কর্মী নিয়োগে সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিই—প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কতটুকু আগ্রহ আছে। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে তার একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, সুন্দর হাতের লেখা, দক্ষতা ও জ্ঞান যাচাই করা হয়। এরপর সাত দিনের ট্রায়াল সেশনের মাধ্যমে সহকর্মীদের প্রতি তার আচরণবোধ, শিক্ষার কোনো একটি বিষয় আয়ত্ত করার মানসিকতা, সুশিক্ষিত ও দায়িত্বশীল পরিবার, সততা, কম্পিউটার বিষয়ক জ্ঞান, স্মার্টনেস, সুন্দর বাচনভঙ্গি, সাবলীল উচ্চারণ—এসব সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
জাগো নিউজ: কর্মী বাছাইয়ে প্রার্থীর কোন কোন বিষয়ে ঘাটতি আছে বলে মনে হয়?ইয়াসিন রুমন: আমি বেশিরভাগ সময় দেখেছি, তারা দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হন। যেমন কম্পিউটার নলেজ তার আছে কিন্তু কমিউনিকেশন স্কিলের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হন। তারা চিন্তা করেন যে, সকালে অফিসে আসা আর সন্ধ্যায় বাসায় যাওয়া। মাস গেলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন—এটি দিয়ে তারা সবকিছুকে যাচাই করেন। ব্যাপারগুলো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কোম্পানির জন্য উদার হয়ে নিজের উন্নতির জন্য এবং কোম্পানির স্বার্থে নিজেকে তুলে ধরতে হবে। বর্তমানে তরুণরা সেলফ ডেভেলপমেন্টের চেয়ে গুরুত্ব দেয় একটি ভালো চাকরি, ভালো স্যালারি, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি। কিন্তু তার আগে প্রয়োজন আত্মোন্নতি। চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখেছি, ভালো করে একটি মেইল লিখতে পারেন না, ক্যালকুলেশনে ভুল করেন, হাতের লেখা অসুন্দর কিংবা কম্পিউটার স্কিলে ঘাটতি।
জাগো নিউজ: কর্মী হিসেবে যোগদানের আগে কোন কোন বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত?ইয়াসিন রুমন: কোনো কাজে যোগদানের আগে বুঝতে হবে এবং নির্ধারণ করতে হবে, তিনি কোন কাজ করে জীবনে বড় হতে চান। কোন কাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান। তাকে সেই কাজে মনোনিবেশ করা উচিত। ক্যারিয়ার শুরু করা উচিত। তাহলে তিনি সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। তিনি শীর্ষে আরোহন করতে পারবেন। সবাই সবকিছু পারেন না। সবাই সব বিষয়ে জ্ঞান রাখেন না। যিনি যে বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এবং যার আগ্রহ যে বিষয়ে থাকে; সেই বিষয়ে তাকে ক্যারিয়ারে নজর দেওয়া উচিত। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে পড়াশোনা শেষ করে নেটওয়ার্কিংয়ের গুণ থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি মেন্টাল গ্রুমিং, ফ্যামিলি সাপোর্টিং, ইংলিশ স্কিল, কম্পিউটার স্কিল, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণ ইত্যাদিতে নজর দেওয়া জরুরি।
Advertisement
জাগো নিউজ: চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?ইয়াসিন রুমন: চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কমিউনিকেশন স্কিল থাকাটা জরুরি। এ ছাড়া নিজের আগ্রহের জায়গাটা বুঝতে হবে। তার আগ্রহ যে কাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে; সেই কাজটি নিয়েই তাকে ক্যারিয়ার শুরু করতে হবে। নয়টা-পাঁচটা ভুলে তাকে উঠেপড়ে লাগতে হবে কাজকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য। যে কোনো কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে সেই কাজে শীর্ষে পৌঁছানোর জন্য যা কিছু প্রয়োজন; তা গ্রহণ করে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। তাহলে তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য মহামূল্যবান সম্পদ হিসেবে পরিণত হবেন। তার চাকরির বাজার তৈরি হবে।
আমার কোম্পানিতে যারা ইন্টার্নশিপ করতে আসেন, আমি তাদের সব সময়ই একটি বিষয়ে শেখাই—আপনি কথা বলার সময় আপনার বিপরীতের লোকটি কী চাচ্ছে, তার প্রবণতা কোন দিকে, সে অনুযায়ী কথা বলুন। ওই সময় আপনার বাচনভঙ্গী সঠিক রাখুন। আপনার স্মার্টনেস, আপনার ডিলিং অ্যাভিলিটি ইত্যাদি দেখে যেন বিপরীতের ব্যক্তিটি আপনার সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
এসইউ/এমএস