রাজনীতি

ভোটের ফ্যাক্টর ‘মন্ত্রী পরিবার’

মৌলভীবাজার-৩। জাতীয় সংসদের ২৩৭ আসন। এ আসনটিতে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছে। তবে, প্রয়াত দুই মন্ত্রী বিএনপির এম সাইফুর রহমান ও আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসীন আলীর জনপ্রিয়তা দল-মতের বাইরেও স্বীকৃত। তাদের অবর্তমানেও শক্ত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার আছে এই আসনে। যে কারণে এই আসনে ভোটের ফ্যাক্টর খোদ দুই মন্ত্রীর পরিবার। এই পারিবারিক গণ্ডির বাইরে অন্য প্রার্থী খুঁজতে গেলে সমস্যায় পড়বে দুই দলই- এমনটি মনে করেন স্থানীয় রাজনীতি সচেতনরা। স্থানীয়রা মনে করেন, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে আসনটি হাতছাড়া করেই মাশুল দিতে হবে। নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন জনপ্রিয় নেতা প্রয়াত সমাজ কল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসীন ও মেয়ে সৈয়দা সানজিদা মহসীন। পাশাপাশি বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদও আছেন মাঠে। এদিকে, বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এম সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এখানকার নির্বাচনে কখনো জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত আজিজুর রহমান বা সৈয়দ মহসীন আলী। আবার কখনো বিএনপির এম সাইফুর রহমান। বিএনপি বা আওয়ামী লীগের জোয়ারের সময় তাদের জয় হয়েছে এমনটাও নয়। বিপরীত ঘটনাও ঘটেছে। দলের বাইরেও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা ছিল তাদের। তাদের পরিবারের প্রতিও এখানকার মানুষের একটা সহানুভূতি আছে। দুই পরিবার থেকে প্রার্থী হলে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, আমি এলাকার জন্য যতটুকু করেছি, এতে আমি নিজে সন্তুষ্ট। আমার বাকি উন্নয়নকাজ সমাপ্ত করতে দলের মনোনয়ন ও জনসমর্থন চাইবো। সাবেক এমপি সৈয়দা সায়রা মহসীন জাগো নিউজকে বলেন, এলাকার মানুষের সঙ্গে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যেটা এখনো আছে। আমি সব সময়ই এলাকায় যাই। মানুষের খোঁজ-খবর রাখি। তাদের কথা শুনি। মানুষের প্রত্যাশা আমি যেন মনোনয়ন চাই, সেজন্য চাইবো।

Advertisement

যুবলীগ নেত্রী ও প্রয়াত মহসীন আলীর মেয়ে সৈয়দা সানজিদা মহসীন জাগো নিউজকে বলেন, আমার আব্বার ত্যাগ আছে দলের জন্য, আমাদের সম্পৃক্ততা আছে দলে। এখনো কাজ করছি। করোনা ও বন্যায় মানুষের পাশে ছিলাম। সে জায়গা থেকে আশা করি আমরা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ পাবো।

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক ইউনিটগুলো শক্তিশালী। নৌকা পাস করাতে পারবো ইনশাআল্লাহ। সুষ্ঠু ভোট হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ভালো, তবে নৌকা পাস করবে।

এলাকায় অবস্থান কার ভালো, বর্তমান এমপির নাকি মন্ত্রী পরিবারের? জবাবে তিনি বলেন, দুই পক্ষেরই অবস্থান ভালো। সমানে সমান। কোনো বিভাজন নেই। নৌকা যেই পায়, ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকাকে পাস করানোর জন্য কাজ করবে সবাই।

Advertisement

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (নির্দলীয়) আলাউর রহমান টিপু জাগো নিউজকে বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয় দলের শক্তিশালী প্রার্থী আছে। বর্তমানে এখানে নৌকার ভোটারই বেশি মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা বিএনপির প্রয়াত নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের এলাকা। বিএনপির কর্মী-সমর্থক বেশি ছিল। ওনার অবর্তমানে নানান কারণে চিত্র পাল্টেছে কিছুটা।

সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমানের জনপ্রিয়তা কেমন? জবাবে এই নেতা বলেন, ওনার ছেলের জনপ্রিয়তা মোটামুটি। দীর্ঘ সময় দল ক্ষমতায় না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ওনারা (বিএনপি) পিছিয়ে। তবে ভোটে কারা এগিয়ে-পিছিয়ে, এটা বোঝার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

একই আসনের রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখত জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনী কাজে আমরা পুরোদমে নামিনি। আমরা যারা আওয়ামী পরিবার তারা মোটামুটি কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো। প্রত্যেকটা ইউনিয়নে কমিটি আছে। তবে দুই মন্ত্রী পরিবারে (প্রয়াত মহসীন আলী ও এম সাইফুর রহমান) এমপি হওয়ার মতো ভালো মানুষ নেই বলে মনে করেন এই নেতা।

মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৭ নম্বর আসন মৌলভীবাজার-৩। এখানে ৩ লাখ ৯১ হাজার ২৬৮ জন ভোটার। ১ লাখ ৯৭ হাজার ১২২ পুরুষ ও ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৪৬ নারী ভোটার।

Advertisement

বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের প্রার্থী নেছার আহমদ পান ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৯ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির এম নাসের রহমান পান ১ লাখ ৪ হাজার ৫৯৫ ভোট।

১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের সৈয়দ মহসীন আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দ মহসীন আলী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২১ ভোট পান। বিএনপির এম সাইফুর রহমান ধানের শীষে পান ১ লাখ ১২ হাজার ৮৯৫ ভোট।

৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) বিএনপির এম সাইফুর রহমান পান ১ লাখ ৮ হাজার ৫১৩ ভোট ও আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান পান ৯৫ হাজার ৩১৯ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) বিএনপির এম সাইফুর রহমান ৮৪ হাজার ২৯২ ভোট পান। আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান পান ৬৩ হাজার ১৭৭ ভোট।

৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) আওয়ামী লীগের আজিজুর রহমান পান ৫৫ হাজার ৯৭৭ ভোট। জাতীয় পার্টির গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী পান ৩৮ হাজার ৫২৮ ভোট।

এসইউজে/এএসএ/জিকেএস