আন্তর্জাতিক

রাজনীতিতে লিজ ট্রাসের উত্থান-পতন

পুরো নাম মেরি এলিজাবেথ ট্রাস। ১৯৭৫ সালের ২৬ জুলাই ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন কেনেথ এবং প্রিসিলা মেরি ট্রাসের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই পরিচিত ছিলেন এলিজাবেথ নামে। ট্রাসের বয়স যখন চার বছর তখন তার পরিবার স্কটল্যান্ডে চলে আসে।

Advertisement

ট্রাসের বাবা ছিলেন গণিতের শিক্ষক এবং মা নার্স। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেন। এরপর নামেন রাজনীতিতে।

ট্রাস প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ২০১০ সালে। তিনি প্রাথমিকভাবে ব্রেক্সিট অর্থাৎ যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। পরে ব্রেক্সিটের নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হওয়া বরিস জনসনকে সমর্থন করেন ট্রাস।

রাজতন্ত্রবিরোধী বক্তব্য দিয়ে লিব ডেম সম্মেলনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল কিশোরী ট্রাস। ছবি সংগৃহীত

Advertisement

টাইমের তথ্যমতে, ২০০০ সালের গোড়ার দিকে বয়সে ১০ বছরের বড় এক কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে লিজ ট্রাসের। কিন্তু ২০১০ সালে দলটির পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে লড়ে বিজয়ী হন এবং ক্রমে দলীয় পদে আসিন হন তিনি।

২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের কনিষ্ঠতম কেন্দ্রীয় নারী মন্ত্রী হিসেবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ভার পান ট্রাস। এরপর ২০১৯ সালে দেশটির নারী ও সমতা বিষয়ক মন্ত্রী এবং ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে এবং বরিস জনসনের অধীনে মন্ত্রিসভার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন লিজ ট্রাস।

পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের প্রচারণায় লিজ ট্রাসের পরিবার। ছবি সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে সবশেষ জনসন প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন ৪৭ বছর বয়সী এ নেতা। গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাককে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন লিজ ট্রাস। ৫ সেপ্টেম্বর দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। এর মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাস।

Advertisement

নিজের পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ডাউনিং স্ট্রিট থেকে দেওয়া ভাষণে ট্রাস বলেন, যুক্তরাজ্য দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে পিছিয়ে ছিল এবং তিনি তার দলের সাহায্যে এটি পরিবর্তন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি স্বীকার করছি... যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলাম, তা দিতে পারবো না।

৬ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাগ্রহণের দিন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাস। ছবি সংগৃহীত

ট্রাস প্রশাসনের আসল সমস্যার শুরু গত ২৩ সেপ্টেম্বর। সেদিন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং বিশাল ট্যাক্স ছাড় দিয়ে মিনি-বাজেট ঘোষণার পরপরই যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক বাজারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই মতবিরোধ দেখা দেয়।

বিতর্কের মুখে গত ৩ অক্টোবর রেকর্ড ট্যাক্স ছাড়ের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছু হটেন ট্রাস ও কোয়ার্টেং। কিন্তু তাতেও সমালোচনা থামেনি। শেষপর্যন্ত গত ১৪ অক্টোবর পদত্যাগ করেন কোয়ার্টেং। তার স্থলাভিষিক্ত হন আরেক কনজারভেটিভ নেতা জেরেমি হান্ট। দায়িত্ব পেয়েই তিনি কোয়ার্টেং, তথা লিজ ট্রাসের বেশিরভাগ পরিকল্পনা বাতিল করে দেন।

এছাড়া ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে হাউজ অব কমনসে গতরাতের ভোটাভুটিতেও ব্যাপক নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়। ট্রাস চেয়েছিলেন গ্যাস উত্তোলনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে। কিন্তু পরিবেশগত ঝুঁকির আশঙ্কায় এর বিরোধিতা করেন টোরি এমপিদের একাংশ। এ নিয়ে ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি হয় পার্লামেন্টে।

এসব বিতর্কের মধ্যেই পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভারম্যান। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায় এবং শেষপর্যন্ত তিনিও সরকারপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

সূত্র: বিবিসি, টাইমকেএএ/