‘আপনারা আমাকে জানেন একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক ও রাজনীতিক হিসেবে। আমার পেশা রাজনীতি, পাশাপাশি আমি একজন ট্রেড ইউনিয়নে নেতা হিসেবে পরিচিত। আজ এক ভিন্ন আঙ্গিকে আপনাদের কাছে হাজির হয়েছি।’
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ‘জয় বাংলা ধ্বনি’ সিনেমার সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এসব কথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন দেশের জনপ্রিয় ও নন্দিত অভিনেতা, আবৃত্তিশিল্পী, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপিসহ ‘জয় বাংলা ধ্বনি’ সিনেমাটির সংশ্লিষ্ট শিল্পী কলাকুশলীরা।
শুরুতে শাজাহান খান পারিবারিক আদর্শের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমার পিতা আচমত আলী খান এবং মেজ ভাই আজিজুর রহমান খানও বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আমার পিতা আওয়ামী লীগের এমএলএ এবং তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
Advertisement
মুক্তিযুদ্ধে তার বীরোচিত ভূমিকার কারণে ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন। অন্যদিকে আমার শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ১৯৫২ সালে বরিশাল বিএম কলেজছাত্র সংসদের ভিপি হিসেবে ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে একুশে পদক প্রদান করেন।
বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার এমন একটি পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত। আমার পিতা বাল্যকাল থেকে বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ দীক্ষা দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হায়নারা আমাদের বাড়ি ঘর এবং আব্বার চেম্বার জ্বালিয়ে দেয়।
বাস ও লঞ্চ ব্যবসা ধ্বংস করে দেয়। আমি পরিবারসহ শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। আমি চলে যাই ভারতে। দেরাদুনে অস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। ‘জয় বাংলা ধ্বনি’ দিয়ে শয়তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছি।
মুক্তিযুদ্ধের কথা জানাতে গিয়ে শাজাহান খান আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে ছাত্রাবস্থায় আমরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণকালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেছি। ভারতে থাকাকালে ওখানের বাসিন্দারা আমাদের বলত ‘জয় বাংলা’র লোক।
Advertisement
যুদ্ধে বিজয় লাভ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছি। পরস্পরের সঙ্গে দেখা হলে ‘জয় বাংলা’ বলে সম্মোধন করেছি। ‘জয় বাংলা’ ছিল আমাদের প্রাণের স্লোগান। ‘জয় বাংলা’ আমাদের আবেগ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার মূলমন্ত্র, যা আমাদের হৃদয়ের গভীরে প্রথিত। ‘জয় বাংলা’ আমাদের অস্থি-মজ্জার সঙ্গে গেথে ছিল। ‘জয় বাংলা’ ছিল আমাদের রণধ্বনি।
কত বাঙালি যাদের পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে বলতো ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বল। সেইসব বীর বাঙালি পাকিস্তান জিন্দাবাদ না বলে ‘জয় বাংলা’ বলায় তাদের গুলি করে বা বেয়োনেট চার্জ করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কাল রাতে বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোস্তাক ও অন্য বিশ্বাস ঘাতক বাংলার কুলাঙ্গার জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে।
তারা বাঙালি জাতির রণধ্বনি ও জাতীয় স্লোগান প্রাণের স্লোগান ‘জয় বাংলা’কে বিসর্জন দিয়ে পাকিস্তানি ভাবধারায় পাকিস্তান জিন্দাবাদের মতো ‘বাংলাদেশ জিন্দবাদ’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করে এবং বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে পাকিস্তানি ভাবধারায় রেডিও পাকিস্তানের মতো রেডিও বাংলাদেশ নামকরণ করে। এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির শিল্পসংস্কৃতি ও বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শকে বিসর্জন দেওয়া হয়।
বর্তমানের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ঢাকাস্থ পাকিস্তান অ্যাম্বাসির মাধ্যমে পাকিস্তানের পরাজিত গোষ্ঠীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে আমরা ২০১৬ সালে শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী ও মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে ২১ দফা কর্মসূচিতে ‘জয় বাংলা’ রাষ্ট্রীয় স্লোগানের দাবি জানাই এবং ২০১৯ সালের ৮ জুলাই সব মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠন করি। ১৫ দফা কর্মসূচিতে জন্ম বাংলাকে রাষ্ট্রীয় স্লোগানের দাবি জানাই।
২০২০ সালের ১০ মার্চ মহামান্য হাইকোর্ট ঘোষণা করেছেন, ‘এখন থেকে বাংলাদেশে জাতীয় স্লোগান হবে ‘জয় বাংলা’। নিঃসন্দেহে রায়টি ঐতিহাসিক দলিল ও দিকনির্দেশক। ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের সভায় ‘জয় বাংলা’কে রাষ্ট্রীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার এই ঘোষণা বাঙালি জাতিকে উল্লসিত করেছে। নতুন করে বাঙালির হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে স্লোগানটি প্রায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তা আজ জাতীয় স্লোগান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
আমি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে ধন্যবাদ দিয়ে সংসদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করি। সংসদে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
সিনেমায় যুক্ত হওয়ার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ঢালিউডের অন্যতম চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থা এ ওয়ান টেলিমিডিয়ার কর্ণধার জয় বাংলা ধ্বনি চলচ্চিত্রের পরিচালক খ.ম খুরশীদ যাকে আমি খুশী বলে ডাকি, তার বাড়ি মাদারীপুর। সে ছোটবেলা থেকে আমার স্নেহভাজন।
তার সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ নিয়ে বহুবার আলোচনা করেছি এবং জয় বাংলাকে কীভাবে অম্লান করে রাখা যায় তা নিয়েও কথা বলেছি। সে আমার কথা শুনে উৎসাহিত হয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করে। আমি স্ক্রিপটি দেখেছি। তারপর সরকারি অনুদান পাওয়ার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে সেটি জমা দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে চলচ্চিত্রটি ২০২১-২২ অর্থবছরে চূড়ান্ত তালিকায় ১ নম্বর অবস্থান পেয়ে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত হয়।
তিনি বলেন, আরও একটা সিনেমা তৈরি হচ্ছে। আলাপ আলোচনা চলছে। আশা করছি সামনের মাসে সব কিছু বলতে পারব।
‘জয় বাংলা ধ্বনি’ ছবিটির কাহিনি লিখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খান। এই সিনেমায় তাকে একেটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করতেও দেখা যাবে।
এছাড়া ছবিটিতে রাজাকার চরিত্রে অভিনয় করবেন আসাদুজ্জামান নূর, এমপি। অন্যদিকে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করবেন নিরব ও সুনেরাহ বিনতে কামাল। আগামী ১ নভেম্বর ‘জয় বাংলা ধ্বনি‘র শুটিং শুরু হবে বলে নিশ্চিত করলেন পরিচালক খ ম খুরশীদ।
এমআই/এমএমএফ/জিকেএস