টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যেখানে লড়াই আছে। জয়ের উদযাপন আছে। পরাজয়ের বেদনা আছে। বৈশ্বিক এই প্রতিযোগিতার শুরু থেকে বাংলাদেশ নামক একটা দেশও আছে। যাদের কাপ ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু তাদের সমর্থকরা হারের বেদনা সইতে সইতে বেদনার্ত!
Advertisement
সেই কবে; পনের বছর আগে প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নিতে গিয়ে একটা জয় পেয়েছিল তারা। এরপর থেকে এদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে ‘জয়’ এক স্বপ্নঘেরা দরোজা আটা মন্দির। যেখানে ঢুকতে যে মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়, সেটা তাদের ক্রিকেটারদের অজানা! তাই বাংলাদেশের মানুষ দূর থেকে জয়ের জন্য প্রার্থনাই করে যাচ্ছেন! আর জয়ের জন্য বাইশ গজে লড়াই করবেন যারা হারতে হারতে তারা ক্লান্ত! নতুন করে তাদের জয়মন্ত্র শেখানো হচ্ছে ‘ইন্টেট’ আর ‘ইম্প্যাক্ট’ শব্দ দুটো দিয়ে।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের আগে কেন উইলিয়ামসনদের দেশে গিয়ে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট থেকে ওই জয়মন্ত্র যপতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু জয় কোথায়! বরং আরও হড়কে পড়লো বাংলাদেশ। বিপর্যয় কাটাতে দলে শুরু হলো পরীক্ষা-নীরিক্ষা। ঠিক করা গেলো না ব্যাটিং অর্ডার। বোলাররা মোটামুটি ভালো করলে ব্যাটাররা প্রতিপক্ষের স্কোর তাড়া করে টার্গেটে পৌঁছাতে পারছেন না। আবার ব্যাটাররা ভদ্রস্থগোছের একটা স্কোর দাঁড় করালে সেদিন বোলাররা সেই পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে পারছেন না। প্রয়োজনের সময় সহজ ক্যাচটাও ফেলে দিচ্ছেন ফিল্ডাররা! ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিনটা ডিপার্টমেন্ট একসঙ্গে জ্বলে উঠতে পারছে না! ফলে দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের হৃদয় জ্বলে ছারখার হচ্ছে বার বার! নিজেদের মনে প্রশ্ন জাগছে, কবে; আর কবে বাংলাদেশ জিতবে! আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরেকটা জয় উদযাপনের জন্য! ২০০৭ এ আশরাফুলের সেই বিধ্বংসী ইনিংসে জোহানসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের স্মৃতি একটা প্রজন্ম ভুলে যেতে বসেছেন। আর একটা প্রজন্ম হয়তো জানেই না! ইউটিউবে কিছু হাইলাইটস দেখে মনে হয়, হ্যাঁ বাংলাদেশও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ম্যাচ জিতেছিল! জয়ের ক্ষমতা তাহলে আমাদেরও এক সময় ছিল! যা এখন হারানো অতীত। আর আমাদের ক্রিকেটাররা পথভোলা পথিক! যারা এখন জয়ের রাস্তা খুঁজছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের যা পারফরম্যান্স তাতে সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সমালোচনার ‘শক’ সহ্য করা কঠিন। আবার এই সমালোচনাকে ইতিবাচক ভাবে দেখার ক্ষমতা তাদের আছে যাদের হৃদয়টা বড়। হার্টটা যাদের বিরাট তারা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে ওই ‘শক’টা ঠিকই সামলে নেন। ঘুরে দাঁড়ান। হারকে প্রত্যাখ্যান করেন। জয়ের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে ঝাঁপান।
Advertisement
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বোধন হয়েছে অঘটনের মধ্য দিয়ে। সেটা ক্রিকেট বিশ্বায়নের ইতিবাচক অভিঘাত। যে কারণে নামিবিয়া হারিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় স্কটল্যান্ড! আবার সেই নামিবিয়া পাত্তা পেলো না নেদারল্যান্ডসের কাছে! সব মিলিয়ে বাছাই পর্ব থেকে কোন চারটা দল কোন গ্রুপে কোন অবস্থানে থেকে উঠে আসবে চূড়ান্ত পর্বে এখনই বলা কঠিন। চূড়ান্ত পর্বে তাই আরও অনেক ‘অঘটন’ অপেক্ষা করছে কি না কে জানে!
অঘটন দিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটা তাই কঠিন হতে পারে। এক্সপার্টরা তেমনটা বলতে শুরু করেছেন। তবে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। নামিবিয়া শ্রীলঙ্কাকে হারায়, স্কটিশরা হারায় ক্যারিবীয়ানদের! ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে এগুলো বাংলাদেশের সমালোচনার জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়াছে।
নতুন কনসালটেন্ট দলে।পরীক্ষা-নীরিক্ষাও কম হলো না। দলে ক্রিকেটাররা নিজেদের জায়গা নিয়ে অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। তাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরছে। ক্রিকেট টিমগেম। এখানে ধারাবাহিক ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে একজনের সাথে আরেকজনের বোঝাপড়াটা ভালো থাকতেই হবে। দলের নতুন পুরোনো খেলোয়াড় মিলে দারুণ একটা সুখী পরিবার হয়ে উঠতে হবে। সাকিব আল হাসানের আসল যুদ্ধটা সেখানে। টিমকে মাঠের বাইরে গুছিয়ে নেওয়া। আর মাঠে আপনি আপনার পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন সেটা ঠিক করা। কীভাবে করবেন তা নিয়ে অনেকে অনেক পরামর্শ দেবেন। কিন্তু কাজটা অধিনায়ককেই করতে হয়।
দলের বিপন্ন অবস্থায় অধিনায়ককেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। সেটা সাকিবকে নতুন করে বলতে হবে না। তবে একটা কথা আবারও বলতে হচ্ছে, ক্রিকেট যে দেশের মানুষের কাছে এক ভালোবাসার নাম, তাদের হৃদয় আর হারের ব্যথায় বেদনার্ত হতে চায় না। সাকিব আর তার দল যখন জয়ের জন্য লড়াই করবেন এদেশের মানুষ তখন জয়ের জন্য প্রার্থনা করবেন।
Advertisement
লেখক: সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক, কলামিস্ট।
এইচআর/ফারুক/এমএস