আন্তর্জাতিক

আলোচনায় ইরানের ‘ শহীদ ১৩৬ বা কামিকাজে’ ড্রোন

ইউক্রেনে নতুন করে রুশ হামলায় আরও ২৫ জন নিহত ও একশ জনের মতো আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে সম্প্রতি। রাজধানী কিয়েভ বলছে, যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বড় আক্রমণাত্মক ছিল এই হামলা। গত ১০ অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের রাজধানীসহ অন্তত ১০টি অঞ্চলে রুশ হামলা শুরু হয়। বলা হচ্ছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ, এসব ঘটনায় ব্যবহার হয়েছে ইরানের তৈরি ড্রোন। ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ তুলে দেশটির ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।

Advertisement

ইউক্রেন হামলায় ব্যবহৃত এসব ড্রোন চিহ্নিত করেছে দেশটি। এগুলো মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি)-কে ইরানি শহীদ-১৩৬ অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মঘাতী অভিযান চালানো জাপানি যোদ্ধা পাইলটদের নামানুসারে এগুলোকে কামিকাজে ড্রোনও বলা হয়। ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে যে তারা একদিনে কমপক্ষে ৩৭টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। তবে রাশিয়াকে এই অস্ত্র সরবরাহ করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইরান।

কেন এসব ড্রোনকে ‘কামিকাজে’ বলা হয়?

কামিকাজে জাপানি শব্দ। যার অর্থ হলো আত্মঘাতী। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জাপানিরা একটি কৌশল ব্যবহার করতো। সেটি হলো শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে বিমানসহ আত্মঘাতী হামলা।

Advertisement

আল জাজিরার প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অ্যালেক্স গ্যাটোপোলোস বলেছেন যে এই অস্ত্রগুলো একটি অঞ্চলের ওপর ঘোরাফেরা করতে পারে হামলার স্থান শনাক্ত করার আগে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে ধ্বংস হয়ে যায়।

ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো, শত শত কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, কিন্তু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যয়বহুল। গ্যাটোপোলোস বলেন যে ‘কামিকাজে’ ড্রোন সস্তা এবং সুনির্দিষ্ট বিকল্প অস্ত্র।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া ২ হাজার চারশ কামিকাজে ড্রোন কিনেছে।

কোথা থেকে রাশিয়া পেলো এই ড্রোন?

Advertisement

ইউক্রেন বলছে যে রাশিয়া ইরান থেকে ড্রোনগুলো আমদানি করেছে, যেখানে এগুলো শহীদ-১৩৬ নামে পরিচিত, যেটিকে ‘বিশ্বাসের সাক্ষী’ বা ‘শহীদ’ হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক তেহরানকে ‘ইউক্রেনীয়দের হত্যার’ জন্য দায়ী করেছেন। তবে এ বিষয়ে ক্রেমলিন কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতিকে যুদ্ধের মূল কারণ উল্লেখ করছে ইরান। রাশিয়াকে এই অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেছে দেশটি।

গ্যাটোপোলোস বলেন যে এই ড্রোনগুলো রাশিয়ার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই কারণ মস্কো এক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছে।

কিংস কলেজ লন্ডনের একজন বিশ্লেষক সামির পুরি আল জাজিরাকে বলেছেন যে মস্কো ও তেহরানের মধ্যে কিছু এ ধরনের অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই ড্রোন কী ইউক্রেনের যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করবে?

কামিকাজে ড্রোনের দাম ক্রজ মিসাইলের চেয়ে কম, তবে এখনও এটি শস্তা নয়। একটির দাম প্রায় ২০ হাজার ডলার হতে পারে। তবে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোনের ব্যবহার ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।

পশ্চিমারা এসব ড্রোন লক্ষ্য করে গুলি করতে পারে এমন সিস্টেম কিয়েভেকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সেসব অস্ত্রের বেশিরভাগই এখনও আসেনি এবং কিছু ক্ষেত্রে, কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।

সূত্র: আল-জাজিরা

এসএনআর