বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন আজ। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই। শেখ রেহানার আদরের রাসুমণি। ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির বিখ্যাত ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন শেখ রাসেল। সময়টা ছিল লড়াই আর যুদ্ধ-উত্তেজনায় মুখর। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে চলেছে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ওই সময় পাকিস্তানজুড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডামাডোল। বঙ্গবন্ধু সেদিন ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণের জন্য চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন।
Advertisement
সেদিনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে রাসেল সম্পর্কে বড় বোন শেখ হাসিনা এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘রাসেলের জন্মের আগ মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা চাচা বাসায়। বড় ফুপু ও মেজো ফুপু মায়ের সঙ্গে। একজন ডাক্তার ও নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। আমরা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমনবার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেজো ফুপু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখব। ফুপু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুপু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড়োসড়ো হয়েছিল রাসেল।’
শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ গ্রন্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখেন, ‘আব্বা যখন ছয় দফা দিলেন তারপরই তিনি গ্রেফতার হয়ে গেলেন। রাসেলের মুখে হাসিও মুছে গেল। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে রাসেল আব্বাকে খুঁজত। রাসেল যখন কেবল হাঁটতে শিখেছে, আধো আধো কথা বলতে শিখেছে, আব্বা তখনই বন্দি হয়ে গেলেন। মা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আব্বার মামলা-মোকদ্দমা সামলাতে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। সংগঠনকে সক্রিয় রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম চালাতেও সময় দিতে হতো।’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা লিখেছেন,
‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইত না। খুবই কান্নাকাটি করত। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো। আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো, তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকত।’
Advertisement
রাসেলের কোমলমতি মনের উদাহরণ আনতে গিয়ে এই বইয়েই আরেকটি ঘটনারও উল্লেখ করে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘মা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। রাসেলকে কোলে নিয়ে নিচে যেতেন এবং নিজের হাতে খাবার দিতেন কবুতরদের। হাঁটতে শেখার পর থেকেই রাসেল কবুতরের পেছনে ছুটতো, নিজ হাতে ওদের খাবার দিত। আমাদের গ্রামের বাড়িতেও কবুতর ছিল। কবুতরের মাংস সবাই খেত। ...রাসেলকে কবুতরের মাংস দেওয়া হলে খেত না। ওকে ওই মাংস খাওয়াতে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছি। ওর মুখের কাছে নিয়ে গেছি, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ওই বয়সে ও কী করে বুঝতে পারতো যে, ওকে পালিত কবুতরের মাংস দেওয়া হয়েছে!’
ছোট ভাই রাসেল সম্পর্কে একই গ্রন্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও লেখেন, ‘রাসেল আব্বাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করত। আব্বাকে মোটেই ছাড়তে চাইত না। যেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব আব্বা ওকে নিয়ে যেতেন। মা ওর জন্য প্রিন্স স্যুট বানিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ, আব্বা প্রিন্স স্যুট যেদিন পরতেন সেদিন রাসেলও পরত। কাপড়-চোপড়ের ব্যাপারে ছোটবেলা থেকেই তার নিজের পছন্দ ছিল। তবে একবার একটা জিনিস পছন্দ হলে তা আর ছাড়তে চাইত না। ওর নিজের একটা আলাদা ব্যক্তিত্ব ছিল। নিজের পছন্দের ওপর খুব আস্থা ছিল। স্বাধীন মত নিয়ে চলতে চাইত। ছোট মানুষটার চরিত্রের দৃঢ়তা দেখে অবাক হতে হতো। বড় হলে সে যে বিশেষ একটা মানুষ হবে তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না।’
রাসেলের বেড়ে ওঠার স্মৃতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, “রাসেলের সবকিছুতেই যেন ছিল ব্যতিক্রম। ও যে অত্যন্ত মেধাবী তার প্রমাণ অনেকভাবেই আমরা পেয়েছি। আমাকে হাসুপা বলে ডাকতো। কামাল ও জামালকে ভাই বলতো আর রেহানাকে আপু। কামাল ও জামালের নাম কখনও বলতো না। আমরা নাম বলা শেখাতে অনেক চেষ্টা করতাম। কিন্তু ও মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে বলতো ভাই। দিনের পর দিন আমরা যখন চেষ্টা করে যাচ্ছি, একদিন ও হঠাৎ করে বলেই ফেলল, ‘কামমাল’, ‘জামমাল’।”
ছোট ভাই রাসেলের প্রতি বোন শেখ রেহানার ছিল অকৃত্রিম স্নেহ ও ভালোবাসা। পিঠাপিঠি ভাইবোন হিসেবে খুনসুটিও কম হতো না দুই ভাইবোনের। ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে জার্মানিতে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে বিমানে ওঠার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রাসেল শেখ রেহানাকে জড়িয়ে ধরে রাখেন। জার্মানিতে গিয়ে শেখ রেহানা তার আদরের ভাই রাসেলকে একটি চিঠি লিখেন। চিঠিতে প্রিয় ছোট ভাইয়ের প্রতি হৃদয়ের ভেতর থেকে উচ্চারিত হয়েছে সুললিত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
Advertisement
তিনি লিখেছিলেন, ‘রাসুমণি, আজকে আমরা Triberg গিয়েছিলাম। এটা জার্মানির সবচেয়ে বড় ঝরনা। অনেক উপরে উঠেছিলাম। এদের ভাষায় বলে Wasserfalle. আজকে ব্লাক ফরেস্ট গিয়েছিলাম। ...পড়াশোনা করো। খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করবে। মা’র কথা শুনবে। তোমার জন্য খেলনা কিনব। লন্ডনের চেয়ে এখানে অনেক দাম। ছোট্ট ছোট্ট গাড়ি প্রায় দুই পাউন্ড দাম। তুমি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ও পড়াশোনা করো। ইতি রেহানা আপা।’
বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা রাসেল সম্পর্কে অন্য এক স্মৃতিচারণে বলেন, ‘শেখ রাসেল আমাদের ভালোবাসা। আব্বার সঙ্গে আমার ও রাসেলের জাপান, মস্কো ও লন্ডন বেড়ানোর সুযোগ হয়। রাষ্ট্রীয় সফর বলেই রাসেল বিদেশিদের সঙ্গে খুব সৌজন্যমূলক ব্যবহার করত। সে ছোট্ট হলেও বুঝতে পারত কোথায়, কীভাবে চলতে-শিখতে হবে। ঢাকায় ফিরে আমি যখন মা ও সবার কাছে ওর এই সুন্দর ব্যবহারের গল্প করেছি তখন সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনেছে। লন্ডনে বিখ্যাত মাদাম তুসোর মিউজিয়ামে আমরা যখন বেড়াতে যাই রাসেলের বিস্ময় আর কাটে না। আমরা দুজন আব্বার সাথে নাটোরের উত্তরা গণভবনেও গিয়েছি। রাসেল সেখানে মাছ ধরত, আমরা বাগানে ঘুরে বেড়াতাম। ঢাকার গণভবনেও রাসেল মাছদের খাবার খাওয়াত। ফুপাতো ভাই আরিফ তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তারা দুজন একই স্কুলে পড়ত এবং একসঙ্গে খেলত। টুঙ্গিপাড়ায় তাদের একটা খুদে বাহিনী ছিল, যাদের সঙ্গে খালের পানিতে সাঁতার কাটা, ফুটবল খেলায় মেতে থাকত তারা।’
রাসেল নামকরণেরও একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। বাবা শেখ মুজিব ছিলেন খুব পড়ুয়া। বঙ্গবন্ধু মাঝে মধ্যে বেগম মুজিবকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন বার্ট্রান্ড রাসেলের দার্শনিকতা। স্বামীর কাছে এসব শুনে রাসেলের ভক্ত হয়ে ওঠেন বেগম মুজিবও। তাই তাদের ছোট সন্তানের জন্মের পর নাম রাখেন রাসেল। বার্ট্রান্ড রাসেল শুধু একজন দার্শনিকই ছিলেন না। ছিলেন বিজ্ঞানীও। ছিলেন পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের একজন বড় মাপের বিশ্বনেতা। তিনি বিশ্বকে মানুষের বসবাসের জন্য সুন্দর ও শান্তিময় করার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু নিজেও ছিলেন বিশ্ব মানবতার উজ্জ্বল দ্যুতি, নিপীড়িত মানুষের বন্ধু, মুক্তিকামী মানুষের নেতা। সেই চেতনায় থেকেই বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে তাঁর সন্তানের নাম রাখা হয় রাসেল।
শিশু রাসেলের শিশুকাল কেটেছে বাবাকে ছাড়াই। বাবা রাজনৈতিক বন্দি হয়ে প্রায়ই কারাগারে থাকতেন। বাবাকে দেখতে না পেয়ে মা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করতেন রাসেল। এই কষ্ট কেবল ছোট্ট রাসেলই অনুভব করতেন না, বাবা শেখ মুজিবুর রহমানও করতেন, যা স্পষ্টত ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর লেখায়। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের পর থেকেই রাজবন্দি হিসেবে জেলে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কারাগারে দেখা করার সময় রাসেল কিছুতেই বাবাকে রেখে আসবেন না। এই দৃশ্য বঙ্গবন্ধুর খুব খারাপ লাগত। কারাগারের রোজনামচায় শেখ রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, আব্বা বাড়ি চলো। কী উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো। ও কি বুঝতে চায়! কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা।’
বঙ্গবন্ধু রাসেলকে খুব ভালোবাসতেন। সারা দিন কর্মব্যস্ততার পরও বাসায় ফিরে প্রথমেই খুঁজতেন রাসেলকে। রাসেল, রাসেল বলে ভরাট কণ্ঠে ডাকতেন। রাসেলও বাবাকে কাছে পাওয়ার জন্য, বাবার কোলে চড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকত সব সময়। বাবার ডাক শোনার সঙ্গে সঙ্গেই দৌড়ে ছুটে আসত বাবার কাছে। বাবাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরত কিংবা উঠে পড়ত কোলে। বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেন পরম আদরে। বাবার চশমাটা দারুণ লাগত তার, তাই সেটা বাবার চোখ থেকে খুলে নিজের চোখে লাগিয়ে নিতে বেশ মজা লাগত ওর। গল্প শুনতে খুবই ভালোবাসত ছোট্ট শেখ রাসেল। বাবা অবসরে থাকলেই গল্প শোনানোর জন্য আবদার জুড়ে দিত। বঙ্গবন্ধুও সময় পেলে বেশ আগ্রহ নিয়ে গল্প শোনাতেন।
ভীষণ দুরন্ত ছিলেন রাসেল। তার দুরন্তপনার সঙ্গী ছিল বাইসাইকেল। সাইকেলে করে স্কুলে যেতেন, পাড়ার আর দশজন সাধারণ ছেলের মতো। সাংবাদিক এবিএম মূসা স্মৃতিকথায় শেখ রাসেল সম্পর্কে লিখেছেন, ‘কদিন বিকেল পাঁচটার দিকে শাঁ করে ৩১ নম্বরের অপ্রশস্ত রাস্তা থেকে ৩২ নম্বরে ঢুকেই আমার সামনে একেবারে পপাতধরণিতল। গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল সদ্য শৈশবোত্তীর্ণ ছেলেটি।...অতঃপর সাইকেলে উঠে লেক পাড়ে উধাও হলো শৈশবের শেষ প্রান্তের ছোট্ট ছেলেটি।...বিকেলে লেকের পূর্বপাড়ে এমনি করে চক্কর মারত। মধ্যবর্তী ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পূর্বপ্রান্তের সাদা একটি দালান পর্যন্ত সাইকেলারোহীর দৌড়ানোর সীমানা।...এদিকে ৩২ নম্বরের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন স্নেহময়ী মা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতেন দুষ্টু ছেলেটির সাইকেল-পরিক্রমা যেন সীমাবদ্ধ থাকে।’
আসলে শেখ রাসেলের মাঝে বঙ্গবন্ধুর সব গুণেরই পূর্বাভাস ছিল। রাসেলের জ্বলজ্বলে সুতীক্ষ্ণ চোখ দুটোই বলে দেয় ওই শিশুর মাঝে ছিল ভিন্ন কিছু, আজ বেঁচে থাকলে যে ভিন্নতা বাঙালি জাতি সম্যক অনুধাবন করতে পারত। শিশু বয়সেই লক্ষ করা গেছে বঙ্গবন্ধুর মতোই ছিল তার উদার হৃদয়, ছিল মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা। অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিল রাসেল। অসাধারণ ছিল জ্ঞানবাসনা। বঙ্গবন্ধু তাকে নিয়ে সভা-সমিতিতে যেতেন, জাপান ভ্রমণের সময় তাকে সফরসঙ্গী করেছিলেন।
শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে আজ ৫৯ বছরে পা রাখতেন। ঘাতকচক্র তা হতে দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই কালরাত্রিতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকেই হত্যা করে। সেদিন হত্যা করেছে ১১ বছরের শিশু রাসেলকেও। রাসেলকে নিয়ে দুই বাংলার খ্যাতিমান কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ‘শিশুরক্ত’ কবিতায় লিখেছিলেন,
‘তুইতো গল্পের বই, খেলনা নিয়ে/সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন বয়সেতে ছিলি!তবুও পৃথিবী আজ এমন পিশাচি হলো/শিশুরক্তপানে তার গ্লানি নেই?সর্বনাশী, আমার ধিক্কার নে!/যত নামহীন শিশু যেখানেই ঝরে যায়আমি ক্ষমা চাই, আমি সভ্যতার নামে ক্ষমা চাই।
এটা সময়ের বাস্তবতা। তার চেয়ে বাস্তবতা হচ্ছে- ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে শিশু শেখ রাসেলের প্রাণ কেড়ে নেয় ঘাতকদের বুলেট। তিনি হতে পারতেন বার্ট্রান্ড রাসেলের মতোই স্বমহিমায় উজ্জ্বল, বিশ্বমানবতার প্রতীক। কিন্তু নিষ্ঠুর ঘাতকরা রাসেলের জীবনকেই কেড়ে নেয়নি, ধ্বংস করেছে তার সব অবিকশিত সম্ভাবনাও।
শেখ রাসেলের মাঝে বঙ্গবন্ধুর সব গুণেরই পূর্বাভাস ছিল। রাসেলের জ্বলজ্বলে সুতীক্ষ্ণ চোখ দুটোই বলে দেয় ওই শিশুর মাঝে ছিল ভিন্ন কিছু, আজ বেঁচে থাকলে যে ভিন্নতা বাঙালি জাতি সম্যক অনুধাবন করতে পারত। শিশু বয়সেই লক্ষ করা গেছে বঙ্গবন্ধুর মতোই ছিল তার উদার হৃদয়, ছিল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। ছিল অসাধারণ জ্ঞানবাসনা। শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে আজ হতেন পরিপূর্ণ মানুষ। ঘাতকচক্র তা হতে দেয়নি। তিনি হতে পারতেন বার্ট্রান্ড রাসেলের মতোই স্বমহিমায় উজ্জ্বল, বিশ্বমানবতার প্রতীক। কিন্তু নিষ্ঠুর ঘাতকরা রাসেলের জীবনকেই কেড়ে নেয়নি, ধ্বংস করেছে তার সব অবিকশিত সম্ভাবনাও। জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখক: সাংবাদিক।
এইচআর/ফারুক/জিকেএস