# মিটারিং সেকশনে কী খুঁজছিলেন ওই কর্মচারী?# অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন নিম্নপদস্থ কর্মচারী থেকে বড় কর্মকর্তারা# নিয়মিত পরিষ্কার করা হতো না বাল্ব পয়েন্টের ফিট
Advertisement
সম্প্রতি বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে রাষ্ট্রীয় একমাত্র জ্বালানি পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। প্রতিষ্ঠানটির মিটারিং সেকশনে আগুন লাগলেও কিছুক্ষণের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসায় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে এ ঘটনায় ইআরএল’র অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে মিটারিং তথা বাল্ব সেকশনে আগুনের ঘটনায় নিরাপত্তার প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে।
জানা গেছে, বিশেষ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কি-পয়েন্ট ইনস্টলেশন-কেপিআই) হলেও সব স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ইআরএল’র মিটারিং সেকশনে প্রবেশাধিকার রয়েছে। অনুমতি ব্যতিরেকেই যেকোনো সময় প্রবেশ করতে পারেন তারা। বেশ কিছুদিন আগের তোলা ইস্টার্ন রিফাইনারির মিটারিং সেকশনের কয়েকটি ছবি আসে জাগো নিউজের হাতে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, একজন কর্মচারী ভেতরে কী যেন খুঁজছেন। তবে ছবিতে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। এরপর ১৫ অক্টোবর আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাল্ব সেকশনটি।
এ বিষয়ে ইআরএল’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (ইন্সপেকশন অ্যান্ড সেইফটি) এ কে এম নঈমুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, শনিবার (১৫ অক্টোবর) আগুন লাগার ঘটনায় কিছু মিডিয়ায় মিটারিং সেকশন উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত এটিকে বাল্ব সেকশন বলা যেতে পারে। এখান থেকে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিশোধিত জ্বালানি সরবরাহ করা হয়।
Advertisement
বড় ক্ষতির আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস
ওই সেকশনে প্রবেশাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওখানে রেড জোন চিহ্নিত বাল্ব সেকশনে প্রবেশে কোনো বিধিনিষেধ নেই। প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী যে কেউ ওই স্থানে যেতে পারেন। তবে অপারেশনাল কিংবা মেইনটেন্যান্সের জন্য কেউ প্রবেশ করলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে নির্ধারিত কার্যাদেশের মাধ্যমে করতে হয় এবং যেতে হয়। এছাড়া অপারেশন এবং ইনস্টলেশন ডিপার্টমেন্ট এটা অপারেট করে। অপারেট করার সময় ব্লাইন্ড করার জন্য মাঝে মধ্যে তাদের সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজন হয়। সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট, ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এবং এরিয়া অথরিটি ওই স্থানে মূলত কাজ করে। তবে রেড রিবন জোনে যাদের কাজ নেই, তাদের যাওয়ার ব্যাপারে সবসময় নিরুৎসাহিত করা হয়।
আরও পড়ুন: বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলো ইস্টার্ন রিফাইনারি
আগুন লাগার কারণ কিংবা স্পটের বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত বাল্ব সেকশনে আগুন লাগেনি। বাল্ব সেকশনের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গায় গ্রাউন্ডে আগুন লাগছে। তবে আগুনের সূত্রপাতের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
Advertisement
এ দিকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইস্টার্ন রিফাইনারির মিটারিং সেকশনে আগুন লাগে। পরে ৯৯৯-এ ফোন করে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়।
রিফাইনারির মিটারিং সেকশনে প্রবেশ করছেন ওই কর্মচারী
আগুন নিয়ন্ত্রণে নেতৃত্ব দেওয়া আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া শনিবার জাগো নিউজকে বলেন, ৯৯৯-এর মাধ্যমে ১১টা ২৫ মিনিটে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আগুন লাগার খবর পাই। পরে কেইপিজেড থেকে আমাদের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ১২টা ২৫ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমরা দেখতে পেয়েছি, ইস্টার্ন রিফাইনারির মিটারিং সেকশনে আগুন লাগে। তবে আগুনের সূত্রপাতের বিষয়টি তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।
রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাতের বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। এটা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। তবে যেখানে আগুন লেগেছে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফায়ার ইনসিডেন্ট রিপোর্ট চাইলে আমরা তদন্ত করে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দেবো। স্বাভাবিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আমাদের তদন্ত করার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
এদিকে ঘটনা তদন্তে শনিবার দুপুরেই সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ইস্টার্ন রিফাইনারির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড প্লানিং) রায়হান আহমেদকে আহ্বায়ক করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। শনিবার দিবাগত রাতেই বিপিসির পরিচালকের (অপারেশন) কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।
আরও পড়ুন: ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আগুন: কারণ তদন্তে কমিটি
এ বিষয়ে রায়হান আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি শনিবার (১৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিপিসির পরিচালকের (অপারেশন অ্যান্ড প্লানিং) কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে তিনি আর কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।’
বাল্ব পয়েন্টে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের রেড রিবন জোনে প্রবেশের জন্য লাল আইডি কার্ডধারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারেন। ওখানে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কর্মচারীরা কাজ করেন। ওই বাল্ব স্টেশনে মার্কেটিং কোম্পানিগুলোতে তেল সরবরাহের জন্য পাম্পিং করার সময় কিছু তেল পড়ে। ওই সময় ব্লাইন্ড খুলতেও কিছু তেল পড়ে। কিন্তু এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। প্রথমে এমনি পরিষ্কার করার পর বালি দিয়েও পরিষ্কার করা হয়।
আগুন লাগার পর নিরাপত্তার প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে
সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার সময় স্পার্ক থেকে ড্রেনে পড়ে থাকা স্লাজে আগুন লেগে যায়। এতে ড্রেনের মাধ্যমে আগুন মিটারিং সেকশনের ফিড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সেসময় কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী অনেক ওপরে ওঠে গেলে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে ইস্টার্ন রিফাইনারির নিজস্ব ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় কেইপিজেড ফায়ার স্টেশনের চারটি ইউনিট।
আরও পড়ুন: বাড়তি এলপিজি নিয়ে বিপাকে ইস্টার্ন রিফাইনারি!
দুর্ঘটনার আগে সরেজমিনে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্ঘটনাস্থলটি প্রায় সময়ই স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় থাকতো। বাল্ব পয়েন্ট থেকে গলে পড়া তেল দীর্ঘদিন জমে নিচের ফিটে (নিচের মেঝে) কালো স্যাঁতসেঁতে অবস্থা হয়েছে। এসব তেল নালার মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত গড়াতেও দেখা যায়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইস্টার্ন রিফাইনারির এক কর্মকর্তা বলেন, বাল্ব পয়েন্টের ফিট-এ তেল পড়তে পড়তে স্তূপ হয়ে গেছে। আবার এসব তেল নালার মাধ্যমে দূর পর্যন্তও ছড়িয়েছে। ফলে দূরে আগুন লাগলেও নালায় থাকা তেলের স্তূপের মাধ্যমে তা বাল্ব সেকশনে ছড়িয়েছে।
ইকবাল হোসেন/ইএ/জিকেএস