দেশজুড়ে

২ বছর পর প্রাণ জেগেছে ছেঁউড়িয়ায়

ফকির লালন শাহের চারণভূমি ও সাধন-ভজনের তীর্থস্থান কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে তিনদিনের লালন উৎসব।

Advertisement

আধ্যাত্মিক সাধক ফকির লালন শাহের ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে বাউল-সাধুদের পাদচারণায় এখন লালনের আখড়াবাড়ি মুখর।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে আখড়াবাড়ির সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। মহামারির কারণে পরপর দুই বছর লালন মেলা স্থগিত ছিল। এবার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে উৎসবে অংশ নিতে আখড়াবাড়ি আসেন হাজারো ভক্ত-অনুসারী। ফলে সেই আগের প্রাণ ফিরে পায় ছেঁউড়িয়া।

সন্ধ্যায় উৎসবের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। উৎসবের এবারের প্রতিপাদ্য ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

Advertisement

এদিকে উৎসব উপলক্ষে কালি নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে কয়েকশ অস্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকান বসানো হয়েছে।

লালনের আখড়াবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আখড়াবাড়িতে হাজার হাজার মানুষ। কালি নদীর পাড়ে লালনমাঠে কয়েকশ অস্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকান বসেছে। কেউ সঙ্গীদের নিয়ে গাইছেন গান, কেউ বা রান্না করছেন। আবার অনেককে গাঁজা সেবন করতে দেখা যায়।

মানিক পাগল নামে এক ব্যক্তি বলেন, ছয়দিন আগে আমি এখানে এসেছি। আমি একজন লালন ভক্ত। লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে এখানে এসেছি।

সঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় আসা আরেক ভক্ত মোমিন আলী বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে গত কয়েক দিন আগে ছেঁউড়িয়ায় এসেছি। নিজেরা রান্নার ব্যবস্থা করেছি।

Advertisement

স্থানীয় চায়ের দোকানদার জালাল ও চটপটি বিক্রেতা রিপন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লালন ভক্তরা এসে জড়ো হয়েছেন। এতে আমাদের বেচাকেনা আগের তুলনায় ভালো।

লালন উৎসবের আয়োজন করেছে লালন একাডেমি। আর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এই উৎসব হচ্ছে। চলবে তিনদিন।

লালন মেলা অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই মঞ্চে লালন সংগীত হবে। সেখানে লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউল শিল্পী ও ভক্তরা গাইবেন।

লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গত দুবার লালন মেলা বন্ধ ছিল। এবার লালন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছেঁউড়িয়ায় আসতে শুরু করেছেন ভক্ত-অনুসারীরা। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বেশি মানুষের আগমন ঘটেছে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, লালন মেলা উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছেন।

লালন উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ।

ফকির লালন শাহ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে বাংলা ১২৯৭ সনের ১ কার্তিক মারা যান। পরবর্তীতে এখানে লালন মেলার আয়োজন শুরু করে লালন একাডেমি।

আল-মামুন সাগর/জেডএইচ