কৃষি ও প্রকৃতি

হাওর-বিলে শালুক কুড়ানোর এখনই সময়

চোখে পড়ল দুই কিশোরের দুরন্তপনা। সুযোগ পেয়েই নৌকা ভাসিয়ে দিলো বাড়ির পাশের বিলে। শালুক কুড়ানোর নেশায় মত্ত হয়ে অনেক দূর এসেছে। জানা গেল, ঘরে মন বসে না হাওরপাড়ের কিশোর সায়মন ও রিপনের।

Advertisement

মৌলভীবাজার জেলার কাউয়া দীঘি হাওরপাড়ের পৈতুরা গ্রামের সায়মন ও রিপন। সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সায়মন। করোনার ছোবলে দরিদ্রতার কষাঘাতে রিপনের লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটে।

ক’দিন পরেই ভাটার টানে হাওরের পানি দূরে চলে যাবে। তাই শালুক কুড়ানোর এখনই সময়। এমনটাই মনে করে তারা পড়ন্ত বিকেলে এসেছে পৈতুরার বিলে।

কথা হয় দু’জনের সঙ্গে। সাহসী রিপন নৌকা থেকে হাত বাড়িয়ে পানির নিচ থেকে শালুক তুলে আনছে। কাজের ফাঁকে রিপন জানায়, মনের আনন্দে শালুক কুড়াচ্ছে। শখের বশে তারা শালুক কুড়ায়। বাড়িতে নিয়ে মজা করে খাবে। তবে এলাকার অনেকেই শালুক তুলে বাজারে বিক্রি করে সংসার খরচের জোগান।

Advertisement

হাওরপাড়ের ধুলিজুড়া গ্রামের জাহির আলী (৭০) জাগো নিউজকে বলেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে হাওরে জলাবদ্ধতায় প্রকৃতির নিয়মে শাপলা, শালুক, সিঙরা, পারুয়াসহ কয়েক জাতের জলজ উদ্ভিদ জন্মেছে।’

শিক্ষাবিদ জিলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় এ হাওরে শতাধিক প্রজাতির উদ্ভিদ ছিল। এসবের মধ্যে অনেক এখন বিলুপ্তির পথে। যেমন- মাখনা, বুনো গোলাপ, আশহান, দুদুল, দেউরি, কাটাঝাউ, চিচরা, উপল, পাথুই, আরাইল, আগরা, বলুয়া, বালাডুমুর, পানিকলা, বনতুলসী, আমড়াই, দুধিলতাসহ অনেক জলজ উদ্ভিদ। এগুলো এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না।’

সোনালি কৈশোরের স্মৃতিচারণ করে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাওর জনপদে একটু গ্রাম্য প্রশান্তির ছোঁয়া পাওয়া যায়। ছোটবেলায় দলবেঁধে বিলের পানিতে নামা, হই-হুল্লোড় করা, সাঁতার কাটা, ভেলা বানানো, শাপলা ফুল তোলা, শালুক কুড়ানো এ রকম কত যে আনন্দ আর মজা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে শৈশব পার করেছি, তা ভাবলে শান্তি লাগে। আজকের দিনে বেশিরভাগ শিশু-কিশোরের কাছে এগুলো অজানা।’

Advertisement

আব্দুল আজিজ/এসইউ/এএসএম