রাজনীতি

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এক ডজন, আলোচনায় মিঠু-সাজু

মৌলভীবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি ও জাতীয় পার্টিও বেশ শক্তিশালী। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে টানা তিনবারের এমপি আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন। বর্তমানে তিনি মন্ত্রী। এর আগে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিও নির্বাচিত হয়েছে এখানে। জাতীয় পার্টি বর্তমানে পিছিয়ে থাকলেও বেশ চাঙা বিএনপি। আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বিভিন্ন পর্যায়ের ডজনখানেক নেতা। তবে আলোচনায় রয়েছেন নাসির উদ্দিন মিঠু ও শরিফুল হক সাজু।

Advertisement

জানা যায়, গত নির্বাচনে আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ১৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দেন। তবে মূল আলোচনায় ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন মিঠু। এ দুজনকে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরবর্তীসময়ে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান নাসির উদ্দিন মিঠু। আগামীতে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নতুন মুখ থাকলেও স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন এবাদুর রহমান চৌধুরীর বয়স হয়েছে। তাই নাসির উদ্দিন মিঠু ও শরিফুল হক সাজুর মধ্যেই হবে মূল মনোনয়ন লড়াই।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন মিঠু, কাতার বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শরিফুল হক সাজু, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ, সহ-সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী দারাদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান খসরু, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সহিদ খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র প্রভাষক ফখরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম হাসনা, বড়লেখা পৌর বিএনপির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, জুড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান আইনুল হক মিনু, জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আসকর ও কাতার প্রবাসী বিএনপি নেতা লোকমান আহমদ।

পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঢাকা মহানগরীর শেরেবাংলা নগর থানা জামায়াতের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় শিবিরের সাবেক অর্থ সম্পাদক মাওলানা আমিনুল ইসলাম এবং চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জুড়ী শাখার সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

Advertisement

এবারও মনোনয়নের জন্য চেষ্টা-তদবির করবেন তারা। তবে এবাদুর রহমানের বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনি মনোনয়ন দৌড়ে গতবারের মতো পিছিয়ে থাকবেন বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা। অধিকাংশের মুখে নাসির উদ্দিন মিঠু ও শরিফুল হক সাজুর নাম।

বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাফিজ জাগো নিউজকে বলেন, সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য দলের প্রস্তুতি রয়েছে। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্যও প্রস্তুত। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির জয় নিশ্চিত। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে নাসির উদ্দিন মিঠু ও শরিফুল হক সাজু এগিয়ে রয়েছেন।

বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান খসরু বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এ আসনে ধানের শীর্ষের জয় শতভাগ নিশ্চিত। আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। এবাদুর রহমান অসুস্থ ছিলেন। শরিফুল হক যুব নেতা, তিনি আছেন।

তবে শরিফুল হক সাজু প্রবাসী হওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনসাধারণের সঙ্গে তেমন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন তিনি। আগামীতে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নাসির উদ্দিন মিঠু জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সব সময় নির্বাচন করতে চয়। কিন্তু এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। শতভাগ নিরপেক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দল নির্বাচনে যাবে। আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সব সময় প্রস্তুত। আমরা তো সারাবছর কাজ করছি। আমাদের সাংগঠনিক কোনো ত্রুটি নেই। কিন্তু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যদি না হয় আমাদের দল নির্বাচনে যাবে না।’

Advertisement

এ আসনে ধানের শীষের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে এই নির্বাচন তো আগের দিনে ভোট শেষ হয়ে গেছে। এক ঘণ্টা মানুষ সুযোগ পেয়েছিল এই আসনে ভোট দেওয়ার জন্য। তারপরও এই আসনে আমার ৭৮ হাজার কত ভোট যেন দেখিয়েছে। আমরা শতভাগ নিশ্চিত নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ধানের শীষ এই আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, মৌলভীবাজার-১ আসনে (বড়লেখা এবং জুড়ী উপজেলা) মোট ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৯। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩৬ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩ জন।

ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের মো. শাহাব উদ্দিন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নাসির উদ্দিন মিঠু পান ৬৫ হাজার ৮৫৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন ১ লাখ ৪ হাজার ২০ ভোট পান। জাতীয় পার্টির আহমেদ রিয়াজউদ্দিন পান ৯ হাজার ৬৪৯ ভোট।

৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭০ এবং বিএনপির এবাদুর রহমান চৌধুরী ৬৯ হাজার ৬১৯ ভোট পান।

৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) বিএনপির এবাদুর রহমান চৌধুরী ৪৯ হাজার ২৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন পান ৪৭ হাজার ৫৩৯ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন ৩৩ হাজার ১৭৯ ও বিএনপির এবাদুর রহমান চৌধুরী পান ২০ হাজার ৪৭ ভোট। ৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) জাতীয় পার্টির হয়ে এবাদুর রহমান চৌধুরী লাঙল প্রতীকে ২৭ হাজার ৯০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ইমান উদ্দিন আহমেদ পান ২৭ হাজার ৫৫৮ ভোট।

এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান প্রায় কাছাকাছি। সুষ্ঠু ভোট হলে বেশ লড়াই হয়। তবে ফ্যাক্টর চা বাগানের শ্রমিকরা।

কেএইচ/এএসএ/এমএস