এক সময় দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ডিসিপ্লিন ছিল শ্যুটিং। সেই শ্যুটিং এখন হতাশার নাম। সর্বশেষ নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন ছিল রৌপ্য।
Advertisement
হতাশার মাঝেই শ্যুটিংয়ে আশার আলো জ্বালিয়েছেন কামরুন নাহার কলি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ বছর বয়সী এই শ্যুটার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে চমক দেখিয়েছেন মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে।
মিসরের কায়রোতো চলতি প্রতিযোগিতায় অল্পের জন্য ফাইনালে উঠতে পারেননি নারায়নগঞ্জের এই যুবতি। ১৩৪ জন প্রতিযোগির মধ্যে ৬২৯.২ স্কোর করে ১৪তম হয়েছেন কলি। মাত্র ০.৮ এর জন্য ফাইনালে নাম লিখিয়ে ইতিহাস করা হয়নি তার। তবে যে স্কোর তিনি করেছেন সেটা বাংলাদেশের কোন শ্যুটার আগে করতে পারেননি।
শুক্রবার রাতে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে খেলেছেন বাংলাদেশের ৬ জন শ্যুটার। এর মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স করেছেন কামরুন নাহার কলি। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক আসরেই প্রত্যাশার আলো ছড়িয়েছেন তিনি।
Advertisement
এর আগে গত জুলাইয়ে তিনি অংশ নিয়েছিলেন কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কাপে। সেখানে ৬২২.৯ স্কোর করে ৬৬ জনের মধ্যে হয়েছিলেন ৪৪তম। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম অংশ নিয়েই কলি চমকে দিয়েছেন সবাইকে।
কলির এই স্কোরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খুবই ভালো উল্লেখ করে সাবেক শ্যুটার ও কোচ শারমীন আক্তার রত্না বলেন, 'কলি যে স্কোর করেছেন এই স্কোর ধরে রাখতে পারলে যে কোন প্রতিযোগিতায়ই পদক পাওয়া সম্ভব।'
ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে দারুণ কৃতিত্ব দেখানোর পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে কামরুন নাহার কলির। 'আমার এখন লক্ষ্য সামনে যে গেমগুলো আছে সেগুলোতে ভালো করা এবং অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করা। এই স্কোর যদি ধরে রাখা যায়, যদি ৬২৯, ৬৩০ করা যায় তাহলে যে কোন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভালো কিছু করা সম্ভব। আমি সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই'- কায়রো থেকে বলেছেন কামরুন নাহার কলি।
ফাইনালে উঠলে কেবল কলির জন্যই নয়, নতুন ইতিহাস তৈরি হবে বাংলাদেশের শ্যুটিংয়ের জন্যও। প্রতিযোগিতা চলার মধ্যেই সে ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন কলি, 'আমার প্রতিটি শট যখন ভালো হচ্ছিল তখন বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল ফাইনালে উঠতে পারবো। কিন্তু দুর্ভাগ্য শেষ পর্যন্ত হয়নি।'
Advertisement
২০১৮ সালে শ্যুটিংয়ে আসেন নারায়নগঞ্জের মেয়ে কামরুন নাহার কলি। ওই বছরই আন্তঃক্লাব প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জিতেছেন তিনি। পরের বছর এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপেও স্বর্ণ জেতেন। ২০২০ ও ২০২১ সালে শ্যুটিংয়েই ছিলেন না।
বাংলাদেশ গেমসের আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়ে অংশ নেন। সেখানে কোন রেজাল্ট ছিল না। ২০২২ সালে এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রস্তুতি ছাড়াই অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন কলি। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হয়ে দুটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় খেলেছেন কায়রোতো চমক দেখানো কামরুন নাহার কলি।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভালো করতে বেশি বেশি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে কামরুন নাহার কলি জাগো নিউজকে বলেন, 'আমি নতুন। আমার অভিজ্ঞতা কম। আমার সঙ্গে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তারা সবাই আমার চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ। তাই এই স্কোর ধরে রাখতে কিংবা এর চেয়ে ভালো স্কোর করতে আমাকে আরো বেশি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে।'
প্রথম ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছেন। শুরুতে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল। প্রতিযোগিতায় নামার আগে কী ভেবেছিলেন? কায়রো থেকে কামরুন নাহার কলি বলেছেন, 'আমার লক্ষ্য ছিল নিজের সেরা স্কোর করা। প্রতিটি শট নেওয়ার আগে আমি বেস্ট করবো চিন্তা করেই নিয়েছি। আল্লাহর রহমতে আমার শটগুলো ভালো হয়েছে।'
মিসরে কলি যে স্কোর করেছেন তার চেয়ে কম স্কোর করেও সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকে ফাইনালে উঠেছিলেন রুশ শ্যুটার আনাস্তানিয়া ভেলেরিভেনা। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৬২৮.৫ স্কোর করে অষ্টম প্রতিযোগি হিসেবে তিনি খেলেছিলেন ফাইনালে।
আরআই/আইএইচএস/