মতামত

বিএনপির অবস্থান কোথায়?

জন্মের ৪৪ বছরেও দলটি পূর্ণতা পায়নি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কথাই বলছি। না হতে পারলো জাতীয়তাবাদী, না কোনো আদর্শিক অবস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে গণমুখী দল। অসুস্থ চিন্তার মানুষ ছাড়া এই দল করাটাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটা রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য থাকবে, উদ্দেশ্য থাকবে, দেশ নিয়ে উন্নত অর্থনীতি প্রণয়নে সোচ্চার থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, কিছুই তো এই দলের অনুশীলনে দেখা যায় না। এই দলের আসলে আছেটা কী? প্রয়াত সাইফুর রহমান ছাড়া এমন একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে সত্যিকার অর্থে কোনো একজন ব্যক্তি আদর্শ চরিত্রবান হতে পেরেছে কি না, তা প্রজন্মের জানা উচিত।

Advertisement

বিএনপি, রাজনৈতিক দল থেকে এখন রাজনৈতিক অপশক্তির মতো করে চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো করে আমারও জিজ্ঞাসা, এই দলের নেতাটা কে? তারেক রহমান? তিনি তো নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েও পলাতক আসামি হয়েই প্রায় এক যুগের বেশি সময় পার করে দিলেন। বুঝতে কষ্ট হয় কি তার? তিনি কি বাংলাদেশের মানুষকে বোকা মনে করেন? আমি তো তা-ই মনে করি। তিনি মনে করলেন যে, নির্দেশ দেবেন, আর তার দলের অবুঝ নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন?

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কথিত গণতন্ত্র আদায়ের জন্য তার দলের এক হাজার কর্মী জীবন দান করবেন। ইসলামের ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উগ্রবাদী জঙ্গিরা যেমন জীবন দিয়ে দেয়, তিনিও কি তেমন করেই স্বপ্ন দেখছেন? ইসলাম একটি আবেগ, সেই আবেগ ধারণ করার জন্য অনেক সময় একটি শ্রেণি দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু বিএনপির আদর্শ কী, লক্ষ্য কী, নেতার চরিত্রে কী আছে যে, মানুষ প্রাণ দেবে? আবেগ আছে? কার জন্য? বেগম খালেদা জিয়ার জন্য? তিনি নিজেও কি সুশিক্ষিত রাজনৈতিক সত্তা ছিলেন। তার কি দেশ চালানোর কোনো যোগ্যতা ছিল? তিনি কি শেখ হাসিনার মতো মেধাবী, দূরদৃষ্টিময় হয়ে তার নেতৃত্বকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন? উত্তর আসবে, না।

সূত্র বলছে, ১০ ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়া নাকি একটি সমাবেশে যোগ দিয়ে চমক দেবেন। আজ থেকে ছয় বছর আগে বিএনপির কথিত আন্দোলন ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে যেভাবে তিনি নাকি ঘর থেকে বের হয়ে নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন; সেভাবেই নাকি আবার শুরু করতে চান। আমার প্রশ্ন হলো, সেদিনও খালেদা জিয়া তার দলের কর্মসূচির নামই উচ্চারণ করতে পারেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘ডেমোক্রেসি ফর রোড মার্চ’!

Advertisement

এই তো সেদিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বিদেশের মাটিতে বললেন, এরা যে গণতন্ত্রের কথা বলে, এদের নেতা গণতন্ত্র বানান করতে জানেন তো? আসলে জানে কি না! দলের মুখপাত্র হিসেবে যারা কথা বলেন সারাদিন, কারও পক্ষ থেকে জাতীয় স্বার্থ উদ্ধারের রাজনীতি নেই। সংসদে এক নারীকে দেখি কথা বলেন। কিন্তু ঝগড়াটে মানুষটিকে সংসদে সত্যিকার অর্থে মানায় না।

বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূলে— সব জায়গায় নেতার সংকট। উপরন্তু নিজেদের দলের কোনো ফাউন্ডেশন নেই। এরপরও গুটিকয়েক মানুষ যারা এই দলের হয়ে অন্ধ হয়ে কথা বলেন, দলকানা সেই মানুষগুলো বাংলাদেশের নেতিবাচক সড়কের পথিক। তারা জাতির জনককে সম্মান করেন না। মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করেন না। বিরোধিতা করার জন্য রাজনীতির নামে আওয়ামী লীগকে রুখতে চান। অথচ বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি করে তারা একটি সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী দল হতেই পারত। পারেননি তারা।

তাদের প্রধান নেতা জিয়াউর রহমান অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, ইতিহাস তেমন সাক্ষ্যও একদিন প্রমাণ করবে বলে মনে করার সুযোগ আছে। আমার তাই প্রশ্ন, এই দলটি কারা করে? কারা এই দলের আসলে সমর্থক, রাজনীতিতে এই দলের অবস্থানই বা কি?

লেখক: রাজনীতিক ও সমাজকর্মী।

Advertisement

এইচআর/ফারুক/জিকেএস