জাতীয়

বাড়ি বাড়ি জ্বর-ডেঙ্গু

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের ব্যাপক প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব রামপুরার জাকের রোড, মোল্লাবাড়ি ও জামতলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এসব এলাকার অধিকাংশ বাড়িতেই এখন ছোট-বড় নানা বয়সের মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরই মধ্যে এই এলাকার একজন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

Advertisement

রামপুরার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জ্বরে আক্রান্ত হওয়া রোগী রয়েছেন। তবে জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন কি না সে পরীক্ষা করছেন না অনেকেই। ফার্মেসি থেকে জ্বরের সাধারণ ওষুধ এনে খাচ্ছেন তারা। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কি না সেই পরীক্ষা করাচ্ছেন খুব কম সংখ্যাক মানুষ। যারা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগেরই ডেঙ্গু পজিটিভ আসছে।

পূর্ব রামপুরা মোল্লাবাড়ির মুদি দোকানদার ইমরান বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে এবার প্রচুর মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। কিছুদিন আগে পাশের (ইমরানের দোকান থেকে অল্প দূরে) টেলিভিশন মেকারের স্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই অঞ্চলের অনেকে এখন জ্বরে আক্রান্ত।

ওই এলাকার সালামবাগ জামে সমজিদের পাশের ফার্মেসির মালিক বলেন, রামপুরার অধিকাংশ বাড়িতে এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে কখনো রামপুরায় এত ডেঙ্গুরোগী দেখা যায়নি। জ্বর আসলে যারাই পরীক্ষা করাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগের ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। তবে জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই পরীক্ষা না করে ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খাচ্ছেন।

Advertisement

জামতলার বাসিন্দা ফিরোজ বলেন, এই এলাকার প্রায় প্রতিটি বাসায় কারও না কারও ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। এ বছর প্রচুর শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। এদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমার পাশের বাসার এক শিশুকে আইসিইউতে নিতে হয়েছিল। আল্লাহর রহমতে শিশুটি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে এসেছে। কিন্তু যেভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর আসছে, তাতে এই অঞ্চলে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

জাকের রোডের বাসিন্দা মো. মামুন বলেন, পূর্ব রামপুরা জুড়েই এবার ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। চায়ের দোকান, মুদিদোকান, ফার্মেসি, কাঁচাবাজার- সব জায়গায় ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এবার এত ডেঙ্গু দেখা দিলেও মশার ওষুধ সেইভাবে ছিটাতে দেখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, রামপুরা অঞ্চলে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছি। এ অঞ্চলে বরাবরই মশার উপদ্রব আছে। আগেও কিছু কিছু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এবারের মতো এমন ভয়াবহ চিত্র আগে কখনো দেখিনি।

পূর্ব রামপুরা এলাকায় ভ্যানে ডাব বিক্রি করেন মিরাজুল ইসলাম। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় এবার ডাবের প্রচুর চাহিদা। প্রতিদিন এক ভ্যান ডাব আনি, সব বিক্রি হয়ে যায়। আগে ফলের ব্যবসা করতাম। কিন্তু এখন ফলের চাহিদা কম, ডাবের চাহিদা বেশি। তাই ডাব বিক্রি করছি। শুধু আমি না, আমার মতো অনেকেই এখন সবজি বা ফল বিক্রি বাদ দিয়ে ডাব বিক্রি করছেন। এমনকি কোনো কোনো মুদিদোকানদার দোকানের সামনে ডাব রেখে বিক্রি করছেন।

Advertisement

এদিকে, রামপুরায় এবার ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তের প্রবণতা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মো. লিয়াকত আলী। তার দাবি, রামপুরা অঞ্চলে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এতে রামপুরা অঞ্চলে মশার উপদ্রব কমেছে। কিন্তু তারপরও এত ডেঙ্গু কোথা থেকে আসছে বুঝতে পারছেন না তিনি।

জাগো নিউজকে লিয়াকত আলী বলেন, ১৪টি ফগার মেশিন দিয়ে আমরা প্রতিদিন মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি। আগে দুপুর বেলাতেও প্রচুর মশা কামড়াতো। কিন্তু ডেঙ্গুর এত প্রকোপ ছিল না। আমরা নিয়মিত ওষুধ ছিটানোর কারণে এখন মশার পরিমাণ কমে গেছে। কিন্তু এরপরও এত ডেঙ্গু কীভাবে আসছে বুঝতে পারছি না!

তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু ঢাকার বাড়ি-ঘরগুলো খুবই অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে। বড় বড় ভবনগুলোর চারপাশে ময়লা-আবর্জনা। কেউ এগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে না। ডেঙ্গুর প্রকোপ রুখতে সবাইকে সচেত হতে হবে। বাড়ির আশাপাশ পরিষ্কার করতে হবে।

মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে আপনারা কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নে কাউন্সিলর মো. লিয়াকত আলী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি। আর আমাদের মেয়র এখন অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলে আমরা বসে ঠিক করবো আর কী করা যায়।

রামপুরার অধিকাংশ বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। এরইমধ্যে একজন মারাও গেছেন- জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এমন তথ্য তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এক নারী মারা গেছেন। এখনও অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত। আগে কখনো ডেঙ্গুর এত প্রকোপ আমরা দেখিনি।

এদিকে, স্থানীয় কাউন্সিলর নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর তথ্য দিলেও বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন এখানে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। পূর্ব রামপুরা হাইস্কুলের পাশের একটি বাসার বাসিন্দা মনিরা বেগম বলেন, এই অঞ্চলে প্রচুর মশা। অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু মশা মারার ওষুধ এবার সেইভাবে ছিটাতে দেখছি না। ফগার মেশিনের শব্দও খুব একটা শোনা যায় না। মশারি টাঙানোর পরও মশার হাত থেকে রক্ষা মিলছে না। লোকমুখে শোনা যায় মাঝে মধ্যে নাকি কাউন্সিলরের বাসার আশপাশে মশার ওষুধ ছিটানো হয়।

রামপুরা প্রধান সড়কের পাশের একটি বাসার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এদিকে সপ্তাহে একদিনও মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। এই অঞ্চলে প্রচুর মশা। মশার কামড়ে অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের ভবনের একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ার দুই বাচ্চা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তারা এখন হাসপাতালে ভর্তি। ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের ভবনে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এমএএস/কেএসআর/এএসএম