দেশজুড়ে

জেলায় খোলা থাকলেও উপজেলা অফিসে ঝোলে তালা

যখন মোবাইলফোন ছিল না তখন দূর-দূরান্তে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার একমাত্র মাধ্যম ছিল টেলিফোন। সময়ের ব্যবধানে মোবাইল সহজলভ্য হওয়ায় টেলিফোনের ব্যবহার কয়েকগুণ কমেছে। এর ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের কাজকর্মও। জেলা পর্যায়ে টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কার্যালয়গুলো খোলা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয়গুলো প্রায়ই তালাবদ্ধ থাকে।

Advertisement

সম্প্রতি ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে তা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এদিকে, জেলার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কার্যালয় খোলা থাকলেও প্রথমদিন বেলা দুপুর ১২টার দিকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। একজন চলে গেছেন অফিসের কাজে অন্য উপজেলায়, অন্যজন অসুস্থতাবোধ করায় দুপুরের আগেই চলে গেছেন বাসায়। দ্বিতীয়দিন বেলা ১১টার দিকে অফিসে গিয়ে একজনকে পাওয়া গেলেও আরেকজন অসুস্থ থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অবশ্য ২৫ থেকে ৩০ মিনিট বসে থাকার পর অফিসে আসেন তিনি।

সম্প্রতি গৌরীপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসে গিয়ে প্রথমদিন দুপুরের দিকে তালা ঝুলানো দেখা যায়। ওইদিন অফিসের কাউকে না পেলেও পরদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আবারও অফিস তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তবে, কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর লুঙ্গি পরে আসেন সহকারী লাইনম্যান আব্দুর রশিদ। তিনি তাড়াহুড়ো করে নিজের বাসা থেকে চাবি এনে অফিসের তালা খোলেন। পরে অফিসে ঢুকে এলোমেলো চেয়ার-টেবিল দেখা গেলেও সেখানে বসার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পার হলেও অফিসে আসেননি লাইনম্যান মোহাম্মদ আলী। তবে, তিনি কোথায় আছেন, তা জানাতে পারেননি সহকারী লাইনম্যান আব্দুর রশিদ।

এ বিষয়ে সহকারী লাইনম্যান আব্দুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমি পাশের দোকানে ছিলাম। আপনাকে দেখেই আমি তাড়াতাড়ি করে আসছি।

Advertisement

আগের দিন কেউ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল দুপুরের দিকে অভিযোগ থাকায় সেখানে লাইন ঠিক করতে গিয়েছিলাম। আমাদের এখানে যন্ত্রপাতি সব ঠিকঠাক আছে। কোনো সমস্যা নেই। বর্তমানে আমাদের এখানে প্রায় দুইশোর মতো টেলিফোন চালু আছে। তবে, একটা সময় আমরা খুব ব্যস্ত সময় পার করেছি। এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল থাকায় কাজের তেমন চাপ নেই। অফিসে লোকজন খুব কম আসে। কিছু কিছু অভিযোগ আসে। আমরা অফিসে তালা দিয়ে সেগুলো ঠিক করে আসি।

সম্প্রতি বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ টেলিফোন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, লুঙ্গি পরে মই নিয়ে বের হচ্ছেন লাইনম্যান জয়নাল আবেদিন ও সহকারী লাইনম্যান আবুল কালাম। লাইনম্যান জয়নাল আবেদিন কাজ আছে বলে অফিসের ভেতর ঢুকতে দেননি। তবে, ভাঙা জানালা দিয়ে ভেতরে অগোছালো পরিবেশ দেখা যায়।

লাইনম্যান জয়নাল আবেদিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা দুইজন এই অফিসে কাজ করি। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব আছেন, লাইন সমস্যা হলে তিনি এসে ঠিক করেন। এছাড়া আসেন না। এখন আগের মতো কাজ নেই। কারণ, এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল। বর্তমানে সরকারি ৭০ থেকে ৮০টা টেলিফোন সচল আছে। দুই থেকে তিনটা লাইনে সমস্যা আছে।

 

ময়মনসিংহ টেলিফোন এক্সচেঞ্জের সহকারী ব্যবস্থাপক (সুইচ) মো. আব্দুল মুকিত জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা পর্যায়ের অফিসগুলোতে লাইনম্যান ও সহকারী লাইনম্যান বাইরে কাজ করেন। এজন্য অফিসে তালা দেওয়া থাকে।

Advertisement

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ টেলিফোন এক্সচেঞ্জের উপ-মহাব্যবস্থাপক হানিফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের টেলিফোন এক্সচেঞ্জে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে। এগুলো সচল আছে, কোনো সমস্যা নেই। তবে, আমাদের উপজেলা পর্যায়ের অফিসে একজন বা দুইজন করে কর্মরত আছেন। জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় অফিসগুলো বন্ধ থাকে।

এমআরআর/এএসএম