পরকালের কঠিন মুহূর্তে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পাওয়া হচ্ছে শ্রেষ্ঠ রহমত। এ কারণেই নবিজির সুপারিশ পাওয়ার জন্য আমল ও দোয়া করার বিকল্প নেই। নবিজির সুপারিশ পাওয়ার এ দোয়া ও আমল কী?
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার সুপারিশে ধন্যব্যক্তি সবচেয়ে সুখী মানুষ। আর সে হলো- যে অন্তর বা নফস থেকে ইখলাস তথা নিখাদ চিত্তে বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের উপযুক্ত কোনো সত্য উপাস্য নেই।’ (বুখারি)
যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পেতে চায় সে যেন আল্লাহ তাআলার কাছে এ দোয়াটি বেশি বেশি করে-
اَللَّهُمَّ ارْزُقْنَا شَفَاعَةَ نَبِيِّكَ
Advertisement
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মার যুক্বনা শাফাআতা নাবিয়্যিকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের তোমার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ দান কর।’
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করার পাশাপাশি তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়া-
صَلِّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّم
Advertisement
উচ্চারণ : ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’
নবিজির সুপারিশ পাওয়ার শর্ত বা আমল
১. আল্লাহর অনুমতি গ্রহণ করা
সুপারিশের জন্য প্রথমেই আল্লাহ তাআলার অনুমতি লাগবে। কোরআনে এসেছে- কে সেই ব্যক্তি যে, আল্লাহ তাআলা অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২৫৫)
২. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা
সুপারিশকারী ও যার জন্য সুপারিশ করা হবে, তাদের উভয়ের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘শুধু তাদের জন্য সুপারিশ, যাদের উপর আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ২৮)
৩. ঈমানদার হওয়া
সঠিক ঈমানের অধিকারী হওয়া আবশ্যক। কাফের-মুশরিকের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করবেন না। সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে; কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, কেউ তাদের জন্য সুপারিশ করবে, তবে তা গ্রহণ করা হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘আর সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকারে আসবে না।’ (সুরা মুদ্দাসসির : আয়াত ৪৮)
পরকালে যে সুপারিশ গ্রহণযোগ্য নয়
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর সে দিনেক ভয় কর, যে দিন একজন অন্যজন থেকে এতটুকুও উপকৃত হবে না এবং সে দিন কারও কোনো সুপারিশ গৃহীত হবে না এবং কারও কাছ থেকে কোনো বিনিময় গ্রহণযোগ্য হবে না এবং তারা কোনো প্রকার সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৪৮)
যদিও আয়াতটি বনি ইসরাইল জাতিকে উদ্দেশ্য করে নাজিল করা হয়েছে। কিন্তু বনি ইসরাইলের পাশাপাশি এ আয়াত থেকে মুসলিমরাও শিক্ষা নিতে পারে।
সুপারিশের ধরন কেমন হবে
প্রতিদান দিবসের অধিপতি হবেন আল্লাহ তাআলা। তিনি সেখানে সকল মানুষের বিচার করে আমলনামা প্রদানে ফয়সালা দিবেন। তন্মধ্যে সত্তর হাজার লোক বিনা হিসেবে জান্নাত লাভ করবে। আর বাকীরা সুপারিশের মাধ্যমে নাজাতপ্রাপ্ত হবে। প্রতিদান দিবসের এ সুপারিশ হবে দুই ধরনের। তাহলো-
১. বিশেষ সুপারিশ
> শাফাআতে কুবরা
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান সুপারিশ। হাশরের ময়দানে অবস্থানরত মানুষদের ফয়সালার জন্য তিনি সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করে তাদের মাঝে ফয়সালা দিবেন। ইহাই হলো বিশ্বনবীর ‘মাকামে মাহমুদ’।
> কিছু উম্মতের জন্য সুপারিশ
বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশেকারী মাত্র সত্তর হাজার। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুলকে বলবেন, আপনার উম্মতের মধ্য হতে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করান, যাদের কোনো হিসাব নেই।
> পাপ-পূর্ণের ভিত্তিতে সুপারিশ
যাদের পাপ এবং পূর্ন সমান সমান, তাদের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করবেন এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।
> মর্যাদার সুপারিশ
আমলের কারণে জান্নাতে মর্যাদা বাড়ানোর জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ।
> চাচার জন্য সুপারিশ
যার প্রত্যক্ষ মদদে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনা বাঁধায় সাহসের সঙ্গে ইসলামের দাওয়াত প্রচার করেছেন, সে চাচা আবু তালিবের শাস্তি কমানোর জন্য সুপারিশ করবেন।
> এরপর সব মুমিন মুসলমানের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতির জন্য সুপারিশ করবেন।
২. সাধারণ সুপারিশ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, অন্যান্য নবি-রাসুলগণ, ফেরেশতাদের, মুমিনদের এবং শহিদদের সুপারিশ। এ সুপারিশ হবে জাহান্নামে না নেওয়ার জন্য বা জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য। হাদিসে এসেছে-
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক নবির কবুল দোয়া রয়েছে। প্রত্যেক নবি তাঁদের দোয়া শেষ করে দিয়েছেন। আর আমি কিয়ামতের দিন সুপারিশের জন্য আমার দোয়াকে লুকিয়ে রেখেছি। আমার উম্মতের যে সকল মানুষ আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরিক না করে মারা গেছে তারাই এ সুপারিশ পাবে। (বুখারি ও মুসলিম)
> ফেরেশতাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘আকাশে অনেক ফেরশেতা রয়েছে। তাদের কোনো সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না, যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন।’ (সুরা নাজম : আয়াত ২৬)
> হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘একজন শহীদের সুপারিশ তার নিজ পরিবারের সত্তর জনের জন্য গ্রহণ করা হবে।’ (আবু দাউদ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, পরকালে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পেতে কোরআন সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবক জীবন পরিচালনা করা। হাদিসে নির্দেশিত আমল ও দোয়া-দরুদ বেশি বেশি পড়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস