আজকে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। পরিসংখ্যান বলে গত ৯ মাসে দেশে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। পরিবারে সদস্যরা কতটা সচেতন হচ্ছি সন্তানদের নিয়ে? নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েই বা কতটা সচেতন?
Advertisement
আমার দুটি সন্তান। তাদের বয়স ১৯+। আইডেন্টিকাল টুইন হওয়ার কারণে দুজনের বিহেইভিয়ারের মধ্যে কিছুটা সিনেম্যাটিক বিষয় আছে। তাদের বিহেইভিরিয়াল কমপ্লেক্সিটি অবাক হওয়ার বিষয় ছিল আমার কাছে। তাই ওদের সাথে সাথে আমিও বড় হচ্ছি, শিখছি। অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে আমাকে নিজের মানসিক অবস্থা, চাকরি, সংসার আবার বাচ্চাদের মানসিক আস্থার জায়গাটা দখল করতে গিয়ে।
অনেকেই মনে করে যে কেবল সন্তানদের নিয়ে বাইরে ঘোরা আর খেতে যাওয়ায়ই মনে হয় ভালো প্যারেন্ট হওয়ার মাধ্যম। একদম ভুল। এটা একটা ফর্মালিটিজ মাত্র। এই যুগের বাচ্চারা খুব বেশি সেনসিটিভ। তাদের চাহিদা আমাদের আমলের মতো ট্র্যাডিশনাল বা টিপিকাল নয়।
গুড প্যারেন্টিংয়ের অন্যতম প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে আপনাকে আপনার সন্তানের সবচেয়ে বড় আস্থা ও ভরসার জায়গা হতে হবে। তারা যেন বুঝতে পারে যে বড় কোনো ভুল করলেও আপনার কাছে স্বীকার করার মতো জায়গাটা পায়। এর মানে হচ্ছে তার সব ধরনের উত্থান-পতন বা খুশি/বিপদের সাথী হতে হবে আপনাকে।
Advertisement
ভাবছেন এটা আপনি চাইলেই হতে পারবেন? না। তারা আপনাকে তাদের প্রাইভেট স্পেইসে ঢুকতে দেবে না। এটাই আপনাকে অস্থির করে দেবে। আপনি চেষ্টা করেই যাবেন কিন্তু বুঝতেই পারবেন না যে তারা আপনাকে বিশ্বাস করছে কি করছে না। শেয়ারিংয়ের জায়গাটা তখনই তৈরি হয় যখন তারা নির্ভয় ও নির্ভার ফিল করে।
আপনাকে পিতা-মাতার জায়গা দেবে কিন্তু যদি পিতা বা মাতার অধিকার ফলাতে যান তাহলে ধরে নেবেন আপনার সন্তান দূরে চলে যাওয়ার সুযোগ খুলে দিলেন। পিতা-মাতা নয়, আপনাকে তাদের গাইড হতে হবে। অভিজ্ঞতা থেকে তাদের জীবনের চলার পথের ভালো মন্দের জ্ঞানটুকু ও সমস্যা হলে সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়ার মতো ম্যাচিউরিটি দিতে হবে।
একজন টিনএজ সন্তানের জীবনে প্রেম/ভালোবাসার মতো ঘটনা আপনার আমার মতো হবে না। তাদের প্যাটার্ন আলাদা। সেগুলো বুঝতে বা ধরতে হলে আপনাকে শিখতে হবে, আধুনিক ও অগ্রসর করতে হবে। টিপিকাল প্যারেন্টিংয়ের দিন শেষ। পার্সোনালিটি ক্ল্যাশ তৈরি হবে।
সন্তানের ভালো লাগা ও খারাপ লাগার জায়গাগুলো চিনে নিতে হবে বন্ধুর মতো। সেই অনুযায়ী তাদের গাইড করতে হবে। মনে রাখতে হবে শাসনের প্যাটার্ন পাল্টানো মাস্ট। তারা অসম্ভব পার্সোনালিটি সেনসিটিভ হয়। তাদের ব্যক্তিগত কোনো ইস্যু নিয়ে কেবল পিতামাতার দাবিতেই আপনি আপনার মতো করে ডিজাইন করতে যাবেন, হবে না।
Advertisement
সবার আগে নিজেকে পাল্টানোর মতো মানসিকতা রাখতে হবে। তবে আরেকটা জরুরি কথা হচ্ছে, সন্তানরা কিন্তু আপনাকেও নিজের লাইফ নিয়ে সুখী দেখতে চায়। তারা কখনই চায় না তাদের পিতা-মাতা কেবল সন্তানের জন্য নিজের চাওয়া পাওয়াকে বিসর্জন দিয়ে তাদের জন্য মানসিক দায় তৈরি করবে।
ব্যক্তিগত সচেতনতা দিয়ে এগুলো শিখছি। সন্তানের কাছ থেকে যেমন শেখার আছে ঠিক তেমনি নিজের শিক্ষাকে সন্তানদের পরিবর্তনের সাথে প্যাটার্ন করে আপনাকে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। কোনো কৌশলই কিন্তু ফিক্সড হয় না। সন্তানের বয়স বাড়বে আপনাকেও নিজের কৌশল ও প্যারেন্টিং স্টাইল মডিফাই করতেই হবে।
আবার আপনি নিজে যদি মানসিকভাবে প্রশান্তিতে না থাকেন তাহলে সন্তানদেরও সেটা দিতে পারবেন না। তাই নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে যেমন নজর দিতে হবে ঠিক তেমনি সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যকেও তৈরি করে দিতে হবে।
অ্যাট দ্য অ্যান্ড: নিজেকে খুশি রাখুন, সন্তানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মানুষটি হোন। সন্তান ও পিতা-মাতা মিলে বেড়ে উঠুন।
লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, কলামিস্ট।
এইচআর/এএসএম