চীন থেকে যন্ত্রাংশ এনে বিভিন্ন নামি-দামি ব্রান্ডের নকল মোবাইলফোন তৈরি করতো একটি চক্র। ওই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (উত্তর)। এসব ব্রান্ডের দেশীয় প্রস্তুতকারক ও পরিবেশকদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার অভিযান চালিয়ে মোতালেব প্লাজা ও মোতালেব টাওয়ার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
Advertisement
ডিবি জানায়, আইএমইআই নম্বর বদলে মোবাইলফোন তৈরি করার কারণে এসব ফোন ব্যবহার করে অপরাধীরা সহজেই অপরাধ করতে পারে। এতে তাদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়। এছাড়া নিয়ম না মেনে এসব মোবাইলফোন তৈরি করায় এগুলোর রেডিয়েশন তারতম্য বা নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে না। ফলে এসব মোবাইলফোন ব্যবহারকারীর চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। একই সঙ্গে এসব নকল মোবাইলফোনের জন্য সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা।
নকল মোবাইলফোন তৈরি চক্রের গ্রেফতাররা হলেন- মশিউর রহমান, সাগর হোসেন, রহমত আলী, সুজন আলী, তরিকুল ইসলাম বাবু ও মনির হোসেন। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে নকল নোকিয়া ব্রান্ডের ৩১৩টি মোবাইলফোন, স্যামসাংয়ের ২০৬টি মোবাইলফোন জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে নকল মোবাইলফোন তৈরির কাজে ব্যবহৃত একটি মেশিনসহ ফোন তৈরির বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
Advertisement
তিনি বলেন, রাজধানীর হাতিরপুর এলাকার মোতালেব প্লাজার পেছনের এক বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা হচ্ছিল নোকিয়া ও স্যামসাং ব্রান্ডের নকল ফিচার ফোন। ফাইভ পাস দুইজন মোবাইল মেরামতকারীর নেতৃত্বে ছয় জনের একটি চক্র কয়েক বছর ধরে এসব মোবাইলফোন প্রস্তুত ও বাজারজাত করে আসছিল। এসব ব্রান্ডের দেশীয় প্রস্তুতকারক ও পরিবেশকদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার অভিযান চালিয়ে মোতালেব প্লাজা ও মোতালেব টাওয়ার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এসব নকল ফোন বিক্রির কারণে সরকার ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এসব নকল মোবাইলফোন তৈরির জন্য চীন থেকে যন্ত্রপাতি কিনে আনতো চক্রটি। নষ্ট মোবাইলফোন মেরামত করার কথা বলে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হতো, যা খালাস হতো চট্টগ্রাম বন্দরে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে কোনো নিয়ম না মেনে প্রস্তুত করা হতো নোকিয়া ও স্যামসাংয়ের মতো ব্রান্ডের নকল ফোন। এসব মোবাইলফোন এক থেকে দুই মাসে নষ্ট হয়ে যেতো।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তুতকারক নিয়ম না মানায় এসব মোবাইলফোনের রেডিয়েশন তারতম্য বা নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে না। তাই এসব ফোন ব্যবহারকারীর চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। এসব মোবাইলফোন বিস্ফোরণের সম্ভাবনাও থাকে। এছাড়া আইএমইআই নম্বর বদলে মোবাইলফোন তৈরি করার কারণে এসব ফোন ব্যবহার করে অপরাধীরা সহজেই অপরাধ করতে পারে। এতে তাদের চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, চক্রটি পাঁচ-ছয় বছর ধরে এই কাজ করে আসছিল। তারা ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নামি মার্কেটে এসব ফোন ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এই চক্রের কিছুলোক আছেন যারা বিভিন্ন দোকানে গিয়ে কম টাকায় ফোনগুলো সরবরাহ করতেন। যেসব ক্রেতা সস্তায় ফোন কিনতে চাইতেন দোকানদাররা মূলত তাদের টার্গেট করে এসব মোবাইলফোন গছিয়ে দিতেন। এই চক্রের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়ী জড়িত আছেন কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গ্রেফতারদের রিমান্ডে নিয়ে সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
Advertisement
কি প্রক্রিয়ায় মোবাইলফোনগুলো বিক্রি করা হতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন নামি-দামি ব্রান্ডের এই নকল মোবাইলফোনগুলো বিভিন্ন মার্কেটের সাপ্লায়ারদের কাছে তারা বিক্রি করতেন। আসল মোবাইলফোনের দাম থেকে তারা স্বল্পমূল্যে এসব ফোন সাপ্লাইয়ারদের কাছে বিক্রি করতেন।
এদিকে, ইউনিয়ন লিমিটেডের ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রোলার আসিফ মোহাম্মদ আবিদ বলেন, ব্রান্ড নকল করে এভাবে মোবাইলফোন তৈরির কারণে এসব ব্রান্ড বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে দেশীয় গ্রাহকরা উন্নত প্রযুক্তির মোবাইলফোন ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে নোকিয়া মোবাইলের অনুমোদিত প্রস্তুতকার ও পরিবেশক ইউনিয়ন লিমিটেডের এই কর্মকর্তা বলেন, বাইরের যে স্বনামধন্য ব্রান্ডের মোবাইলফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আছে তারা আমাদের এক্সপোর্টের অনুমতি দিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে। তারা প্রশ্ন তুলছে অনুমতি দিলে তোমাদের এখানে কোয়ালিটি এনশিওর (মান নিশ্চিত) করতে পারবা কি না? তারা বলে, তোমাদের মার্কেটের এসব সমস্যা আগে সমাধান করো।
টিটি/কেএসআর/জেআইএম