বিশ্বব্যাপী বাড়ছে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই আবার হার্ট অ্যাটাকে অকালেই প্রাণ হারাচ্ছেন।
Advertisement
হৃদরোগ এখন শুধু বয়স্কদের রোগ নয়, কমবয়সীদের মধ্যেও এখন দেখা দিচ্ছে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা। অনিয়মিত জীবনধারণ হার্টের বিভিন্ন অসুখের বিভিন্ন কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বর্তমানে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা এতো বাড়ছে যে, এখনই সবাইকে সচেতন হতে হবে। এজন্য নিয়মিত হার্টের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। জেনে রাখুন তেমনই ১০ টেস্ট সম্পর্কে। যার মাধ্যমে আপনার হৃদয় সুস্থ আছে কি না জানতে পারবেন-
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)
Advertisement
এই পরীক্ষায় হার্টের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করা হয়। এটি হৃৎপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ বনাম ভোল্টেজের একটি গ্রাফ তৈরি করে।
এই পরীক্ষায় ইলেক্ট্রোডগুলো ত্বকে স্থাপন করা হয়। ত্বকের সঙ্গে সংযুক্ত সেন্সরগুলো প্রতিবার হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক সংকেতগুলো সনাক্ত করে।
করোনারি এনজিওগ্রাম
করোনারি এনজিওগ্রামে এক্স-রে ইমেজিং হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি দেখতে ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত একটি ব্লকেজ পরীক্ষা করার জন্য করা হয়, যা হৃৎপিণ্ডে রক্তের প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করতে পারে।
Advertisement
ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই)
এটি একটি ইমেজিং প্রযুক্তি, যা বেশিরভাগই শরীরের অ-অস্থি অংশ বা নরম টিস্যু চিত্র করার জন্য করা হয়। এতে একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র হৃৎপিণ্ডকে চিত্রিত করতে ব্যবহৃত হয়। চৌম্বক ক্ষেত্র শরীরে হাইড্রোজেন প্রোটনের লাইন আপ করে।
রেডিও তরঙ্গ তখন প্রোটনকে অবস্থান থেকে ছিটকে দেয়। যখন তারা সঠিক অবস্থানে ফিরে আসে, তারা রেডিও সংকেত পাঠায়। কম্পিউটার এই সিগন্যাল গ্রহণ করে ও সেগুলোকে দেহের ছবিতে রূপান্তর করে। চিকিৎসকরা কার্ডিয়াক রোগ নিরীক্ষণের জন্য এটি ব্যবহার করেন।
ব্যায়াম স্ট্রেস পরীক্ষা
ট্রেডমিল পরীক্ষা নামেও পরিচিত, এই পরীক্ষা আপনার হৃদয় কতটা ভালো কাজ করে তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। একটি ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) আপনার হার্টের বৈদ্যুতিক ছন্দ নিরীক্ষণ করে।
এক্ষেত্রে ডাক্তার আপনার রক্তচাপও পরিমাপ করেন ও বুকে অস্বস্তি বা ক্লান্তির মতো উপসর্গ আছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করে। অস্বাভাবিকতা রক্তচাপ, হৃদস্পন্দনসহ শারীরিক বিভিন্ন লক্ষণ করোনারি আর্টারি ডিজিজের (সিএডি) নির্দেশ দেয়।
করোনারি কম্পিউটেড টমোগ্রাফি অ্যাঞ্জিওগ্রাম (সিসিটিএ)
করোনারি কম্পিউটেড টমোগ্রাফি অ্যাঞ্জিওগ্রাম (সিসিটিএ) হলো একটি থ্রিডি ইমেজিং পরীক্ষার পদ্ধতি, যা করোনারি ধমনী সংকুচিত হয়ে গেছে কি না তা চিহ্নি করে।
এক্ষেত্রে একটি রঞ্জক শরীরে প্রবেশ করানো হয় ও কম্পিউটেড টমোগ্রাফি করা হয়, যা এক্স রশ্মির সংমিশ্রণ ও ছবি তৈরি করতে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
ইকোকার্ডিওগ্রাম
এই আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষায় হার্টের গঠন পরীক্ষা করা হয়। এটি কার্ডিওমায়োপ্যাথি ও ভালভ রোগের মতো হার্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা নির্ণয় করতে পারে। এ ধরনের পরীক্ষায় বিকিরণ ব্যবহার করে না।
নিউক্লিয়ার কার্ডিয়াক স্ট্রেস পরীক্ষা
এই পরীক্ষায় হৃৎপিণ্ডে প্রবাহিত রক্তের চিত্র তৈরি করতে ট্রেসার হিসেবে অল্প পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষাটি করা হয় যখন কেউ বিশ্রামে থাকেন।
কাত পরীক্ষা
এক্ষেত্রে রোগীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার হার্টের রেকর্ডিং নেওয়া হয়। রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হার্টের সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক ও কার্ডিওমায়োপ্যাথি ভেন্ট্রিকুলার ডিসফাংশন শনাক্তের জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
রক্ত পরীক্ষা
হৃদরোগ নির্ণয় করার জন্য সাধারণ রক্ত পরীক্ষাগুলো হলো উচ্চ কোলেস্টেরল, প্লাজমা সিরামাইড, ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড, ট্রোপোনিন টি ও উচ্চ-সংবেদনশীলতা সি-প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিন।
এসব পরীক্ষার গুরুত্ব
একজন ব্যক্তির হৃদয় সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা শনাক্ত করতে ডাক্তাররা এসব পরীক্ষার পরামর্শ দেন। যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে রোগীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। অন্তত ৬ মাস পরপর শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা করা জরুরি। যার মধ্যে হার্টের পরীক্ষা অন্যতম।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/এমএস