রাজনীতি

আওয়ামী লীগের লড়াইটা মনোনয়নে

রাজধানী ঢাকা থেকে ১৮৬ ও জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আজমিরিগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা (হবিগঞ্জ-২)। শহর থেকে বাইপাস হয়ে সরু সড়কের দুপাশ ধরে প্রথমে বানিয়াচং, পরে আজমিরিগঞ্জ। বিশাল হাওর ও জলাধারের কোলঘেঁষা এই জনপদ যেমন শঙ্কার তেমন সম্ভাবনারও। হাওর-বাঁওড়, কৃষি ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর। বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর।

Advertisement

রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এ আসনটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। এখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে যিনিই দাঁড়ান, জয়ের মালা ওঠে তারই গলায়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ তাই একটু বেশি।

এই আসনে এবারও মনোনয়ন চাইবেন টানা তিনবারের এমপি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আব্দুল মজিদ খান, সাবেক এমপি শরীফ উদ্দীন আহমেদের ছেলে তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার ও ব্যবসায়ী বিধান দাস সরকারসহ অনেকে।

স্থানীয়রা বলছেন, এখানে মনোনয়নেই লড়াইটা হয়। মনোনয়ন নিয়ে আসার পর নৌকার প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। মনোনয়নে প্রতিযোগিতা হবে নবীন প্রবীণের। টানা তিনবারের এমপি মজিদ খানের সঙ্গে সাবেক এমপিপুত্র ময়েজ উদিন শরীফের প্রতিযোগিতা হবে।

Advertisement

তারা বলছেন, আবদুল মজিদ খান যেমন ভালো মানুষ, সাবেক এমপি শরীফ সাহেবের মতো তার ছেলে ময়েজ উদ্দিন শরীফও শান্তশিষ্ট ছেলে। সবাইকে মর্যাদা দিয়ে চলেন। যেই আসুক আমাদের সমস্যা নেই। আমরা আছি নৌকার সঙ্গে।

চায়ের দোকানের আড্ডায় হাসতে হাসতে তারা বলেন, নৌকা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই হাওর এলাকায় আমাদের নৌকাই সম্বল। এতেই খাওন (মাছ ধরে) আসে।

এ নিয়ে বানিয়াচং উপজেলা সুবিদপুর ইউনিয়নের রত্না বাজারে চায়ের দোকানে কথা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুরেশ দাশের সঙ্গে। মনোনয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নেতা তো একজনই, মজিদ খান। আর শরীফ সাহেবের ছেলে আছে। এখন কেন্দ্র থেকে যাকে নমিনেশন দেয়।’

ইঞ্জিন মেকানিক সুজিত সরকার বলেন, ‘আমাদের এখানে ব্যক্তি নয়, নৌকা জনপ্রিয়। নৌকা নিয়ে যে আসবে, সেই জিতবে। মজিদ খানও ভদ্রলোক, ময়েজ উদ্দিন শরীফও ভালো। নেত্রী যাকে দেন। এ নিয়ে এখানে রেষারেষি নেই। দলাদলি নেই।

Advertisement

তবে নিজের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে বর্তমান এমপি আবদুল মজিদ খান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমি এমপি। আমার কোনো প্রতিশ্রুতি আমি অপূর্ণ রাখিনি। আমি এবং আমার দল যা বলেছিলাম, করেছি। আমার এলাকাটা ভাটি। বঙ্গবন্ধুকন্যা যেভাবে দেশকে সাজাতে চান, সেভাবে আমি এখনো আমার এলাকাকে সাজাতে পারিনি। অপূরণীয় কাজগুলো করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এটা আমি পূরণ করতে পারবো। জনগণ সহযোগিতা করবে, নেত্রী যদি সহযোগিতা করেন (মনোনয়ন দেন)।

মনোনয়নের বিষয়ে প্রয়াত এমপিপুত্র ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি গত দুবার মনোনয়ন চেয়েছিলাম। নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, কাজ করো। আমি কাজ করে যাচ্ছি। সব সময় এলাকায়ই থাকি। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোসহ সব সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত এমপি। আমি নিজেও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক ছিলাম, এখন জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক। সঙ্গত কারণেই আমি এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।’

আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৪০ নম্বর আসন হবিগঞ্জ-২। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৯৭২। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫২ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ২২০। এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে। স্বাধীনতার পর ’৮৬ ও ’৮৮ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হলেও ’৯১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল এই আসন। ভোটের পরিসংখ্যানেও আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে এগিয়ে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের আব্দুল মজিদ খান ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৮০ ভোট পান। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খিলাফত মজলিশের আব্দুল বাসিত আজাদ পান ৫৯ হাজার ৭২৪ ভোট।

১০ম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের আবদুল মজিদ খান নৌকা প্রতীকে পান ৬৫ হাজার ৩৬২ ভোট। জাতীয় পার্টির শংকর পাল লাঙল প্রতীকে পান ২১ হাজার ৫৫৯ ভোট।

৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মজিদ খান নৌকা প্রতীকে ভোট পান ১ লাখ ২২ হাজার ২৫ এবং বিএনপির ডা. সাখাওয়াত হাছান জীবন ধানের শীষ প্রতীকে ৬৭ হাজার ৫৯ ভোট পান।

৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজমুল হাসান জাহেদ নৌকা প্রতীকে পান ৫০ হাজার ৩৬১ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী নুরুল আমিন চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পান ৫০ হাজার ১৪ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের প্রার্থী শরিফ উদ্দীন আহমেদ নৌকা প্রতীকে ৫১ হাজার ৩৬৯ ভোট পান। বিএনপির জাকারিয়া খান চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পান ৩৪ হাজার ৫৩০ ভোট।

৫ম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১) আওয়ামী লীগের প্রার্থী শরিফ উদ্দীন আহমেদ নৌকা প্রতীকে ৫০ হাজার ৩৯৭ ভোট এবং বিএনপির জাকারিয়া খান চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পান ৪০ হাজার ২৫ ভোট।

এসইউজে/এএসএ/এমএস