আন্তর্জাতিক

ক্রিমিয়ান সেতুতে হামলার বিষয়ে ‘মুখে কুলুপ’ যুক্তরাষ্ট্রের

শক্তিশালী গাড়িবোমা বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছে রাশিয়া ও ক্রিমিয়া দ্বীপের মধ্যে সংযোগকারী একমাত্র সেতুটির একাংশ। আগুন লেগেছিল সেতুর রেল অংশে থাকা তেলবাহী ট্যাংকারে। মস্কোর শক্তি-সামর্থে্যর অন্যতম প্রতীক ক্রিমিয়ান সেতুতে হামলার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের। এ বিষয়ে মুখে যেন কুলুপ এঁটেছে পেন্টাগন।

Advertisement

রাশিয়া বলছে, একটি গাড়িবোমা ব্যবহার করে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এর জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। ইউক্রেনও সরাসরি হামলার দায় স্বীকার করেনি।

তবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অন্যতম উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক ঘটনার পর এক টুইটবার্তায় লিখেছেন, ক্রিমিয়ার সেতু দিয়ে শুরু। অবৈধ সব কিছু ধ্বংস করা হবে। চুরি করা সব জিনিস ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দিতে হবে। রাশিয়ার অধিকৃত সব কিছুই প্রত্যাখ্যান করা হবে।

Crimea, the bridge, the beginning. Everything illegal must be destroyed, everything stolen must be returned to Ukraine, everything occupied by Russia must be expelled. pic.twitter.com/yUiSwOLlDP

Advertisement

— Михайло Подоляк (@Podolyak_M) October 8, 2022

শনিবার (৯ অক্টোবর) রুশ বার্তা সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়েছে, ক্রিমিয়ান সেতুতে হামলার বিষয়ে অবগত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল গ্যারন গার্ন তাসকে বলেছেন, আমরা (ক্রিমিয়ান) সেতুতে বিস্ফোরণের খবরটি দেখেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে সেই পরিস্থিতির বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই।

রাশিয়া ও ক্রিমিয়ার মধ্যে স্থলসংযোগের একমাত্র মাধ্যম এই ক্রিমিয়ান সেতু বা কের্চ প্রণালী সেতু। ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ আধিপত্যের একটি প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। দক্ষিণে রাশিয়ার সামরিক অভিযান টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠিও এটি। ক্রিমিয়ান সেতু অকেজো হয়ে গেলে দ্বীপটিতে পণ্য বা সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠবে।

Consequences of the explosion on the #Crimean bridge. pic.twitter.com/F9DL7LsWBR

Advertisement

— NEXTA (@nexta_tv) October 8, 2022

অবশ্য হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেই সেতুটি আংশিকভাবে চালু করার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। দুইভাগে বিভক্ত সড়ক সেতুর একটি অংশের দুটি খণ্ড ভেঙে পড়লেও বাকি অংশ অক্ষত রয়েছে। আপাতত সেটি দিয়েই যানবাহন চলাচল করছে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেতুর রেল অংশটিও শিগগির চালু করা হবে। এই সময়ের মধ্যে বিকল্প বাহন হিসেবে ফেরি চালুর কথা জানিয়েছে মস্কো।

রাশিয়ার জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি (এনএসি) শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, মস্কো সময় ভোর ৬টা ৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৭ মিনিট) তামান উপদ্বীপের পাশে ক্রিমিয়ান সেতুর সড়ক অংশে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ক্রিমিয়া দ্বীপে যাওয়ার পথে ট্রেনের সাতটি জ্বালানি ট্যাংকে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণ ও আগুনে সড়ক সেতুর একটি অংশের দুটি খণ্ড ভেঙে গেছে অন্য সড়কটি অক্ষত রয়েছে।

The security camera footage of the explosion on the Crimean Bridge. pic.twitter.com/mRFLYMS9m0

— Oleksiy Sorokin (@mrsorokaa) October 8, 2022

হামলার পর জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় একটি সরকারি প্যানেল তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পাশাপাশি, সেতুর নিরাপত্তা বাড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

কের্চ প্রণালীর ওপর নির্মিত ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্রিমিয়ান সেতু ইউরোপের দীর্ঘতম। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা একাধিকবার এই সেতুতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিলেন।

ক্রিমিয়া দখলের মাত্র চার বছর পরে ২০১৮ সালের মে মাসে ক্রিমিয়ান সেতুতে গাড়ি চলাচলের জন্য প্রথম অংশ খুলে দেয় রাশিয়া। পরের বছর চালু হয় রেল অংশটি। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে মোট ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার।

চলতি বছর রুশ বাহিনী মারিউপোলসহ আজভ সাগরের উত্তর প্রান্তে আরও বেশি ইউক্রেনীয় অঞ্চল দখল করার আগপর্যন্ত এটিই ছিল ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার স্থলসংযোগের একমাত্র মাধ্যম।

সূত্র: বিবিসি, তাস, এপিকেএএ/