নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-১ আসন। আসনটিতে শক্তিশালী অবস্থান গড়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী। বর্তমান এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ তারই সন্তান। এ আসনটিতে স্বাধীনতার পর আটবারের নির্বাচনে পাঁচবারই জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। মাঝে দুবার জাতীয় পার্টি ও একবার জিতেছে জাসদ। বিএনপি একবার জয় পেয়েছে উপ-নির্বাচনে।
Advertisement
ভোটের হিসাবে এ আসনে আওয়ামী লীগের পাল্লা সব সময় ভারী। তবে এবার ভোটাররা বলছেন, দেওয়ান ফরিদ গাজীর মৃত্যুর পর এই আসনে আওয়ামী লীগের কেউ সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান প্রার্থীদের চেয়ে এখানে বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাতের জনপ্রিয়তা বেশি। জোটগত নির্বাচন করলে বিএনপির পাল্লা ভারী। কারণ বিএনপি জোটের প্রার্থী রেজা কিবরিয়াও বেশ জনপ্রিয়। তবে বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদ আলাদা নির্বাচন করলে ফলাফল আওয়ামী লীগের দিকে ঝোঁকার সম্ভাবনাই বেশি।
গত ৫ সেপ্টেম্বর আসনটির মিরপুর ইউনিয়নের মিরপুর বাজারে আলাপচারিতায় এমন তথ্যই দিয়েছেন স্থানীয়রা।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষেই কাজ করবেন তারা। এ ঐক্যবদ্ধতাই তাদের শাক্তি। বিএনপির প্রধান বাধা জেলায় বিভাজন। বিভাজন যদি নিরসন না হয় তবে ফলাফল তাদের পক্ষে আসার সম্ভাবনা কম।
Advertisement
স্থানীয় বাজারে নুরুল আমিন নামে এক প্রবাসী জানান, এখন হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থক বেশি। বিএনপিও আছে। আর বাকি অন্য দলগুলো অতটা দৃশ্যমান নয়। তবে এখানে শেখ সুজাত জনপ্রিয় বেশি এখন। আগে দেওয়ান ফরিদ গাজী ছিলেন জনপ্রিয়। ওনার ছেলে বা আওয়ামী লীগের অন্য কেউ সেই জনপ্রিয়তা পাননি।
দোকানি আবদুল জব্বার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শেখ সুজাত পাস করবেন। সুজাত ফ্রেশ মানুষ। সবার সঙ্গে বোঝাপড়া আছে। জামায়াতেরও দাপট আছে এখানে, সেটাও কাজে লাগবে তাদের।
জোটগত ভোট হলে এখানে বিএনপি পাস করবে বলেও মনে করেন এই দোকানি। তিনি বলেন, জোটের প্রার্থী তো গতবার ছিলেন রেজা কিবরিয়া। তারও এখানে জনপ্রিয়তা আছে। বাবার (শাহ এম এস কিবরিয়া) মতো ব্যক্তিত্ব ও সততার কারণে তিনিও এলাকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য।
বিষয়টি নিয়ে আমির হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, রেজা কিবরিয়া তো তার বাপকে পুঁজি করে রাজনীতি করেন না। বাবা ছিলেন একদিকে, তিনি আরেকদিকে। তবে দুজনই সৎ এবং স্বচ্ছ। এজন্যও মানুষ তাদের পছন্দ করে। তিনি ধীরস্থিরভাবে সত্য কথাটাই বলেন।
Advertisement
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজী), জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এবং বহুবল উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদির।
তবে এখানে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার মানসিকতা নেই কারও। প্রতীক দিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, না হয় প্রতীকের পক্ষে কাজ করবেন- এমনটাই জানিয়েছেন তারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন, হবিগঞ্জ-১ আসনে গত তিনবারই মনোনয়ন চেয়ে আসছি। আমি দলকে সংগঠিত করতে কাজ করছি। প্রত্যেকটি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। আমি মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন আমি আছি, না দিলেও আমি আছি।
সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, আমি জনগণের প্রার্থী। জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন আমাকে দায়িত্ব (সংরক্ষিত এমপি করে) দিয়েছেন তখন আমি জনগণ যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে তাদের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। সেখান থেকে মানুষের একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে যে, নির্বাচিত হলে আমি আরও অনেক বেশি কাজ করতে পারবো। সবকিছু বিবেচনায় নবীগঞ্জ বাহুবলের যে কোনো শক্তিশালী প্রার্থীকে মোকাবিলা করার সামর্থ্য আমি রাখি।
বিএনপির শেখ সুজাত ও গণঅধিকার পরিষদের প্রধান রেজা কিবরিয়ারও জনপ্রিয়তা আছে এখানে। স্থানীয় নানা সমীকরণে জনগণ তাদেরও পছন্দ করে।
এসব বিষয়ে শেখ সুজাত মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এই আসনে আমিই একমাত্র বিএনপির মনোননপ্রত্যাশী। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।
জেলা বিএনপির যে ত্রিমুখী বিভাজন জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। বলেন, আমি জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের খুব কাছেই আছি। দল বাদেও মানুষ আমাকে পছন্দ করে ইনশাল্লাহ।
নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের ২৩৯ আসন হবিগঞ্জ-১। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭৭। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৯ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮৪ হাজার ১২৮।
ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের গাজী মো. শাহনওয়াজ মিলাদ ১ লাখ ৬০ হাজার ১৬৭ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি জোটের রেজা কিবরিয়া ৮৫ হাজার ৮৮৫ ভোট পান।
দশম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) মহাজোটের প্রার্থী আবদুর মোনেম চৌধুরী লাঙল প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।
৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৮০ ভোট পান। বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া পান ৭৯ হাজার ৪৮৮ ভোট।
৮ম সংসদ নির্বাচনে (২০০১) আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী ৭৪ হাজার ৬৯৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। বিএনপির শেখ সুজাত মিয়া পান ৬৬ হাজার ১৩৭ ভোট।
৭ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী ৫২ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। জাতীয় পার্টির খলিলুর রহমান চৌধুরী পান ৪৪ হাজার ১১৩ ভোট।
৫ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯১) জাতীয় পার্টির খলিলুর রহমান চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকে ৪১ হাজার ৯৫৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজী পান ৩৮ হাজার ৯২৭ ভোট।
এসইউজে/এএসএ/এমএস